খাদ্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ও খাদ্য সুরক্ষা বজায় রাখতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ আধুনিক কৃষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন কৃষক নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমান কৃষিকাজ করতে পারে, একটি কৃষি যন্ত্র একই সময়ে তার থেকে অনেক বেশি কাজ, নিখুঁত ভাবে করতে পারে। কৃষিতে জমি তৈরি, বীজ বপন, চারা রোপন, সার ও ওষুধ প্রয়োগ, আগাছা দমন, অন্তর্রবর্তী পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ ও মজুদকরণের মত কাজে প্রচুর শ্রমিকের দরকার হয়। অথচ চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কৃষিশ্রমিক পাওয়া যায় না। অনেক সময়ে শ্রমিকের অভাবে কৃষিকাজ সময়মতো শেষ করা যায় না, ফলে উৎপাদন আশানুরূপ হয় না।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কৃষি যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান যুগে মাটির অবক্ষয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। চাষ না দিয়ে (বিনা কর্ষণে) শুধুমাত্র যন্ত্রের সাহায্যে বীজ বুনে ফসল উৎপাদন করে ভূমিক্ষয় অনেকাংশে কমানো যায়। এছাড়াও সেচের অধুনিকীকরণের ফলে স্বল্প জলে বেশি এলাকা সেচের আওতায় আনা যায়। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন চালু আছে যেমন – রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা (RKVY), পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লব আনয়ন (BGREI), জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশন (NFSM), জাতীয় তৈলবীজ ও পামতেল প্রকল্প (NMOOP), রাজ্যপরিকল্পনা (SP) ইত্যাদিত। এছড়াও আছে
কৃষি যন্ত্রাদিক্রয়ের জন্য আর্থিক অনুদান প্রকল্প – Financial Support Scheme for Farm Mechanism (FSSM) – বড়ো ও ব্যয়বহুল কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য এই প্রকল্পে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের সহায়তায় কৃষকেরা ট্রাক্টর , পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, প্যাডি ট্রান্সপ্লান্টার, জিরো টিলেজ মেশিন, মাল্টি ক্রপ থ্রেশার, পাম্পসেট, রোটাভেটার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, পটাটো প্ল্যান্টার/ পটাটো ডিগার ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রপাতি ভর্তুকিতে পেতে পারেন।
ট্রাক্টর নিতে ইচ্ছুক কৃষকের ২.৫ একর ও পাওয়ার টিলার নিতে ইচ্ছুক কৃষকের ১.৫ একর সেচসেবিত জমির মালিকানা থাকতে হবে।
ছোট কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের এককালিন সহায়তা প্রদান প্রকল্প – One time Assistance to Small and Marginal Farmers for purchase of Small Farm Implements (OTA-SFI)- এই প্রকল্পে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা নিত্যপ্রয়োজনীয় ছোট কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৫০% ভর্তুকিতে সর্বাধিক ১০০০০ টাকা পর্যন্ত এককালিন সহায়তা পেতে পারেন। সুবিধাভোগীদের কিসান ক্রেডিট কার্ড (KCC) বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এই প্রকল্পের সহায়তায় কৃষকেরা ড্রাম সিডার, হস্তচালিত স্প্রেয়ার, পদচালিত ধান ঝারার মেশিন, সিড বিন, বীজশোধন ড্রাম, ধান বীজ রাখার গোলা, হস্ত চালিত বীজ বোনা যন্ত্র, সেচের ডেলিভারি পাইপ, কোদাল, খুরনি , নিড়ানি, কাস্তে ইত্যাদি পেতে পারেন।
কৃষি যন্ত্রাদি ভাড়া কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভর্তুকি প্রকল্প – Custom Hiring Centre (CHC) – আমাদের রাজ্যের ক্ষুদ্র , মাঝারি ও প্রান্তিক শ্রেণির কৃষকদের কাছে অত্যাধুনিক ও ব্যয়বহুল কৃষি যন্ত্রপাতি ন্যায্য ভাড়ায় জোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যে কৃষি যন্ত্রাদি ভাড়া কেন্দ্র প্রকল্পটি শুরু হয়। প্রকল্প ব্যয় নূন্যতম ২০ লক্ষ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা হতে পারে। কৃষি যন্ত্রাদি ভাড়া কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এলাকার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার বড় ও ক্ষুদ্র যন্ত্রাদি যেমন - ট্রাক্টর , পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, প্যাডি ট্রান্সপ্লান্টার, জিরো টিলেজ মেশিন, মাল্টি ক্রপ থ্রেশার, পাম্পসেট, রোটাভেটার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, পটাটো প্ল্যান্টার/ পটাটো ডিগার, পোর্টেবল স্প্রিঙ্কলার, ডাল মিল, তেল মিল, ছোট যন্ত্রাদির সেট ইত্যাদি ক্রয় করা যাবে।
রুনা নাথ