গ্রাম-বাংলায় কয়টা নারকেল গাছে সার-জল পড়ে? তবুও নির্লজ্জ বেয়ারার মত ফুল-ফল দিয়ে যায়। পরিমাণ মত পুষ্টির যোগান দিলে যে ফলন বাড়তে তাতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, কচি ফল বা মুচি ঝরে যাওয়া সমস্যারও সমাধান হবে; সমাধান হবে দেরীতে ফুল-ফল আসার সমস্যা; গাছের পাতা ধনুকের মত বেঁকে যাওয়ার সমস্যা। নারকেল গাছে বেশি সংখ্যায় স্ত্রী ফুল আনতে হলে ঠিকমতো নাইট্রোজেন সার দিতে হবে আর শাঁস ও তেলের পরিমাণ বাড়াতে পটাশ সারের মাত্রা সঠিক হওয়া দরকার। মাটিতে গৌণ-খাদ্য যেমন জিংক বা দস্তা, বোরণ বা সোহাগা এবং ম্যাগনেসিয়ামও ঠিকমতো থাকতে হবে বা মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈবসার হিসাবে কম্পোস্ট, খামার-পচা সার, সবুজপাতা সার, খোল দেওয়া যেতে পারে। ৪ বছর বা ততোধিক বয়স্ক প্রতিটি গাছে প্রতি বছর ১০০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং ২০০০ গ্রাম মিউরিয়েট অব পটাশ দিতে হবে। তিন বছরের গাছে পূর্ণমাত্রার সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং ২ বছরের গাছে এক তৃতীয়াংশ সার প্রয়োগ করতে হয়। মোট সারকে দু'দফায় ভাগ করে দেওয়া হয় - প্রথম দফায় বর্ষার শুরুতে এবং দ্বিতীয় দফায় বর্ষার শেষে।
যেহেতু নারকেল গাছের গোড়ার চারপাশের ২ মিটার এলাকার মাঝেই শতকরা ৮০ ভাগ শিকড় থাকে, তাই এর মধ্যেই খাবার দিতে হবে। গাছের গোড়ার কিছুটা ছেড়ে গাছকে ডাইনে বা বামে রেখে কোদালে মাটির চাপড়া তুলে সারের মিশ্রণের খানিকটা দিয়ে ওই মাটি দিয়েই চেপে দিলে ভালো। গাছকে সামনে বা পিছনে রেখে কোদাল চালালে শিকড় কেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে বলে তা করা থেকে বিরত হন নারকেল চাষী; যদিও দেখা গেছে উপরের ৩০ সেন্টিমিটারের মধ্যে কোনো ভাল শিকড় থাকে না। যাইহোক 'বিড়াল-পায়খানা' অনুসরণে সার দিলে (এক কোদাল মাটি তুলে সার দিয়ে ওই মাটিই চাপা দেওয়া) ভালো ফল পাওয়া যায় বলে দেখা গেছে। জমিতে সার দেবার পর হাল্কা সেচ দিতে হবে।
- জয়তী দে