গ্রীণ হাউসে জারবেরা চাষের জন্য খুব সতর্কতার প্রয়োজন হয়। যে কোনও সময় যে কোনও সমস্যা হতে পারে এবং তা বৃহৎ রূপ ধারণ করতে পারে। কিছু সময় সমস্যা বাইরে থেকে খুঁজে পাওয়া যায় না, কিন্তু উদ্ভিদ অভ্যন্তরীণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলস্বরূপ নিকৃষ্ট মানের ফুলের উত্পাদন ঘটে।
যখন গাছগুলির পুরানো পাতা হলুদ বর্ণের দেখায় তখন বুঝতে হবে যে নাইট্রোজেনের ঘাটতি হয়েছে, তবে এই ধরণের লক্ষণ নতুন পাতাতেও (চূড়ান্ত হলুদ হওয়া) দেখা যায়, (শিরা সবুজ থাকে) ম্যাঙ্গানিজ এবং ক্যালসিয়াম ঘাটতির কারণে এটি হয়। বাদামী বর্ণের বর্ণহীনতা জারবেরা উদ্ভিদের অন্যতম সমস্যা, যা ফসফরাস ঘাটতির কারণে ঘটে। পুরানো পাতাগুলিতে প্রান্তে নেক্রোসিস, অন্তর্বর্তী অংশে ক্লোরোসিস এবং নতুন পাতাগুলিতে ক্লোরোসিস –এর সংক্রমণ হয়,যথাক্রমে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং কপার-এর ঘাটতির কারণে। খুব কম ক্ষেত্রে দেখা যায়, কচি পাতা কালো হয়ে যাওয়ার প্রবণতা, এটি বোরনের ঘাটতির জন্যে ঘটে থাকে। সকল ধরণের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস জারবেরা ফুল উত্পাদনের মানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং যথাযথ পরিমাণে তাদের প্রয়োগের দরকার। পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গগুলির মধ্যে, রেড মাইটস (এরা পাতার নীচের তলদেশ থেকে উদ্ভিদের রস শোষণ করে, ফলস্বরূপ তলদেশে বাদামী বর্ণের দাগ দেখা যায় এবং প্রান্ত শুকিয়ে যায়) এবং সাইক্লামাইন মাইট (এর প্রভাবে পাতাগুলি পুরানো পাতার মতো দেখতে লাগে, কুঞ্চিত হয়ে ছোট হয়ে যায়। কচি পাতার অসম গঠন লক্ষ্য করা যায়, ফুলগুলি বিকৃত হয়ে যায়, পাপড়ি ঝরে পরে, আভ্যন্তরীণ অংশ সঙ্কুচিত এবং বর্ণহীন হয়ে পড়ে) এই উদ্ভিদগুলির জন্য ক্ষতিকারক। সারা বছর ধরে যে কোন সময় এই পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গগুলির আক্রমণ ঘটতে পারে, তাই উদ্ভিদগুলির দিকে সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
সতর্কতা – এগুলির মধ্যে যে কোন একটি রাসায়নিক (ডিকোফল ২.৫ মিলি. / স্পাইরোমিসিফেন ১ মিলি. / ডায়াফেন্টিউরন ১ গ্রাম) পাক্ষিক ব্যবধানে পর্যায়ক্রমে স্প্রে করতে হবে। এই দুটি কীটপতঙ্গ ছাড়াও অন্য পোকামাকড় যেমন, লিফ মাইনর (নিয়ন্ত্রণ: কার্টাপ হাইড্রোক্লোরাইড ১ গ্রাম), থ্রিপস (নিয়ন্ত্রণ: ফিপ্রোনিল ১.৫ মিলি.), হোয়াইট ফ্লাই (ইমিডাক্লোপ্রিড ০.৫ মিলি.) এবং ক্যাটারপিলার (নিয়ন্ত্রণ: কলপাইরিফস ১ গ্রাম / উদ্ভিদ) উদ্ভিদকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপরে উল্লিখিত পরিমাণে প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
জারবেরা উদ্ভিদগুলিতে অনেক রোগের সংক্রমণ হতে পারে। যেমন, উপরিভাগ পচে যাওয়া (সতেজতার ক্ষয়, নিয়ন্ত্রণ: কপার অক্সি ক্লোরাইড ১.৫ গ্রাম), মূল পচা (প্রাথমিকভাবে ছোট পাতাগুলি অপসারণ করে অবশেষে গাছ রোপণ, নিয়ন্ত্রণ: কার্বেনডাজিম ২ গ্রাম), ফিউসারিয়াম (উপরি অংশ কালো হয়ে যাওয়া এবং উদ্ভিদের বাদামী বর্ণহীনতা প্রদর্শিত হবে, নিয়ন্ত্রণ: টপসিন -এম ১.৫ গ্রাম), পাতায় দাগ (কালো বৃত্তাকার দাগ পাতায় প্রদর্শিত হবে, নিয়ন্ত্রণ: কার্বেনডাজিম ২ গ্রাম), পাতায় ছত্রাক রোগ (পাতায় সাদা পাউডারের মতো গুঁড়ো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণ: ডাইনোক্যাপ ০.৪ মিলি), বোট্রিটিস (ফুলের পাপড়িগুলিতে ধূসর বর্ণের দাগ, নিয়ন্ত্রণ: ডিথেন এম- ৪৫ ০.৫গ্রাম), ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট (পাতায় তৈলাক্ত ধরণের হলুদ হয়ে যাওয়া দাগ, নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রেপটোমাইসিন ৫০ মি.গ্রা.)। প্রয়োজন হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাসায়নিক স্প্রে করতে হবে, তবে স্প্রে করার সময় কোনও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস বা ছত্রাকনাশক মিশ্রিত করা হয় না । উপরে উল্লিখিত পরিমাণগুলি প্রতি লিটার জলে দ্রবীভূত করে প্রয়োগ করতে হবে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
তথ্যসূত্র - ড. তাপস কুমার চৌধুরী
Share your comments