করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করতে দেশব্যাপী চলছে লকডাউন৷ ২৪ শে মার্চ দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ এরপর তা ফের ৩ রা মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ দু’দফার লকডাউন শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফার লকডাউন ঘোষিত হয়৷ যার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৭ ই মে পর্যন্ত করা হয়৷ তবে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হলেও নিয়ম অনেক ক্ষেত্রেই কিছুটা শিথিল করা হয়েছে৷ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ওপর ভিত্তি করে এলাকাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং তার ওপরেই নিয়ম কতটা শিথিল করা হবে, তা নির্ভর করছে৷ অরেঞ্জ এবং গ্রীণ জোন কিছু ক্ষেত্রে ছাড় পেলেও, রেড জোনে আগের মতোই কড়া নিয়ম বহাল থাকবে৷ চিকিৎসা এবং জরুরি পণ্য পরিষেবায় ছাড় রয়েছে এক্ষেত্রে৷ তবে এই লকডাউনে সমস্যায় পড়েছেন দৈনিক উপার্জনকারীরা, শ্রমিক শ্রেণি৷
পশ্চিমবঙ্গে এই লকডাউন সফল করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এই শ্রমিক শ্রেণি থেকে শুরু করে এই লকডাউনে অসংগঠিত দিনমজুরদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম প্রচেষ্টা প্রকল্প৷ ট্যুইটারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, লকডাউনে শ্রমিক শ্রেণির রুজি রোজগার ধাক্কা খেয়েছে৷ আর এই কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও সকলকে আহ্বান জানান তিনি৷
এই লকডাউনে তিনি দুটি প্রকল্পের ঘোষণা করেন, একটি হল ‘স্নেহের পরশ’ এবং অপরটি হল ‘প্রচেষ্টা’৷ স্নেহের পরশ প্রকল্পের আওতায় সেই সব শ্রমিকরা রয়েছেন যারা লকডাউনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকে রয়েছেন, তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে৷ এবং দ্বিতীয় প্রকল্প অনুযায়ী আর্থিক ক্ষেত্রে সাহায্য করা হবে অসংগঠিত শ্রমিকশ্রেণিকে৷ এই দুই প্রকল্পে ১০০০টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলে জানা যাচ্ছে৷
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ফর্ম তোলা এবং জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তুমুল বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়৷ বিডিও, মহকুমা শাসক, জেলা শাসকের কাছে ভিড় উপচে পড়ায় এই প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখা হয়৷ এরপর জেলা শাসকের কাছে নতুন নির্দেশিকা আসার পরে ফের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে৷ তবে এই প্রকল্পের জন্য এবার অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে৷ এর জন্য বাড়ির বাইরে আর বেরোতে হবে না৷ গুগল প্লে স্টোর থেকে প্রচেষ্টা প্রকল্প অ্যাপ ডাউনলোড করে আবেদন করা যাবে এবং ১৫ মে পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ রয়েছে৷
আবেদনের জন্য যোগ্য কারা?
এই সুবিধা পেতে ব্যক্তিকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে৷ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হতে হবে, যিনি দৈনিক আয় করেন৷ প্রতিটি পরিবার থেকে মাত্র একজনই এই আবেদন করতে পারবেন৷ আবেদনকারী অন্য কোনও স্থান থেকে উপার্জন করলে তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হবে না৷
আবেদন করতে কী কী লাগবে?
আবেদন জানাতে যে সব তথ্য বা পরিচয় পত্র প্রয়োজন, সেগুলি হল, আধার কার্ড, স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, মোবাইল নম্বর৷ আবেদন পত্রে আবেদনকারীর নাম, পিতার নাম, লিঙ্গ, জন্ম তারিখ, বয়স, ভোটার আইডি কার্ড নম্বর, রেশন কার্ড নম্বর, আধার কার্ড নম্বর, জেলা, বিধানসভা, এলাকা, ওয়ার্ড নম্বর, বাড়ি, পোস্ট অফিস, থানা, মোবাইল নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, স্ট্যাম্প সাইজ ছবি ইত্যাদি তথ্য দ্বারা ফর্ম পূরণ করতে হবে৷
এর আগে জেলা শাসকের অফিস বা মহকুমা শাসকের অফিস থেকে বিনামূল্যে এই আবেদন পত্র সংগ্রহ করার কথা জানানো হলেও বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনলাইনে আবেদনের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ যার ফলে লকডাউনে বাড়িতে বসেই আবেদন করা যাবে এই প্রকল্পের জন্য৷
আবেদনের জন্য দেখুন এই ওয়েবসাইট- www.wb.gov.in
বর্ষা চ্যাটার্জি