মশা শুধুমাত্র বিরক্তিকর পতঙ্গই নয়, এরা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, পীত জ্বর, এন্সেফেলাইটিস ইত্যাদি বিভিন্ন রকম মারাত্মক রোগ ছড়ায় এমনকি ওয়েস্ট নাইল এবং জিকা ভাইরাসের বাহক হিসাবেও প্রসিদ্ধ। এছাড়া মশারা গৃহপালিত কুকুরের পক্ষে ক্ষতিকারক হার্টয়ার্মেরও জীবাণু বহন করে। তাই মশা শুধুমাত্র আমাদের কামড় দিয়েই উত্যক্ত করে না, এরা আমাদের স্বাস্থ্যহানিও ঘটায়।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হল বাড়িতে কি কি গাছ পুঁতলে তা উল্টে মশাদের ক্ষেত্রে বিরাগের বস্তু হয়ে উঠতে পারে।
১) রোজমেরি
মশার ক্ষেত্রে সবথেকে বিরাগের বস্তু হল রোজমেরি গাছ। রোজমেরি হল একটি সুগন্ধি উদ্ভিদ এটা আমাদের মধ্যে অনেকেই কমবেশি জানে, এই গাছের কাঠের মতো গন্ধ মশা, বাঁধাকপি মথ, গাজর মাছি ইত্যাদি পতঙ্গকে বাড়ির থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এই গাছের সুগন্ধ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় সবথেকে ভালো বৃদ্ধি পায় এবং খুব ছোটো পাত্রে এটিকে রাখা যায়। রোজমেরির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য একে যেকোনো ভাবে শেপিং করা যেতে পারে যা আপনার ঘরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধিতে সক্ষম। আপনার বাগানে যদি রোজমেরির গাছ লাগান তাহলে ক্ষতিকারক পোকামাকড়রাও আপনার বাড়ির চৌহদ্দি পেরোতে পারবে না, আর আপনি পরম সুখে আপনার বাড়ির শোভা ও তার সাথে জড়িয়ে থাকা সুগন্ধকেও উপভোগ করতে পারবেন।
২) গাঁদা
পরবর্তী উদ্ভিদ হলো গাঁদা। এই ফুলের সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। এই ফুলের উৎপাদনকার্য খুবই সহজে করা যায় এবং এরা আমাদের সুগন্ধ প্রদানের সাথে সাথে পতঙ্গদের আক্রমণ থেকেও রক্ষা করে। আপনি একটি ছোটো পাত্রে গাঁদা ফুল ফুটিয়ে যদি আপনার প্রবেশদ্বারের কাছে রেখে দেন তাহলে আপনার গৃহ ছারপোকার আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। গাঁদা শুধু মাত্র মশাই নয়, এর সাথে শ্বেত মাছি, স্কোয়াশ বাগ, এফ্যিস, থ্রিপ্স ও টমাটো হোমোয়ার্মকেও বাড়ির চৌহদ্দি থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
৩) লেবু ঘাস
আরেকটি ভাল মশা বিতাড়ক উদ্ভিদ হল লেবু ঘাস, যাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে Cymbopogon citrates বলা হয়ে থাকে। এই গাছের ফুলে সিন্ত্রোনেল্লা নামক একটি প্রাকৃতিক নির্যাস থাকে যা দিলে পতঙ্গ বিনাশক তেল তৈরি হয়। দক্ষিণ পূর্ব ভারতে মাংসের বিভিন্ন পদের রান্নায় এই লেবুঘাস ব্যবহার করা হয়। ভারতে এই লেবুঘাসের বিবিধ ভেষজ ব্যবহার রয়েছে যা দিয়ে প্রদাহ প্রতিরোধী মলম তৈরি হয়ে থাকে। এইপ্রকার ঘাসে এমন সুগন্ধ থাকে যার জন্য একে বিভিন্ন সুগন্ধি দ্রব্য ও প্রসাধনী তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪) লেমন বাম
লেমন বাম বা মেলিসা অফিসিনালিস হলো একপ্রকার গুল্মজাতিয় উদ্ভিদ। আসলে এই উদ্ভিদটি পুদিনার সমগোত্রীয়, তাই এই উদ্ভিদের বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। এই গাছের শুকনো পাতাকে হারবাল চা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি খুব সহজেই এই গাছের কয়েকটি পাতাকে চটকে নিজের গায়ে মেখে নিতে পারেন এতে মশা কেন! কোনো ক্ষতিকারক পতঙ্গই আপনার অঙ্গে বসার সাহস পাবে না। এই গাছকে অতি সহজেই আপনার সবজি বাগানে যখন খুশি আপনি উৎপাদন করতে পারেন।
৫) ক্যাটনিপ/নিপিটা ক্যাটারিয়া
ক্যাটনিপ হলো অপর একটি মশা বিতারক উদ্ভিদ। নেপেটাল্যাক্টন হলো ক্যাটনিপের মধ্যে অবস্থিত একটি শক্তিশালী উপক্ষার, বর্তমান গবেষণা অনুসারে এটির পতঙ্গ নাশের ক্ষমতা DDT-এর থেকেও দশগুণ বেশি, তাই ক্যাটনিপের নির্যাসকে প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৬) বেসিল
এর পরবর্তী তালিকায় রয়েছে বেসিল। এটি অপর একটি প্রসিদ্ধ হার্ব যা কীটনাশক হিসেবে উপযোগী। বেসিলের তীব্র গন্ধ মশাকে আপনার বাড়ি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম। এই গাছ উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানে উৎপাদিত হতে পারে এবং ঢালু জলনিকাশীযুক্ত উর্বর জমি ও প্রচুর সূর্যালোক বেসিল উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ছোট ছোট পাত্র বা পটে এই গাছ উৎপাদন করা যায়। এই হার্ব শুধুমাত্র পতঙ্গ প্রতিরোধকারী হিসেবেই নয়, রান্নার কাজেও প্রচুর ব্যবহার হয়।
৭) রসুন বা অ্যালিয়াম স্যাটিভাম
রসুন হলো সাঙ্ঘাতিক মশা প্রতিরোধী উদ্ভিদ। আপনি রসুনের কোয়াকে ছোটো ছোটো করে কেটে আপনার বসত বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে দিলে তা আপনার বাসগৃহকে মশকি নিরুদ্ধ করে রাখতে সক্ষম। এই রসুনের নির্যাস দিয়ে কীটনাশক তেল তৈরী হয়। রসুনের অ্যালিসিন যৌগ দিয়ে প্রাকৃতিক মশা প্রতিরোধী মলম তৈরি করা হয়েছে এবং মশা প্রতিরোধী বডি স্প্রে ও বানানো হয়েছে। এত কিছু না করে আপনি যদি কিছু রসুন গাছও পোঁতেন তাহলেও তা মশা বিতাড়ণে সাহায্য করবে।
- প্রদীপ পাল