পশ্চিমবঙ্গের ফলসমূহে এক নতুন সংযোজন ড্রাগন ফল। এটি মূলত মেক্সিকোর ক্যাকটাস জাতীয় গাছের ফল পাইটোঅ্যালবুমিন নামে এক ধরনের যৌগ এই ফলে আছে, যা মানবদেহের নানা রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া নানা ধরনের খনিজ পদার্থ, যেমন ম্যাঙ্গানিজ, এবং হরেক ভিটামিন আছে ফলটিতে।
মেক্সিকোর ফলের চাষ হচ্ছে বীরভূমে। ড্রাগন নামে দূর্লভ মূল্যবান এই ফলের চাষ দেশের হাতেগোনা কয়েকটি এলাকায় অল্পবিস্তর হলেও বীরভূমে ঢালাও ড্রাগন উৎপাদন করে তা রপ্তানি করা শুরু করে দিয়ে উদ্যোগী অমল কয়াল বুঝিয়ে দিলেন, চেষ্টা থাকলে সুফল মেলে। প্রসঙ্গত, জেলার বক্রেশ্বর এলাকায় প্রথম ড্রাগন চাষ শুরু হলেও উদ্যোগীরা হাল ছেড়ে দেওয়ায় সে প্রকল্প সফল হয় নি।
- ক্যাকটাস জাতীয় এই ফল সুমেরু এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়, বিশ্ব জুড়ে এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম পিটায়া। পরবর্তীকালে মেক্সিকো এবং থাইল্যান্ডে এর সফল চাষ হয়। কিছুদিন হলো বাংলাদেশের মাটিতেও এর চাষ কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে।
- ক্যাকটাস জাতীয় এই ফল সুমেরু এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়।
- ড্রাগন ফল চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক মূল্যবান সম্পদ। মিষ্টি স্বাদের এই ফল রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি রক্তচাপও সঠিক রাখে। বাত নিরাময়, হার্টের সমস্ত ধরনের রোগ প্রতিরোধ, কোলেস্টেরল নির্মূল করা ছাড়াও অ্যান্টি ফাংগাল, অ্যান্টি বায়োটিক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে ড্রাগনের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে ছিলই। এবার প্রোস্টেট ক্যানসারেও চিকিৎসকরা ওষুধ হিসেবে ড্রাগন ফলের ব্যবহার শুরু করলেন।
- ইতিমধ্যেই টক্সিন প্রতিরোধক হিসেবে ড্রাগনের বিরাট অবদান রয়েছে, এবার তার সূত্র ধরে ড্রাগন ফলে পাওয়া বিভিন্ন যৌগকে কাজে লাগিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে বিদেশে ইতিমধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ত্বকের এবং চোখের জটিল রোগে ড্রাগন ফলকেই বহু দেশ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। পাইটোঅ্যালবুমিন নামে এক ধরনের যৌগ এই ফলে আছে, যা মানবদেহের নানা রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া নানা ধরনের খনিজ পদার্থ, যেমন ম্যাঙ্গানিজ, এবং হরেক ভিটামিন আছে ফলটিতে।
- কিন্তু ভারতবর্ষে ড্রাগন ফলের উৎপাদন নামমাত্র, এবং এই ফলের ব্যবহার সম্বন্ধে সাধারণের ধারনাও খুব কম। তবু বীরভূমের চরিচা এলাকায় চলতি বছর এত পরিমান ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়েছে যে তা কলকাতার নিউ মার্কেটের ফল বাজার বা জগুবাবুর বাজারে রপ্তানী করা হয়েছে, যেখানে ৭৫০/৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ড্রাগন ফল।
- লতানো ক্যাকটাসের মতন ড্রাগনের গাছে ফল আসে মে মাসে, ফলন হয় নভেম্বর মাস পর্যন্ত। পর্যাপ্ত রোদ, জল, জৈব সার এবং নিয়মিত পরিচর্যায় আসে বাহারী ফুল, তারপর সেই ফুল থেকে ধরে লোভনীয় রঙের ড্রাগন ফল।
বীরভূমের চরিচার বাসিন্দা অমলবাবু এই ফল চাষের জন্য বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সম্মান ও শিরোপা প্রদান করা হয়েছে। রাজ্যের এবং দেশের মধ্যে ড্রাগনের মতন ফলের চাষ করে নিঃসন্দেহে নজির গড়েছেন অমলবাবু। আগামীতে শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের সব বড় শহরে যোগান বা চাহিদা অনুযায়ী বিদেশেও বীরভূমের ড্রাগন ফল রপ্তানী হতে চলেছে।