জৈব কৃষির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কল্যাণী শহর কেন্দ্রিক গ্রামেই তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান। গ্রামীণ শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা গ্রামেই তাঁদের নিজস্ব জমিতে নানা নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন। সাহায্য নিচ্ছেন ইন্টারনেটের। ভালো পয়সার মুখ দেখে পরিবারে ফিরছে স্বচ্ছলতা।
নদীয়া জেলার চাকদহ ব্লকের প্রত্যন্ত নতুন গোয়ারা গ্রামের শিক্ষিত ছেলে জাহিরুল মণ্ডল জানান, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে অনার্স স্নাতক হওয়ার পর তিনি আর চাকরির সন্ধান করেননি। শুরু করেন জৈব পদ্ধতিতে বিভিন্ন সব্জির চাষ। ফেলে দেওয়া নারকেলের শুকনো কুড়ো দিয়ে বীজতলা তৈরি করে চলেছেন। ছোট ছোট ১০০-২০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক গ্লাসের অর্ধেকটা নারকেল কুড়ো দিয়ে তার পর বসিয়ে দিচ্ছেন লাউ, চাল কুমড়ো, মিষ্টি কুমড়ো, শসার শোধন করা বীজ। তার উপর আবার নারকেল কুড়ো দেওয়া হচ্ছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে প্লাস্টিকের গ্লাসে ছোট ছোট চারাগাছ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এর পর জল স্প্রে করে প্রতিদিন রাতে একবার করে জল স্প্রে করছেন। এই সমস্ত ফসলের ছোট চারা তৈরি করতে আগে প্রচুর বীজ নষ্ট হত। মাঠে ছড়ালে গরম, বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবই শেষ হয়ে সামান্যই বাঁচত। এই অতি সহজ পদ্ধতিতে বীজ একেবারেই নষ্ট হচ্ছে না। আবার গোটা বীজতলা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। সাতদিনেই বীজতলা বড় হয়ে যাচ্ছে।
চাকদহ ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তা ডঃ স্বপনকুমার সিংহ জানান, জাহিরুল যেভাবে বীজতলা তৈরি করছেন, সবটাই বিজ্ঞানসম্মত। লাউ, চাল কুমড়ো, মিষ্টি কুমড়োর বীজের ভিতর স্যাঁতসেঁতে। আবার নারকেলের কুড়োতে বাতাস ভালোই চলাচল করতে পারে। ফলে সহজেই চারা বের হয়। জাহিরুল মাঠে ভাটি তৈরি করে ১৪০ মাইক্রন প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। এবার প্লাস্টিকে ফুটো করে প্লাস্টিকের গ্লাস কেটে বীজতলা বের করে নারকেলের কুড়ো সমেত বসিয়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে হাল্কা সেচ দিচ্ছেন। এক মাসের মধ্যে গাছ বড় হয়ে মাচায় উঠে যাচ্ছে। জাহিরুলের কথায়, প্লাস্টিকে ঢাকা থাকলে জৈব উপাদানগুলি বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আবার রোদের তাপেও প্লাস্টিকের নীচের অংশ ঠাণ্ডা থাকছে। ফলে চারাগাছ দ্রুত বেড়ে উঠছে। জল নিকাশির জন্য প্রতিটি ভাটির পাশে নালা থাকছে।
- Sushmita Kundu