রোডামাইন-বিঃ এই রাসায়নিক রঙটি মূলতঃ ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করেন রাঙাআলুকে রঙীন করে তোলার জন্য যাতে ক্রেতারা এটি কে আসল রাঙাআলু বলে মনে করে কিনতে প্রলুদ্ধ হন। পরিপক্ক রাঙা আলুর বাইরে থাকা খোসার সঠিক রঙের সাথে এই কৃত্রিম রঙের একটা ফারাক থাকেই। রাঙা আলুর খোসার উপরিভাগে জলে ভেজানো পরিষ্কার তুলোর প্যাড দিয়ে ঘষলে যদি তুলার উপরিভাগ বেগুনি রঙ ধারণ করে তাহলে বুঝবেন রাঙাআলুতে রোডামাইন-বি নামক রাসায়নিক রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। এমন রাঙাআলু ব্যবহার করবেন না এবং এটি থেকে সাবধান থাকুন। এই কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা সবজি খেলে বৃক্ক, যকৃৎ এমনকি পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও এই রাসায়নিক যৌগটি চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে এবং ত্বকের সংস্পর্শে এলে চর্মরোগও পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ও ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
সুদান রেডঃ এটি হল লাল-কমলা রঙের রাসায়নিক যৌগ যেটি কিনা মূলতঃ পাকা লঙ্কা, লাল ক্যাপসিকাম, রেট পিপার, টমেটো এবং পাপরিকাকে রঙিন করে তোলার জন্য খাবার ভেজাল রঙ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও লাল লঙ্কার গুঁড়োর সাথেও এটি মেশানো হয়। মূলতঃ সবজিগুলিকে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এই রাসায়নিক রঙটিকে ব্যবহার করা হয়। সুদান রেড প্রয়োগ করা ভেজাল সবজি খেলে ত্বক ও দেহের মিউকাস মেমব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও চোখে জ্বালা, হাঁচি, মাথাব্যাথা ও অ্যালার্জিও পর্যন্ত হতে পারে।
সিলিকন স্প্রেঃ বেগুনি রংয়ের রাসায়নিক পদার্থ সিলিকন স্প্রে করা হয় বেগুনের মতো সবজির উপরিভাগে। এটি করা হয় মূলতঃ বেগুনকে চকচকে রঙীন ও সতেজ দেখানোর জন্য। এমন ক্ষতিকারক রাসায়নিক স্প্রে করা বেগুন খাওয়া শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। জলে ভেজানো সাদা তুলোর প্যাডের সাহায্যে বেগুনের খোসার উপরে ঘষলে যদি তুলোয় বেগুনি রঙ লাগে তাহলে বুঝবেন বেগুনে ভেজাল রাসায়নিক রঙ প্রয়োগ করা হয়েছে। এমনটি হলে এমন বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মোমের আস্তরণঃ সবজির বাইরে থাকা খোসার উপরিভাগে অসাধু ব্যবসায়ীরা মোমের আস্তরণ ফেলেন। এটি ব্যবহার করার কারণ হল বেগুন থেকে জল বের হয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠেকানো, দীর্ঘ সময়ের জন্য সতেজতা ধরে রাখা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চকচকে দেখানো। বেগুনের খোসার উপরে চামচ দিয়ে একধার থেকে ঘষে টেনে আনলে যদি চামচের মধ্যে মোমের আস্তরন জমতে দেখা যায়, তাহলে বুঝবেন বেগুনে মোমের আস্তরণ ফেলা হয়েছে। এমনটি হলে ওই কেনা বেগুন একদম খাবেন না।
আরও পড়ুনঃ রঙ মেশানো সবজি বিষয়ে সতর্ক থাকুন- প্রথম পর্ব
এরিথ্রোসিনঃ এরিথ্রোসিন হল গোলাপি রঙের বাণিজ্যিক রঙ। যেটি সবজি ও ফলকে ক্ষতিকারক উপায়ে কৃত্রিমভাবে রঙীন করা হয়। যাতে ক্রেতাদের চোখে পড়ে। মূলতঃ তরমুজের ভেতরের খাদ্য উপযোগী শাঁসকে লাল করতে এরিথ্রোসিন ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বেকারি দ্রব্য, শুকনো ফল, সসে, ফলের রসে এবং পানীয়তেও একে মেশানো হয়। তরমুজের গোটা ফলকে দুই টুকরো করে নেওয়ার পরে জলে ভেজানো সাদা তুলোর প্যাড দিয়ে লাল রঙের কাঁটা অংশের ওপরে ঘষতে থাকুন। যদি ঘষার পরে তুলো লাল রঙ ধারণ করে তবে বুঝবেন তরমুজ ভেজাল ক্ষতিকারক রঙ এরিথ্রোসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এমন রঙ মেশানো তরমুজ খাবেন না। এই রঙ মেশানো সবজি ও ফল খেলে বমি, ডায়োরিয়া, পাকস্থলীতে ব্যথা এবং ক্ষিদে মরে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়াম কার্বাইডঃ রাসায়নিক যৌগ ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবসায়ীরা মূলতঃ ব্যবহার করেন অপরিপক্ক সবজি এবং ফলকে দ্রুত কৃত্রিমভাবে পাকানোর জন্য। ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে নির্গত অ্যাসিটিলিন গ্যাস ফল পাকানোর কাজটি করে থাকে। মূলতঃ টমেটো, পেঁপে, আনারস, কলা ও আম পাকানোর জন্য এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহৃত সবজি ও ফল খাওয়ার ফলে শরীরে ঝিমুনিভাব, মাথাধরা, ঘনঘন পিপাসা, নিম্ন রক্তচাপ, চোখে ও ত্বকে জ্বালা ভাব, স্থিতিশক্তির লোপ, গলায় ব্যথায় এমন কি বমিও পর্যন্ত হতে পারে।
লাল রঙের মাটিঃ ইটের মতো লাল রঙের মাটির গুঁড়ো বা পাউডার আলুর সাথে মেশানোর মত কাজটি করেন অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা। মূলতঃ হিমঘর এবং গুদামঘরে মাটি মেশানোর কাজটি হয়ে থাকে। কমদামের আলুর গায়ে থাকা দাগ ও সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত খুঁত গুলি ঢাকা দেবার জন্য মাটির গুঁড়ো মেশানো হয়। যাতে আলু সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়। এই প্রথায় বাজারে অধিক দামে আলু ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। মূলতঃ শহর এলাকায় বাজারে এই ধরনের কাজটি হয়ে থাকে। আলুর উপরিভাগে আঙুল দিয়ে আলতো করে ঘষলেই এই রঙ লেগে যাবে। রঙ মেশানো আলু কেনা থেকে সতর্ক থাকুন।
বাজারে বা হাটে সবজি কেনার সময় সতর্ক থাকুন। রাসায়নিক রঙ মেশনের শাক-সবজি কেনা থেকে দূরে থাকুন। দেখে-পরখ করে তবেই সবজি কিনবেন। মনে রাখবেন রাসায়নিক ক্ষতিকারক রঙ মেশানো সবজি খাওয়ার অর্থই হলো শরীরের মধ্যে বিষের প্রবেশ ঘটানো। যার ফলে আপনাকে অচিরেই নানান রোগব্যাধি ও স্বাস্থ্য সমস্যার মুখে পড়তে হবে যেটা আদৌ কাঙ্খিত নয়। অতএব রঙ মেশানোর সবজি কেনা থেকে বিরত থাকুন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন।
লেখক-সৌমেন্দ্র নাথ দাস