পশ্চিমবঙ্গে মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা বড় বড় ফল বাগানে বর্তমানে নিবিড় চাষ চালু হয়েছে। মালদা, মুর্শিদাবাদে বড় লিচু , আম বাগান তো আছেই, তার সঙ্গে কোলকাতা পার্শ্ববর্তী জেলাতেও বিদেশি কুল, পেয়ারা, জামরুল, নারকেলের নিবিড় বাগানের প্রবণতা বাড়ছে। আর তা ভালো মুনাফার নিশ্চয়তার কারণেই। তবে দীর্ঘমেয়াদি লাভের নিশ্চয়তার খাতিরে এরকম বাগানে রকার বা ফুট স্প্রেয়ার আর উপযুক্ত হবেনা। এক্ষেত্রে একসঙ্গে পুরো বাগানকে অল্প সময়ে সুসংহত শস্যসুরক্ষায় বাঁধতে দরকার ‘পাওয়ার স্প্রেয়ার’। এধরণের স্প্রেয়ারে ১০ – ১২ টি রকার বা ফুট স্প্রেয়ারের সমান কাজ করে এক ঘন্টায় করে দেবার সঙ্গে অল্প কীট/ রোগনাশক খরচে কার্যকারি নিয়ন্ত্রণে ফলের গুণগত মান আর বাজারদর বাড়ানো যাবে।
নানারকম পাওয়ার স্প্রেয়ার
এই পটভূমিতে নানা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে জ্বালানি চালিত (কোন ক্ষেত্রে ব্যাটারি ইলেকট্রিক) মোটরযুক্ত পাওয়ার স্প্রেয়ার বাজারে চালু আছে। প্রতিটিতেই ২ / ৩ অশ্বশক্তির ইঞ্জিন পাম্প লাগানো থাকে। পিষ্টনের রকম ফেরে হরাইজন্টাল ট্রিপ্লেক্স পিষ্টন, হরাইজন্টাল সিঙ্গল পিষ্টন, হরাইজন্টাল ডুক্লেক্স পিষ্টন ধরণের মোটর ও পাওয়ার স্প্রেয়ার পাওয়া যায়। এগুলির ক্ষেত্রে রোগ বা কীটনাশক গোলার পাত্র বা ড্রাম সাধারণভাবে স্প্রে মেশিনের সঙ্গে থাকে না। রকার বা ফুট স্প্রেয়ার তুলনায় সাকশন অনেক বেশি হবার জন্য বড় ড্রামে কৃষিবিষ গুলে স্প্রে করা চলে। আগে বর্ণিত তিনরকম পাওয়ার স্প্রেয়ারের ক্ষেত্রে এইচ. পি.টি রকমটিই বেশি প্রচলিত ও বড় বাগানের ক্ষেত্রে উপযোগি। এগুলির বেশিরভাগ ডিজেলে চলে তবে, বর্তমানে কিছু সংস্থার পক্ষ থেকে কেরোসিন দ্বারা চালিত পাওয়ার স্প্রেয়ারও বাজারে এসেছে। চাষিভাইদের ডিজেলে অসুবিধা হলে কেরোসিন চালিত পাওয়ার স্প্রেয়ার উপযোগি হবে। সঙ্গে কৃষিবিষের ড্রামযুক্ত না থাকলেও বর্তমানে ৫০ লিটার ধারণ ক্ষমতা যুক্ত দুই অস্বশক্তির কম মোটরের বহনযোগ্য চাকা সমেত পাওয়ার স্প্রয়ারও বাজারে এসেগেছে। যা আমাদের রাজ্যের প্রেক্ষিতে মাঝারি ও বড় ফলবাগানে কাজে লাগবে। চাষিরা একজনই এধরণের পাওয়ার স্প্রেয়ারগুলি পরিচালন ও ব্যবহার করতে পারবেন। যদি তেল জ্বালানির পাওয়ার স্প্রেয়ারে অসুবিধা হয় তবে ইলেকট্রিক চালিত এইচ.টি.পি পাম্প যুক্ত নজেলও বাজারে বেরিয়েছে। এধরণের উপযোগি মডেল ও রকমফেরগুলির ক্ষেত্রে বহন করবার জন্য নিচে চাকা সমেত পরিকাঠামো লাগানো থাকাতে একজন চাষির পক্ষে এগুলি চালানো বর্তমানে সহজ হয়ে গেছে।
বর্তমানে জল তোলার পাম্পসেটের সঙ্গেও পাওয়ার স্প্রেয়ারে সাকশন ডেলিভারি হোস সমেত স্প্রে-ল্যান্স সমন্বিত অ্যাটাচমেন্ট পাম্প ইঞ্জিন ছাড়া প্রয়োজন মত পুলির মাধ্যমে জলতোলার পাম্পসেটের সঙ্গে লাগিয়েও স্প্রে সম্পাদন করতে পারবো। এক্ষেত্রে পাম্পসেট ছাড়া উপরোক্ত অ্যাটাচমেন্ট ১৬.০০০ – ১৮,০০০ টাকায় পাওয়া যায়। কিছু টাকা আরো খরচ করে জল তোলার পাম্প ইঞ্জিনের সঙ্গেই এটি যোগ করে পাওয়ার স্প্রেয়ারের সুবিধা পাওয়া যাবে। পশ্চিমবঙ্গের ফল চাষিরা যারা ইতিমধ্যেই জল তোলার ভালো পাম্পসেট কিনেছেন তারা অ্যাটাচমেন্ট যোগ করে ফলবাগানে শস্যসুরক্ষার উন্নত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
এক ঝলকে পাওয়ার স্প্রেয়ারের খুটিনাটি
- ওজন – মডেল অনুযায়ী ১০ – ২০ কেজি।
- স্প্রে করতে একজন লোকই যথেষ্ট। তবে বড় মেশিন আনতে দুজন লোগ দরকার যেগুলিতে চাকা নেই।
- বায়ুচাপ তৈরি হয় – ৪০০ পাউন্ড/ বর্গমিটারে। কার্যকরী বায়ুচাপ ২০০ -২৫০ পাউন্ড / বর্গমিটার।
- বাগানের কার্যকারিতা – রকার বা ফুট স্প্রেয়ারের ১০ - ১২ গুণ।
- ৪ – ৬ টি ল্যান্স লাগাবার ব্যবস্থাযুক্ত।
- ২ বা ৩ অশ্বশক্তির পাম্প ইঞ্জিন দরকার।
- ডিজেল বা কেরোসিনে চলে। তবে বর্তমানে ইলেক্ট্রিক চালিত মডেলও আছে।
- ডেলিভারি হোস্ – ১০০ মিটার বা সাধারণভাবে ৫০ স্প ৫০ মিটার দুটি হোস যুক্ত।
- সাকশন হোস – মডেল অনুযায়ী ১২ – ৩৫ লিটার / মিনিটে।
- স্প্রে করার উচ্চতা – ৫০ – ৬০ ফুট।
- ডুজেল চালিত এইচ.টি. পি পাওয়ার স্প্রেয়ারে জ্বালানি খরচ – ৪০০ মিলি / ঘন্টা।
স্প্রেয়ারের খুটিনাটি আরো জানতে পডুন বাংলা কৃষি জাগরণের আগামী সেপ্টেম্বরের সংখ্যা।
তথ্য সহায়তায় – ড: শুভদীপ নাথ
- রুনা নাথ