আজকের দিনে খাদ্যের গুণমান ও স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের সচেতনতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জৈব চাষের চাহিদা। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলকে বলা হয় জৈব ফসল। পশ্চিমবঙ্গেও এই ধারায় এসেছে নতুন গতি। তবে এখনও এই খাতে রয়েছে নানা বাধা ও চ্যালেঞ্জ।
কী এই জৈব চাষ?
জৈব চাষ হলো এমন একটি চাষপদ্ধতি যেখানে রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং জিএম বীজের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক সার (কম্পোস্ট, গোবর, ভার্মিকম্পোস্ট), জৈব কীটনাশক ও স্থানীয় জাতের বীজ। এতে জমির স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, ফসল হয় বিষমুক্ত, ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।
পশ্চিমবঙ্গে জৈব চাষের উত্থান
গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গের বহু কৃষক বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে জৈব চাষে ঝুঁকেছেন।
কারণ:
- মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে
- সরকার কিছু প্রকল্পে প্রাথমিক অনুদান দিচ্ছে
- "সুফল বাংলা", "জৈব হাট" ইত্যাদির মাধ্যমে জৈব পণ্যের প্রচার
- ফসলের দাম সাধারণের তুলনায় বেশি
সম্ভাবনা কী কী?
- বাজারে উচ্চ চাহিদা
জৈব পণ্যের দাম সাধারণ ফসলের তুলনায় ৩০-৫০% বেশি হওয়ায় কৃষকের আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
- স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের পছন্দ
শহরাঞ্চলে জৈব চাল, ডাল, শাকসবজি ও ফলের বিক্রি দ্রুত বাড়ছে।
- পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই কৃষি
জৈব চাষ জমির উর্বরতা ধরে রাখে, জলদূষণ কমায়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সহায়ক।
- কৃষকদের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ
জৈব পণ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, ব্র্যান্ডিং করে সরাসরি বাজারজাত করা সম্ভব।
সমাধানের পথ
✅ সরকারি প্রশিক্ষণ শিবির ও মাঠ পর্যায়ে সহায়তা বৃদ্ধি
✅ জৈব মানচিহ্ন ও সার্টিফিকেশন পদ্ধতি সহজ করা
✅ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জৈব কৃষকের যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা
✅ ছোট কৃষকদের জন্য কো-অপারেটিভ মডেল বা কৃষক প্রযোজক সংস্থা (FPO)
✅ স্কুল ও কলেজ স্তরে সচেতনতা অভিযান
পশ্চিমবঙ্গে জৈব চাষ এখন শুধুই একটি আন্দোলন নয়, এটি একটি স্বাস্থ্য-সচেতন ও পরিবেশবান্ধব কৃষির ভবিষ্যৎ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
"জমি বাঁচলে কৃষক বাঁচবে, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে" – আর সেই জন্যই দরকার জৈব চাষের প্রসার।