হরিয়ানার কাকড়ৌলী হাটঠীর একজন যুবক কৃষক শ্রী কৃষ্ণ শোরাণ তাঁর চাষবাসের জন্য বিন্দুসেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। তিনি তাঁর নিজের জমি ছাড়াও যখন অবসর পান তখন আশে পাশের গ্রামগুলিতে ঘুরে ঘুরে সেখানকার কৃষকদের কাছে বিন্দুসেচ ব্যবস্থার উপকারীতা বা এতে জমির মাটির কি উপকার হতে পারে সেই ব্যাপারে শলা-পরামর্শ প্রদান করেন। এই বিন্দুসেচ শীতকালীন সবজি চাষে এতটাই উপকারী, যারা এই পদ্ধতির জলসেচের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে সেইসব কৃষকরা যেমন উৎপাদন খরচ কমাতে পেরেছে তেমনি তাদের কাছে অনেকটাই লাভদায়ক হয়েছে।
বর্তমানে যদিও যুবকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন নিত্যনতুন কৃষি প্রযুক্তি আবিষ্কার হওয়ার জন্য কিন্তু গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনেক বেশি রোজগারের জোয়ার এসেছে। এখন ভারতীয় গ্রামগুলিতে কৃষকরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামান্য বুদ্ধিকে ব্যবহার করে অনেক বেশি উপার্জন করতে সক্ষম। সেইরকমই ভাবনা চিন্তার যুবক কৃষক কৃষ্ণ কুমার তাঁর জমির দশা ফেরানোর জন্য পাঁচ বৎসর আগে থেকেই মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে চালু করেছিলেন বিন্দুসেচ ব্যবস্থা, যেই প্রযুক্তি আজ ভিবানী জেলার সমস্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে চলেছে। এই বিন্দুসেচের জন্যই কিন্তু আজ কৃষ্ণ কুমারের বাৎসরিক আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। কৃষ্ণ কুমারের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র ১২ ক্লাস পর্যন্ত, কিন্তু তিনি কখনই সরকারী চাকরির পেছনে ছোটেন নি, বদলে তিনি তাঁর পৈতৃক জমিতে চাষবাসের কাজে নিজেকে যুক্ত করেছেন, এবং এই পাঁচ বৎসরে তিনি এই রাজ্যে বহুল প্রচলিত ঝরনা সেচের পরিবর্তে সম্পূর্ণ নিজেস্ব উদ্যোগে বিন্দু সেচ ব্যবস্থা চালু করেন। এই চাষ যখন তিনি শুরু করেন তখন সেখানকার লোকেরা বিষয়টিতে এতবেশী গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু যখন এখানকার মানুষ বুঝতে পারলো যে বিন্দুসেচে কমখরচে ও কম জলে বেশী উৎপাদন করা সম্ভব তখন এই গ্রামের বহু কৃষক এই ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং কৃষ্ণ কুমারের কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিষয়টিকে বুঝতে চায়।
কৃষ্ণ কুমার মানুষের মধ্যে এত বেশি উৎসাহ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেন নি, তিনি নিজে উদ্যোগী হয়েই সরকারী অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করে গ্রামের অধিকাংশ কৃষকদের জমিতে বিন্দু সেচের ব্যবস্থা করে দেন এবং এই ব্যাপারে সরকারী ভর্তুকীর বিষয়টিকেও খুব ভালোভাবে কাজে লাগান। বিন্দুসেচ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচয় করে আজ এই জেলার সমস্ত জমিতে বিন্দুসেচ পদ্ধতি চালু করার সুযোগ তিনি করে দিয়েছেন।
যুবক কৃষক শ্রী কৃষ্ণ শোরেন বলেন বিন্দুসেচে জমির ক্ষয় কম হয় ফলে জমির গুণবত্তা বজায় থাকে এবং তা ফসলের চটজলদি বৃদ্ধিতে অনেক বেশি সহায়তা করে। এই ধরণের সেচ ব্যবস্থা সবজি চাষের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এই বিষয়ে বলে রাখা ভালো দক্ষিণ হরিয়ানার ভৌমজলের স্তর খুব শীঘ্রই কমতে শুরু করেছে, এই কারণে এই জায়গার ফসল বোনাই ও জলসেচের সমস্যা বহুদিন ধরেই অব্যাহত রয়েছে। এই কারণে যে কৃষক বিন্দুসেচ ব্যবস্থাকে খুব ভালো করে আপন করেছে, আজ তাঁর লোকসানের কোনো সম্ভাবনাই নেই, বরং তাদের লাভের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিন্দুসেচের দ্বারা কৃষক বিভিন্ন কম জলের ফসল যেমন পেঁয়াজ, টমাটো, আলু, মূলা, গাজর, পালং, সিম, বীট ইত্যাদি শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারে, এবং এই সবজিগুলির চাহিদা আজকালকার বাজারে অনেক বেশি।
- প্রদীপ পাল(pradip@krishijagran.com)