প্রাচীন ভারতের সময়কাল থেকে হলুদ একদিকে যেমন আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসাবে পরিচিত তেমনি অন্যদিকে পরিচিত মশলা হিসাবে এর কার্যকারিতা অপরিসীম। বেশিরভাগ বাঙালি রান্নায় হলুদ বা Turmeric Powder তরকারীতে না দিলে এর স্বাদ, গন্ধ, রং পাওয়া যায় না।
হলুদের বহুপ্রকার গুণাগুণ যা থেকে আমরা রোজই রোগ প্রতিরোধ থেকে উপকৃত হতে পারি। হলুদ মূলত গাছের কন্দমূল থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে। ভারতসহ গোটা দুনিয়ায় হলুদের ব্যবহার হয়ে থাকে নানারকম ভাবে। রান্নার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও হলুদের ব্যবহার হয় বিপুল পরিমাণে।
হলুদ চাষ করার পদ্ধতি – সব ধরণের মাটিতে হলুদ চাষ করা যায় তবে দোআঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য আদর্শ। বর্তমানে আমাদের দেশে উন্নত জাতের ডিমলা ও সুন্দরী হলুদ চাষ করা হলেও দেশীয় জাতের হলুদ বেশী চাষ করা হয়। সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হলুদ রোপণ করা হয়। অগ্রহায়ণ-পৌষ নাসে হলুদ তোলা হয়। রোপণের আগে আড়াআড়ি ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরী করে রোপণ করতে হয়। লাঙল দিয়ে ৩-৪ সেমি. গভীর করে লাইন টেনে ৬-৮ ইঞ্চি অন্তর চোখসহ হলুদের দানা রোপণ করে মাটি চাপা দিতে হয়। গজানো গাছ মাটির ৬-৮ ইঞ্চি উপরে উঠে আসলে কোদাল দিয়ে অনেকটা আলুর ক্ষেত্রের মতো মাটি দিতে হয়। তাছাড়া ৬ মাসের এই মশলা জাতীয় ফসলের সর্বোচ্চ ২বার নিড়ানি দিতে হয়। জমি তৈরী থেকে তোলা পর্যন্ত প্রতি কাটাতে খরচা হয় সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। হলুদ চাষীভাইরা বলেন প্রতি কাটাতে বীজ হলুদ লাগে ২০ থেকে ২২ কেজি. এবং উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১২ মণ। বর্তমানে বাজার মূল্য শুকনো প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং কাঁচা হলুদ প্রতি মণ ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা। ফলে বর্তমানে দাম অনুযায়ী প্রতি কাটাতে লাভ থাকে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। যা অন্য কোনো কৃষিপণ্যে সম্ভব নয়। এটা অনেকাংশে বলা যায় যে এটি একটি অর্থকরী ফসল। উৎকৃষ্ট মানের হলুদ চাষ করে আগামীদিনে চাষীরা আরো বেশী পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
হলুদের উপকারিতা – হলুদে নানাবিধ উপকারিতা আছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ভিটামিন থাকে। হলুদে আছে প্রোটিন, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংকের মত পুষ্টিকর উপাদান সমূহ। যার ব্যবহারে আমাদের শরীর নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে ত্বকের ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার খুবই কার্যকারী। কাঁচা হলুদের ব্যবহার সবচেয়ে উপকারি। পেটের সমস্যা হোক বা ত্বকের সমস্যা উভয়ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ ভীষন ফলদায়ক। নিদ্রাজনিত সমস্যা থেকে সমাধানের পথ পেতে পারেন হলুদের নানাপ্রকার ব্যবহারের মাধ্যমে।
ত্বকের বলিরেখা রোদে পোড়া দাগ, ব্রনর দাগ ইত্যাদি থেকে মুক্তির সহজ উপায় হল হলুদের রোজগার ব্যবহার। তাছাড়া অ্যালার্জী থেকে বাঁচতে হলুদের ব্যবহার হয়ে থাকে। রোজ সকালে একটা গোটা কাঁচা হলুদ, মধু বা গুড়ের সাথে খাওয়া অভ্যাস করুন। পেটের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। ওজন কমাতে এটি করতে পারেন। শরীর রোগমুক্ত হয়ে উঠবে সহজে। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগা থেকে হলুদ আপনাকে বাঁচাতে পারে। কফ্ বা সর্দি হলে এক গ্লাস দুধে হলুদ মিশিয়ে পান করুন, জলদি ভালো হয়ে যাবেন। তাছাড়া রোজ রাতে এক গ্লাস হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করুন। যাদের নিদ্রা-জনিত সমস্যা তারা উপকৃত হবেন। যে কোনো ক্ষত বা পুড়ে যাওয়া স্থান বা ফোস্কাতে হলুদের প্রলেপ লাগালে তা ব্যাথার উপশম ঘটায়। কাঁচা হলুদ খেলে কমতে পারে টাইপ ২ ডায়েবেটিস। হলুদের ব্যবহার আমাদের রোজকার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে রান্না হোক বা শরীরচর্চা। হলুদের গুণাগুণ দ্বারা আমরা নানাভাবে উপকৃত যা অস্বীকার করা যায় না। হলুদ চাষীরা আগামীদিনে আরো উৎকৃষ্টমানের জৈব সার দিয়ে চাষ করলে আরো ভালো ফলন পাবেন বলে আশা রাখি।
- পুলক কর