এন.পি.কে সার হল একটি খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ মিশ্রণ যা সাধারণত উদ্ভিদের তিনটি প্রাথমিক প্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্যের সরবরাহ করে থাকে যার সাহায্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে থাকে। নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশকে সংক্ষেপে বলা হয় এন.পি.কে। এই তিনটি মূখ্য উপাদান উদ্ভিদের শ্রীবৃদ্ধির জন্য দায়ী।
জার্মান বিজ্ঞানী জাস্টাস ভন্ লিবিগ এই তথ্য অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে পেশ করেছেন যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, এবং পটাশিয়ামের নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকলে গাছের শ্রীবৃদ্ধির সম্বন্ধে নিশ্চিত করা যায়। ১৮০০ সালের এই তথ্যে এই তিনটি উপাদান বাদে আর কোন উপাদানের কথা বলা হয় নি, যেগুলি অবশ্যই উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, যেমন- হাইড্রোজেন, সালফার, অক্সিজেন, কার্বন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি, অথবা এই তত্ত্বে বলাও নেই, যে মাটিতে উপস্থিত অণুজীবেরা কীভাবে গাছের উন্নয়নের জন্য দায়ি থাকে, এবং কীভাবে গাছের মধ্যে কীটনাশক ক্ষমতা ও রোগের উপশম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রাসায়নিক সার বা জৈব সার যাই হোক না কেন, প্যাকেটের উপর সেই তিনটি সারের আদ্যাক্ষরই বড় বড় করে লেখা থাকে। এই তিনটি অক্ষর আসলে তিনটি প্রধান উপাদানকে নির্দেশ করে, তা হলো নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ। সারা বিশ্বে কৃষিতে এই তিনটি প্রধান উপাদানকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় বিশ্বের খাদ্যসমস্যা মেটানোর জন্য ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন করবার জন্য।
বাজারে যে সব সার পাওয়া যায় তাতে আমরা দেখি এন.পি.কে লেখা লেবেল লাগানো রয়েছে। তারা আসলে এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে এই সারগুলিতে প্রধানত এই উপাদানগুলিই থাকে, এর সাথে অবশ্য অনেকরকম আর কিছু উপাদান থাকে যেগুলি অবশ্য খুব কম গুরুত্বপূর্ন হয়ে থাকে। এই সমস্ত লেবেলে এই সব উপাদানগুলির একটি নির্দিষ্ট অনুপাত লেখা থাকে যা দেখে আমরা বুঝতে পারি থিক কোন অনুপাতটি আমার বাগান বা জমির জন্য যথেষ্ট। আরও কিছু বৈশিষ্ট হল যেমন নাইট্রোজেন, যা উদ্ভিদের কান্ডের দৃঢ়তা প্রদান করে এবং গাছকে খুব শক্তপোক্ত ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। ফসফরাস গাছের ফুল ও মূলকে সুগঠিত রাখতে সহায়তা করে। পটাশিয়াম সমগ্র উদ্ভিদের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে উচ্চ পরিমাণ নাইট্রোজেন গাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ঠিকই কিন্তু দুর্বল কান্ডের ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, এক্ষেত্রে অনেক বেশী রোগ ভোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। দ্রুত ও দেখনদার মার্কা বৃদ্ধি কখনই উদ্ভিদের সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ হতে পারে না।
এন.পি.কে সারের গুরুত্ব
জাস্টাস ভন্ লিবিগ এর তত্ত্ব খুবই সত্য, কিন্তু বাজারে এত পরিমাণ রাসায়নিক সারে ছেয়ে গেছে যে এখন এই তিনটি রাসায়নিকের গুরুত্বের ব্যাপারটি যাচাই করার সময় এসে গেছে। তারা কি মাটির উর্বরা শক্তির বৃদ্ধির জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ? এটা পরিষ্কার যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ গাছের সুস্বাস্থ্য ও সুবৃদ্ধির জন্য শেষ কথা বলে না। কারণ আর যে বিভিন্ন মৌল যেমন কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন সালফার ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় মৌলসমূহও গাছের সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এছাড়াও অল্পমাত্রিক মৌল যেমন কপার, মলিবডেনাম, জিঙ্ক, সোডিয়াম, বোরন ইত্যাদিও যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে। এই অতিমাত্রিক ও অল্পমাত্রিক প্রায় সবকয়টি উপাদানই আমরা ভার্মিকম্পোস্ট সার থেকে পেতে পারি যেগুলি রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক বেশি প্রাকৃতিক।
এন.পি.কে সারের অনুপাত কীভাবে থাকা উচিত
আমরা অধিকাংশ প্যাকেটে যে অনুপাতটি সাধারণত দেখে থাকি তা হল ২০:২০:২০ অথবা ৫:১০:২০। এর মানে কি? আসলে এই অনুপাতের মাধ্যমে একটি প্যাকেটে আপনার জমির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক মৌল সমূহকে বোঝায়। রাসায়নিক সারে সবথেকে বেশি সংখ্যক উপাদান সর্বাধিক ঘনত্বে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে সারে ২০-৫-৫ হারে অনুপাত রাখা হয় তার অর্থ হল নাইট্রোজেন এর পরিমাণ অন্য উপাদানের থেকে চারগুণ বেশি আছে, আবার কোনও প্যাকেটে যদি ২০-২০-২০ অনুপাত থাকে তাহলে সেখানে রাসায়নিক মৌল গুলি ১০-১০-১০ প্যাকেটের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণে রয়েছে।