সাধারণত কৃষকরা ঐতিহ্যবাহী কৃষিকার্যে বিশ্বাসী। তবে অনেক কৃষকই প্রথাগত কৃষিকাজের বাইরে আধুনিক এবং নতুন কিছু জানতে আগ্রহী। প্রচলিত পদ্ধতিতে সাধারণ গমের চাষ তো অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু এখন অনেক কৃষক কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কারণ চাষ করে তারা দেখেছেন, এই কৃষ্ণ বর্ণের গমের চাষ তাদের জন্য বেশ লাভজনক। সাধারণ গমের তুলনায় বেশী ফলন এবং বিক্রয় মূল্যও অধিক এই গমের। কৃষকদের কাছে এই গমের চাষ সোনার চাষের সমান হতে চলেছে।
বিভিন্ন জেলার কৃষকরা এই গমের আবাদ শুরু করেছেন এবং সফলতা পেয়েছেন-
সম্প্রতি কৃষ্ণ বর্ণের গম দেখা যাচ্ছে অনেক কৃষকের জমিতে। উত্তর প্রদেশের বদায়ুন জেলায় কৃষকরা প্রথমবারের মতো কালো গমের চাষ করেছেন। এই জাতটি ৭ বছর কঠোর পরিশ্রমের পরে তৈরি করা হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক রবি মরসুমে গম চাষ করেন। এর আবাদে অনেক উন্নত জাত বপন করা হয়। বিজ্ঞানীদের দ্বারা উদ্ভাবিত কৃষ্ণ বর্ণের গমের চাষ কেবল কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করবে না, মানুষকে মারাত্মক রোগ থেকেও বাঁচাবে।
সংবাদ মাধ্যম অনুসারে, নরেশ কুমার শর্মা নামে একজন কৃষক বদায়ুন জেলার তহশিল বিসৌলির মোহাম্মদপুর গ্রামে কৃষ্ণ বর্ণের গম চাষ করেছেন। এই গমের চাষ করে তিনি অর্ধ বিঘা ক্ষেত থেকে ২ কুইন্টাল ফসল পেয়েছেন।
অন্য আর এক রাজ্যের কৃষক বিনোদ চৌহান তার ২০ বিঘা জমিতে কালো গম বপন করেছিলেন। তার জমিতে এবার বাম্পার ফসলের ফলন হয়েছে। এতে তিনি প্রভূত খুশি হয়েছেন, কারণ এই বিরল কালো গমের ক্রেতা অনেক। পার্শ্ববর্তী ১২ টি রাজ্যের ক্রেতার কাছে তিনি ফসল দিচ্ছেন।
নতুন বর্ণের গম -
কালো গম পিষে ময়দার রঙ কালো ও সাদা হওয়ায় এই আটার রটি গোলাপি বর্ণের হয়। কৃষক নরেশ কুমার শর্মা প্রথম কালো গমের চাষ করেন। তিনি মধ্য প্রদেশের খারগোন থেকে কালো গমের বীজ নিয়ে ফসল প্রস্তুত করেছিলেন।
আরও পড়ুন -Periphyton based aquaculture: মাছ চাষে পেরিফাইটন পদ্ধতিতে উৎপাদন বাড়বে তিনগুন
কালো গম গবেষণা(Wheat New Species)-
ন্যাশনাল এগ্রি ফুড বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট নবী মোহালি পাঞ্জাব, এই প্রজাতির গমের গবেষণা করেছে। কৃষিবিদ ডঃ মনিকা গর্গ ২০১০ সাল থেকে গবেষণা শুরু করেছিলেন। এর পরে, কালো গম প্রস্তুত করা হয়েছে, তাই এই গমের নামও রাখা হয়েছে নবী এমজি। এখন অনেক কৃষক কালো গমের চাষ শুরু করেছেন।
কালো গম অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে(Health benefit)-
বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণ গমের চেয়ে কালো গম বেশি পুষ্টিকর। এই গম মানুষকে অনেক মারাত্মক রোগ যেমন, ক্যান্সার, সুগার, কোলেস্টরল, হৃদরোগ, স্ট্রেস রক্ষা করতে পারে।
কৃষকদের জন্য উপকারী(Huge Profit)-
কৃষক যদি কালো গম চাষ করেন, তবে এটি তার পক্ষে খুব উপকারী হবে। একদিকে কৃষক ভাল দামে গম বিক্রি করতে পারবেন, অন্যদিকে তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। এই কৃষ্ণ বর্ণের গম কমপক্ষে প্রতি কুইন্টাল ৩,৫০০ টাকায় বাজারে বিক্রি হয়। গবেষণা কেন্দ্র শীঘ্রই বাজারে কালো গমের সংস্থাগুলি চালু করতে চলেছে। এর পরে এটি বাজারে বিক্রি শুরু হবে।
বিনোদ তার ২০ বিঘা জমিতে মোট পাঁচ কুইন্টাল কালো গম বপন করেছিলেন। বিনিময়ে, ২০০ কুইন্টাল গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার তা বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। কালো গম সাধারণ গমের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। এতে অতিরিক্ত পরিমাণে আয়রনও রয়েছে। উচ্চ গুণমান এবং গুণাবলীর কারণে এটি সাধারণ গমের তুলনায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। এই গম বিক্রি করে কৃষকরা ধনী হয়ে উঠছেন।
কৃষি বিজ্ঞানীরা এখনও গবেষণা করে চলেছেন। বাজারে এখনও ব্যাপক হারে এটি আসেনি। কোন কৃষক যদি এর চাষ করতে চান, তবে কৃষি বিজ্ঞানীদের সহায়তায় তা করতে পারেন। সাধারণ শস্য চাষের তুলনায় এতে কৃষকের অনেকটাই মুনাফা হবে।
আরও পড়ুন -Worm control in agricultural field: জেনে নিন কৃমির উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষার উপায়