
আমাদের দেশে তথা পৃথিবীর সব দেশে গাজর খুবই জনপ্রিয় সবজি। সারা বছর গাজর বাজারে পাওয়া গেলেও শীতকালে এর উৎপাদন বেশী হয়। তাই গাজরকে শীতকালীন সবজি বলা যেতে পারে। গাজর ভিটামিন – A সমৃদ্ধ পুষ্টিকর সবজি।
গাজর চাষে জলবায়ু ও মাটি
গাজর প্রধানত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফসল। এটি শীতকালের আবহাওয়ায় ভালো জন্মায়। তবে সারাবছর গাজর কম-বেশী বাজারে পাওয়া যায়। গাজর চাষ করার ক্ষেত্রে শুকনো পরিবেশ প্রয়োজন। এর জন্যে জল নিকাশি সুবিধাযুক্ত মাটির গভীরেও গাজর চাষ করার আদর্শ জায়গা। উঁচু রোদযুক্ত জমি গাজর চাষের জন্য উত্তম। সাধারণত গভীর দোআঁশ মাটি গাজর চাষের জন্যে সবচেয়ে ভালো। এটি সাধারণত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। গাজরের বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ বপনের আগে জমি ভালোভাবে কয়েকবার ২০-২৫ সেমি. গভীর করে চাষ দিতে হবে। জমিতে ঢেলা থাকলে তা গুঁড়ো করে দিতে হবে। জমিতে সার তৈরী করার সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬-৮ ইঞ্চি ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫-৬ ইঞ্চি দিতে হবে। এই ফসল যাতে সহজে বৃদ্ধি পেতে পারে তার জন্য মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
গাজরে বীজ অতি ক্ষুদ্র বলে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে মই দিয়ে মাটি বিশেষভাবে মিহি করে জমি তৈরী করতে হবে। গাজরের বীজ অক্টোবরের শেষ ভাগ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে। বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে নিতে হবে। বীজ খুবই ছোট হয় তায় ছাই বা মাটিতে মিশিয়ে বপন করা ভালো।
গাজর চাষে সার প্রয়োগ – গাজর চাষের জন্য জৈব সার খুবই উপযোগী। এছাড়া জমিতে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমপি সার জমির অবস্থা বুঝে পরিমাণ মতো দিতে হবে। গাজর চাষের জন্যে প্রতি শতক জমির জন্যে ৪০ কেজি. গোবর সার, ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৯০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ীর আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরী করা সম্ভব।
গাজর চাষে সার প্রয়োগ – সম্পূর্ণ গোবর ও টিএসপি এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও এমপি সার জমি তৈরীর সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে চারা গজানোর ১০-১২ দিন ও ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
গাজর চাষে প্রয়োজনীয় সেচ ও জল নিষ্কাশন – বীজ বপনের পর গাজরের ক্ষেতে একটা হালকা সেচ দিতে হবে। মাটির অবস্থা বুঝে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। গাজর চাষের জমিতে জল জমলে ফসলের ক্ষতি হয়। তাই জল জমলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে এমনভাবে সেচ হবে যেন মাটি বেশী শুকিয়ে না যায় এবং জমি বেশী ভেজা না থাকে। চারা গজানোর ৮০-৯০ দিনের মধ্যে গাজর সবজি হিসাবে খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
গাজর চাষে পরিচর্যা – মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে জমির মাটি আলগা করে দিতে হবে। জমিতে আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। ঘন চারা গাছগুলো নিড়ানি দিয়ে গাছ পাতলা করে দিতে হবে। জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
গাজর চাষে পোকা দমন – গাজর গাছের জন্যে জাব পোকা মারাত্মক ক্ষতিকর। সুতরাং জাব পোকা থেকে গাছকে রক্ষা করতে হবে। এর জন্যে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
গাজরের জাত – আমাদের দেশে সাধারণত গাজরের যে জাত পাওয়া যায় তা হচ্ছে রয়েল ক্রস, ফোরেল ক্রস, কিন্কো স্যাল্টিন রয়েল, অরেঞ্জ জিনো ইত্যাদি। এই জাতগুলো বাইরে থেকে এনে আমাদের ভারতে চাষ করা হয়। এছাড়াও পুষা, কেশর, কুরোদা ৩৫, নিউ কোয়াবজা, সানটিনি ইয়েলো রকেট ইত্যাদি জাতগুলো কৃষকদের নিকট জনপ্রিয়। এইসব জাতের মধ্যে পুষা, কেশর আমাদের দেশের জলবায়ুতে বীজ উৎপাদনে সক্ষম।
গাজরের উপকারিতা – শীতকালে গাজর উৎপাদন বেশী হয়। গাজর ভিটামিন – A সমৃদ্ধ পুষ্টিকর সবজি। এতে অন্যান্য ভিটামিনও থাকে এবং তার সাথে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, শ্বেতসার ও ক্যারোটিন ইত্যাদি থাকে। গাজরকে আমরা তরকারি ও স্যালাড হিসাবে খেয়ে থাকি।
- পুলক কর