মিয়াওয়াকি বনের গল্প শুরু হয় ১৯৫০ সালের শেষের দশকে। জাপানের এক তরুণ আকিরা মিয়াওয়াকি এই কংক্লিটের শহরে বাস করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। মাথায় আসে প্রাকৃতিক ভাবে অরন্য তৈরির পরিকল্পনা। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার তাগিদে শুরু হয় মিয়াওয়াকি বনের কাহিনি।
কি এই মিয়াওয়াকি পদ্ধতি? এটি হল বিশাল এলাকা জুড়ে অরন্য তৈরির পদ্ধতি। গোটা এলাকা জুড়ে স্থানিয় গাছপালা লাগানো হয়। একই সঙ্গে ফুল, ফল, পুকুর, সমস্ত কিছুর সামঞ্জস্যে গঠিত হয় এই অরন্য। সূর্যালোক, পর্যাপ্ত জল সমস্ত কিছুর সহযোগিতায় গড়ে ওঠে এই অরন্য। জঙ্গলের টানে আসে পাখি, প্রজাপতি এবং বিভিন্ন জীবজন্তু। দূষণ মুক্ত পরিবেশ গড়তে এই অরন্যের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে মেলে জীবিকা এবং টাকা উপার্জনের রাস্তা।
আরও পড়ুনঃ শূকর পালনের রাজা যুবরাজ! ২ টি শূকরে আয় ৪৫ হাজার
আমাদের দেশে তামিলনাড়ু রাজ্যে গড়ে উঠেছে এমনই এক অরন্য। শিবগঙ্গাই জেলার কল্লাল ইউনিয়নে অবস্থিত থাট্টাটি পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা এই অরন্য তৈরিতে সহযোগিতা করছে। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম প্রকল্পের কর্মীরা কৃষি, মাশরুম চাষ, ভার্মি কম্পোস্টিং, মিয়াওয়াকি বনের রক্ষণাবেক্ষণের মতো বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছেন। লক্ষ্য করার বিষয় হল এই কাজের মাধ্যমে পঞ্চায়েত যথেষ্ট রাজস্ব পাচ্ছে। তামিলনাড়ুর অন্যান্য পঞ্চায়েতের জন্য রোল মডেল থাট্টট্টি পঞ্চায়েতের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে কৃষি জাগরণ দল সরাসরি থাট্টি পঞ্চায়েতে গিয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ 1 কেজির দাম 800 টাকা, চাষ পদ্ধতি এবং বিক্রির মন্ত্র দিলেন এই কৃষক
এই মডেল নিয়ে পঞ্চায়েত সভাপতি বলেন, আমাদের পঞ্চায়েতে প্রচুর পরিত্যক্ত জমি রয়েছে। এটিকে উপযোগী করার ধারণাটি দীর্ঘদিন ধরে ছিল। এইভাবে, আমরা এখন 1.5 একর জমিতে সব্জি চাষ করছি। স্বল্প মূল্যে, পঞ্চায়েত সাধারণ জনগণকে এই সবজি সরবরাহ করছে, এবং এর মাধ্যমে, পঞ্চায়েত প্রতি মাসে 5000 টাকা পর্যন্ত আয় করছে।
মিয়াওয়াকি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের অধীনে সেমারাম, মেহগনি, সেগুন, হুইপ, ওয়াটার মারুডু, ভেঙ্গাই, কালো মারুডু, কুমুল সেগুন, রোজউডের মতো 10 প্রজাতির প্রায় 1000 গাছ জন্মাচ্ছে। এ জন্য শহর বাসিদের চারা দান করা হয়। এতদিন তাঁরা পাড়ার মন্দিরের কাছে, রাস্তার ধারে চারা রোপণ করেছে। তাঁদের আশ্বাস অল্প সময়ের মধ্যে পঞ্চায়েত এর থেকে আয় পেতে শুরু করবে।
পঞ্চায়েত সভাপতি জানান, “আমরা 8 একর ফলের জাত চাষ করেছি। বর্তমানে আমরা পেয়ারা, আম, কাঁঠাল, লেবু, কলা ও নারিকেল চাষ করছি। আগামী বছর যেভাবেই হোক আম গাছ থেকে আয় দেখা শুরু করব। এসব কৃষি কার্যক্রমের মধ্যে আমরা মাশরুম চাষেও উদ্যোগী হয়েছি। এখন আমরা ঝিনুক চাষ করছি, এবং আমরা অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য ধরনের মাশরুম চাষ করার পরিকল্পনা করছি এবং প্রতি মাসে 3000 টাকার বেশি আয় করব। তিনি বলেন, "আমরা মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের পঞ্চায়েতের মহিলা স্বনির্ভর কমিটি থেকে 2 জনকে পাঠিয়েছি।"
এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে পঞ্চায়েত সভাপতি জানান, আগামী কয়েক বছরে তাঁরা ৫০-৬০ কেজি সব্জি ফলাতে সক্ষম হবেন। এই সব্জি কম দামে বিক্রির জন্য পঞ্চায়েতে একটি সাপ্তাহিক বাজার করা হবে।
প্রসঙ্গত এই পঞ্ছায়েতের ১০০ দিনের কর্মীদের কাজ না করার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু আজ পঞ্ছায়েতের পরিকল্পনায় তাঁরা স্বনির্ভর। MGNREGS কর্মীরা মনোযোগ সহকারে কৃষি কাজ করছে। দেশের প্রতিটি পঞ্চায়েতকে এইভাবেই পরিকল্পনা করা উচিত। যাতে পঞ্চায়েতের রাজস্ব বৃদ্ধি পায় এবং রুজি রোজগারের পথও দেখা যায়।