কৃষিজাগরন ডেস্কঃ পড়াশোনা করেছেন, ডিগ্রিও আছে অথচ চাকরী নেই এমন ঘটনা আজকাল আকছাড় দেখা যায়। এমন বহু শিক্ষিত যুবক-যুবতী আছেন যারা চাকরী না পেয়ে প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন আজকের আত্মনির্ভর ভারতে। কেউ পরিবার বাঁচানোর জন্য কেউ বা আবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে। তবে আজকের ঘটনা সবাইকে চমকে দিতে পারে। কিভাবে একজন যুবক দু-পা দিয়ে ট্র্যাক্টর চালিয়ে অন্ন সংস্থান করছেন তা আজকের দিনে এক দৃষ্টান্ত স্বরুপ। আধুনিক ভারতের ইতিহাসে এ ঘটনা সত্যিই নজীরবিহীন।
ট্রাক্টর চালিয়েই তাঁর সংসার চলে।পূর্ববর্ধমানের রায়নার বাসিন্দা সুজিত দাঁ। জন্মদেবার পর এক পলক দেখেই জ্ঞান হারিয়েছিলেন তাঁর মা। কারণ, সদ্যোজাতের দুটি হাতই তো নেই। জ্ঞান ফেরার পরই সুজিত বাবুর মাকে অনেকেই বলেছিলেন, যে দুটো হাত নেই এমন ছেলেকে রেখে কি করবি? এ ছেলে বড় হয়েই বা কি করবে? সারা জীবন একটা বোঝা হয়েই থেকে যাবে। কথাতেই আছে নাড়ী ছেঁড়া ধন, তাই জন্মদাত্রী মা কারোর কথায় কান না দিয়ে নিজের সদ্যজাতকে অতি আদর যত্নে কোলে তুলে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের রাসায়নিক মুক্ত খাবার খাওয়াতে চাষবাস শুরু করলেন মা...গল্পটি খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক
সুজিত ছোটো থেকে পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলেন। সুজিতের ডিগ্রিও আছে, সে আইটিআই পাশ করেছেন। দীর্ঘদিন কাজের চেষ্টা করেও কাজ মেলেনি। সুজিত বুঝে নেয় ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট বেঁচে থাকার রসদ নয়। তাই নিজের পরিবার কে বাঁচাতে ট্র্যাক্টর চালিয়ে অন্ন সংস্থান করছেন তিনি। রায়না বিধানসভার প্রত্যন্ত গ্রাম উচালনে সুজিতের বাড়ি। অল্প বয়সেই সুজিত তাঁর বাবা স্বপন দাঁকে হারান। সুজিতের মা পুতুল অনেক কষ্ট করে তাঁকে মানুষ করেছেন।
সুজিত বলেন, ছোটো থেকে মাকে দেখে বুঝেছি হার না মেনে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়। তবে আমার গ্রামের মাস্টারমশাই শক্তিপদ ভট্টাচার্য ছোটো থেকে পায়ে পেনসিল গুঁজে দিয়ে যদি না শিক্ষা দিতেই তাহলে কোনো ভাবেই পড়াশুনার লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারতাম না। স্যারের জন্য আমি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। তারপর আইটিআই সার্ভে ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পূর্ণ করেছি। তারপরই সুজিত বলে ২০১১ সালে ডিভিসির চাকরির পরীক্ষায় বসে ছিলাম এবং পাশ করেছিলেন। চাকরির প্যানেলে তাঁরও নাম ছিল। কিন্তু ওই বছরই বদলে গিয়েছিলো রাজনীতির রঙ। ফলে শেষমেশ চাকরিটা আর হল না।
ট্র্যাক্টর চালানোর প্রসঙ্গে সুজিত বলেন, ছোটো থেকে যেভাবে পায়ের আঙুলের মধ্যে পেনসিল গুঁজে লিখতে শিখেছিলাম। ওই ভাবেই দু পা দিয়ে ধরে নিলাম ট্র্যাক্টরের স্টিয়ারিং। তিনি এখন ট্র্যাক্টর চালানোর পাশাপাশি ধানের ব্যবসা শুরু করেছেন। সব কিছুই যেন দু পায়ের খেল।