আমাদের জাতীয় ফল আর সকল ফলের রাজা সুমিষ্ট আমের মুকুল এসে গেছে রাজ্যের আম বাগিচা গুলিতে। আর চাষিদের মাথায় এখন থেকেই সেই চিন্তার ভাঁজ, কিভাবে মুকুল সুস্থ রেখে বেশী আর উন্নত গুনমানের ফলন পাওয়া যায়। যারা বাগান ডাক নিয়েছেন ও যারা নিজেরাই পরিচর্যা করছেন তাদের জন্য এক নজরে স্প্রে শিডিউল সাজিয়ে দিলাম। এতে অত্যধিক ও অনাবশ্যক স্প্রের খরচ বাঁচিয়ে আপনারা পাবেন কার্যকরি আই. পি. এম. এর নিরাপত্তা ও দুর্দান্ত ফলন।
- মুকুলে এখন ঠান্ডা-গরমে / কুয়াসায় অ্যান্থ্রাকনোজ আর জাব পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। এর প্রতিরোধে টেট্রাকোনাজোল ১.৫ মিলি বা অ্যাজক্সিস্ট্রবিন ১.৫ মিলি বা কার্বান্ডাজিম + ম্যানকোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ১.৫ গ্রাম এর সাথে অ্যাসিফেট + ইমিডাক্লোপ্রিড এর মিশ্র কীটনাশক ২ গ্রাম বা নিউ জেনারেশন কীটনাশকমলিক্যুল বুপ্রোফেজিন ২ মিলি প্রতি লিটার জলে ১/৩ মিলি স্টিকার সহযোগে ও পর্যাপ্ত জল সহযোগে স্প্রে করুন। সিন্থেটিক পাইরেথ্রয়েড বা শুধু ইমিডাক্লোপ্রিড স্প্রে করবেন না।
- মুকুল থেকে ফুল ফুটে গেলে কোন স্প্রে করা নিষেধ। কারণ এতে পরাগযোগ ব্যাহত হয়ে ফলন কমে যাবে। মুকুল থেকে মুসুর দানার মত গুটি আসতে শুরু হলে কুয়াসা ও জাব পোকার আনাগোনা চোখে পড়লে উপরের স্প্রে আরেকবার দিন। মুকুলে সাদা গুঁড়োচিতি রোগ দেখলে জলে গোলা সালফার ২ গ্রাম / ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
- মার্বেলের মত গুটি হলে আর সবার মত অক্সিন হরমোন ব্যবহার না করে জিব্বারেলিক অ্যাসিড হরমোন ও সঙ্গে হিউমিক অ্যাসিড ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে একসাথে স্প্রে করুন।
- আম কুষির মত হলে সুলি পোকার আক্রমণ রুখতে ইমামেকটিন বেন্জোয়েট ১/২ মিলি প্রতি লিটার জলে ১/৩ মিলি আঠা/ স্টিকার সহযোগে স্প্রে করুন।
- আম কুসি অবস্থা থেকে বড় হবার সময় শাঁস বাড়তে শুরু করলে ফলের মাছির আক্রমণ হয়। এর জন্য স্প্রে না করে পরিবেশ বান্ধব ফেরোমোন ট্র্যাপ ( এখন বাজারে নো-মেট-লাইফ-টাইম নামে উপলব্ধ) দুটি গাছ পিছু একটি করে ঝুলিয়ে দিন। এসময় একবার ফল ফাটা প্রতিরোধে বোরন ১ গ্রাম ও তরল ক্যালসিয়াম ৩ মিলি একসাথে প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
- পরবর্তী এক সপ্তাহে পারলে একবার অনুখাদ্য মিশ্রণ নির্দিষ্ট ডোজে স্প্রে করুন।
- ফলপাড়ার দিন কুড়ি আগে কার্বান্ডাজিম + ম্যানকোজেবের মিশ্র ছত্রাকনাশক ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে স্টিকার সহযোগে স্প্রে করলে অ্যানথ্রাকনোজ এড়ানো যাবে।
সমস্ত স্প্রে অবশ্যই ভোরবেলা না করে বিকালের দিকে করুন, এতে মৌমাছির পরাগযোগে অসুবিধা হবে না আর আপনি পাবেন বেশী আর গুনমানের ফলন।
এর সঙ্গে পুরানো আম বাগানের ঘন ও অফলদায়ী ডালপালা শীতের মুখে ছেঁটে পরিস্কার করে বাগানে চাষ দিয়ে ডাল বা শুঁটি জাতীয় সবজি লাগান। মুকুল আসার সঙ্গে গাছের গোঁড়ায় চুনের প্রলেপ দিন। এ সমস্ত ব্যবস্থায় পুরোনো বাগানের ফলন যেমন ঘুরে আসবে তেমনই জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের পুনোরোজ্জীবন প্রকল্পের অনুদানের সুবিধা পাবেন।
আর বর্ষার আগে ও পরে সার ব্যবস্থাপনায় গাছপিছু ১০-১২ কেজি জৈব সারের সঙ্গে সারে সাত কাঠা জমির এককে মোট ৫ কেজি ইউরিয়া ও ১৫ কেজি ১০:২৬:২৬ আর ১০ কেজি সমুদ্র শৈবাল নির্যাস দানা সার বর্ষার আগে ও পরে দুভাগে ভাগ করে জৈব সারের সঙ্গে মিশিয়ে গাছের গোঁড়া থেকে ৩-৫ হাত দূরে রিং নালা করে দিন। এর সাথে বর্ষার আগে সাত কাঠা জমির এককে মোট ১ কেজি বোরন সারের সঙ্গে মাটিতে মিশিয়ে দিন।
তথ্যসূত্র: ড. শুভদীপ নাথ – ৯৪৭৪৫৭৮৬৭১ (সহ উদ্যানপালন অধিকর্তা, উত্তর ২৪ পরগণা)
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)