সাম্প্রতিক অতীতে, খামার ঋণ ক্ষমা সম্পর্কে অনেক লেখা হয়েছে। রিপোর্টে জানা গেছে চাষীদের ঋণ ক্ষমা করার এই পন্থা গুলি আর যাইহোক কিন্তু কোনোরকম ভাবেই অর্থনৈতিক ভাবে প্রভাবশীল নয়। কিন্তু বর্তমানের রাজনৈতিক হাওয়ার দিক-পরিবর্তন যদি কোন ইঙ্গিত হয়, তাহলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ হতেই পারে।
যদি খামার ঋণ ক্ষমা না হয়, তাহলে কৃষি-খামারের আয় বৃদ্ধি করতে আর কি কি করা যেতে পারে? ঋণ ছাড়ের পরে এই বছরে ছোট কৃষকদের তিনটি ব্যাপারে অনেক ক্ষতি হয়েছে - ফর্মাল ঋণের কম সুযোগ, ফর্মাল লোনের খরচ বৃদ্ধির ফলে কৃষি খরচ বৃদ্ধি, এবং পতিত কৃষি উৎপাদনশীলতা। আয় বন্টনের উপর এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে - ভারতে 83% কৃষক সীমিত বা ক্ষুদ্র, 2 হেক্টরের থেকেও কম জমি। যদিও এই গোষ্ঠীগুলি ঋণগ্রহীতার জন্য যোগ্যতা অর্জন করে, তবে তারা এই সুবিধাটি পায় না কারণ এই কৃষকরা ফর্মালভাবে ব্যাঙ্কের ঋণগুলি ব্যবহার করে না।
এই মাঝারি কৃষকদের বার্ষিক আয় প্রায় ২90 ডলার, যা ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে কেবল দুই মাসের ন্যূনতম মজুরি। তাহলে, কীভাবে হস্তক্ষেপ করলে ভারতবর্ষে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পেতে পারে? সবশেষে, বর্তমান সরকার ২0২২-2023 সালের মধ্যে কৃষি আয় দ্বিগুণ করতে চায়, 2015-2016 সালের ওপর ভিত্তি করে।
২015-2016-এর সময়, প্রতি খামারপিছু আয় ছিল 1,693 ডলার (বর্তমান দামে)। ২০২২-২০২৩ সালের মধ্যে কৃষি আয় দ্বিগুণ করতে, কৃষি উৎপাদন বছরে 10.4% হারে বৃদ্ধি দরকার। যাইহোক, বর্তমানে কৃষি আউটপুট বছরে প্রায় 3% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গতিতে, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে ২5 বছর সময় লাগবে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে: -
কোল্ড স্টোরেজ এবং গুদামঘর নির্মাণ: ভারত কৃষিক্ষেত্রে বৃহত্তম প্রযোজকগুলির মধ্যে অন্যতম কিন্তু এখনো ভারতের ঠান্ডা সংগ্রহস্থলের অভাবের কারণে ভারতে প্রায় ২0% নতুন উৎপাদিত পণ্য অপচয় হয়। ক্ষয়প্রাপ্ত পণ্য যেমন - ফল, শাকসবজি এবং দুধ যেগুলির বাজারের দাম অন্যান্য বাজারি শস্যের চেয়ে অনেক বেশী সেগুলির উৎপাদন করলে নিঃসন্দেহে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি হবে। বেশীরভাগ ছোট কৃষক ক্রমবর্ধমান পতনশীল ফসল উৎপাদনের ঝুঁকি নেয় না। স্টোরেজ সুবিধাগুলির অভাবের কারণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা কদাচিৎ উদ্যোগ নেয় উচ্চ মূল্যবান ফসল উৎপাদন করার। মাত্র 22.2% সীমিত চাষি (এক হেক্টরেরও কম জমি) এবং ২3.6% ছোট কৃষক (এক ও দুই হেক্টর জমির মধ্যে) উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপন্ন করে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকলে অনেক বেশী লাভ করতে পারে, এতে কৃষকের আর্থিক সমস্যা 3-7% কম হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে অভ্যন্তরীণ বাজারকে যুক্ত করতে হবে: বর্তমান সরকার কৃষি খাতে 17.04 বিলিয়ন ডলার (২009 থেকে ২014 সালের মধ্যে) থেকে 30 বিলিয়ন ডলার (2014 এবং ২019 সালের মধ্যে) অব্দি বরাদ্দ বাজেট বাড়িয়েছে। এতে খাদ্য ও পশু উত্পাদন বৃদ্ধি ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ডাল উত্পাদন গড়ে বছরে 10.5% বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ, দুধ ও ডিম উৎপাদন যথাক্রমে 26%, 24%, এবং 25% বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ভারত পশুপালনের রপ্তানি অনুমোদন করেছে, তবে সাধারণত কৃষিখাত যেমন চাল, গম, এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের সামগ্রীগুলি কেবল সীমাবদ্ধভাবে অনুমোদিত হয়েছে। কৃষি পণ্যগুলির ক্ষেত্রে আসিয়ান স্তরের তুলনায় ভারতে কৃষিপণ্যের আমদানি হার বাড়িয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, কৃষি সামগ্রীগুলি বাণিজ্য ঘরোয়া মূল্যের প্রতিবন্ধকতা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ভারতীয় কৃষকদের জীবিকা নিশ্চিত করতে এখনো সীমিত আছে। যাইহোক, একটি সীমিত কৃষি বাজার এবং পর্যাপ্ত স্টোরেজ সুবিধা অভাবের ফলে ক্রমাগত ফসল উৎপাদনের অপচয় ঘটে। 2017-2018 এর মধ্যে ভারতে খাদ্য শস্য উৎপাদন 280 মিলিয়ন টন হয়েছে যা সর্বকালের সর্বোচ্চ, এখন উদার বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করার এবং রপ্তানি সহজতর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন করার প্রয়োজন।
সাপ্লাইের হস্তক্ষেপ: গ্রামের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও খালের নির্মাণ প্রভৃতি গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নতি এতে অনেক সহায়তা করবে। ব্যাপার হল, এখানে ছোট আকারের জমির উপর সেচ নির্মাণ 40% এর চেয়েও কম অর্থাৎ অধিক বৃষ্টিপাতের বছরগুলিতে ফসলের ক্ষতি। একইভাবে, এপিএমসি আইনের একটি সংস্কার প্রয়োজন। আলুতে বাণিজ্য জড়িত একটি আলু সরবরাহ পরীক্ষার গবেষণায় জানা গেছে যে মধ্যস্থতাকারীরা 70% পর্যন্ত একটি কমিশন চার্জ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২017 সালের জুন মাসে দিল্লির আজাদপুর ও গাজীপুর বাজারে, মাঝারি আলু ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছিল ৫-৭ টাকা প্রতি কেজি হারে। এই হার কৃষকদের যদি দেওয়া হত তবে তারা 50 কিলোগ্রাম বস্তার জন্য ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে উপলব্ধি করা উচিত। তবে, প্রকৃতপক্ষে, কৃষকদের সর্বোচ্চ দাম প্রতি 50 কেজি বস্তার জন্য মাত্র ৯৮ টাকা ছিল। প্রায়শই, কৃষকরা পণ্যগুলির প্রকৃত বাজার মূল্যগুলি জানেন না এবং যারা মধ্যস্থতাকারী তারা বেশিরভাগ লাভকে বন্ধ করে দেয়। এপিএমসি আইনের সংস্কারের অভাবে ছোট কৃষকরা সরাসরি সুপারমার্কেট, রপ্তানীকারকদের এবং কৃষি-প্রসেসরদের কাছে বিক্রি করতে বাধা পায়।
তথ্যসূত্র - ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস
- অভিষেক চক্রবর্তী(abhishek@krishijagran.com)