বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চিনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান | প্রায় ১৯ বছর সৌদি আরবে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। প্রবাস জীবনে থেকে চাকরি করে তিনি যে টাকা উপার্জন করতে পারেননি তা তিনি পেয়েছেন এই কৃষিকাজে যোগ দিয়ে | কৃষিকাজে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি দেশে ফিরে আসেন ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি | ২ বছর আগে থেকে তিনি গ্রিন মাল্টা চাষ শুরু করেন আর বর্তমানে তিনি লাখ টাকার বেশি উপার্জন করছেন এই কৃষি থেকে |
কিভাবে তিনি চাষ শুরু করেন(How he started farming)?
বাড়ির পাশে পতিত জমি থাকায় মাল্টা চাষের পরিকল্পনা নেন তিনি। ওই বছরের জুন মাসে এই মাল্টা চাষ শুরু করতে পরামর্শ নিতে ছুটে যান বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে। তখন আব্দুর রহমানকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে স্থাপিত ‘মাল্টা ব্লক প্রদর্শনী’ নামে ২০০ গ্রিন মাল্টা গাছের চারা হাতে তুলে দেন কর্মকর্তারা |
মাল্টা বাগানের ভালোমন্দ দেখাশোনার দায়িত্বও দেয়া হয় একজন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তাকে। আব্দুর রহমান এই সহযোগিতা পেয়ে খুবই আগ্রহের সাথে বাগানের কাজ শুরু করেন। অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন ধনপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামছুল আলম বিধু।
আরও পড়ুন -Magur Fish Farming: দেশি মাগুর মাছ চষে বিপুল অর্থ উপার্জন করুন
মাল্টা গাছ রোপণের সাথে সাথে মাটি ভরাটসহ বাগানের চারিদিকে নিরাপত্তা রক্ষায় বেষ্টনি নির্মাণ করেছেন আব্দুর রহমান। বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে তার লাখ টাকার উপরে। এই খরচের চিন্তা তার মাথায় রেখে নানা কৃষি উৎপাদন কৌশল কাজে লাগিয়ে মাল্টা বাগানের ভেতরে সবজি চাষ করেছেন। প্রথম বছর সবজি চাষে ভালো লাভ হয়েছে। বর্তমানে সারাবছর বাগানের মাল্টা গাছের ফাঁকে ফাঁকে শসা, ঢেঁড়স, মরিচ, টমেটো, লাউ ইত্যাদি চাষ করে অনেক ফসল উৎপাদন করছেন। এই সবজি বিক্রি করেও ভালো টাকা পাচ্ছেন।
মালটা চাষে লাভ(Profits):
২ বছর আগে রোপণকৃত তার মাল্টা বাগানে ১৪০টি গাছে কাঁচা পাকা মাল্টা ঝুলে আছে। ফলের ভারে গাছ নুয়ে পড়ছে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে আটকে রেখেছেন। প্রতিটি গাছে মাল্টা ধরেছে অন্তত ৩০ কেজি করে। প্রতি কেজি পাইকারি হারে বিক্রি করা যায় ১৪০ টাকা দরে। বাজারে খুচরা প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। এই হিসেবে তার বাগান থেকে প্রতিবছর অন্তত ৬ লাখ টাকার মাল্টা পাইকারি হারে বিক্রি করতে পারবেন।
মাল্টা বাগানে এখন তার কোনো খরচ নেই। ফল ধরবে বছর বছর। এছাড়াও সবজি বিক্রি করতে পারবে বছরে প্রায় ২ লাখ টাকার। মাল্টা চাষকে আরও সমৃদ্ধ করে বছরে অন্তত ২০ লাখ টাকা উপার্জনের পরিকল্পনা রয়েছে চাষি মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের। রসে ভরা এই গ্রিন মাল্টা অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুঘ্রাণ রয়েছে। চাষি আব্দুর রহমানের আনন্দে আনন্দিত কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা | এখন সরেজমিনে এসে দেখে আনন্দিত হয়েছি। পাহাড়ের কাছাকাছি এতো সুন্দর একটি বাগান মন চায় বাগানে বসে থাকি। মাল্টা চাষের উপযোগী মাটি থাকায় চাষি আব্দুর রহমানের এই মাল্টা বাগানে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া বলেন, চাষি আব্দুর রহমানকে মাল্টা চাষ করার জন্য আমরা ২ বছর আগে চারা দিয়েছিল। এখন আব্দুর রহমানের বাগানে মাল্টা ধরেছে। খুবই সুস্বাদু গ্রিন মাল্টা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস বলেন, তিনি যখন ওই উপজেলায় ছিলেন তখনই বিদেশ থেকে ফিরে আসা ধনপুরের চাষি আব্দুর রহমানের এই মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখে তাকে ২০০ গ্রিন মাল্টার গাছ দিয়েছিলেন।
তার এই লাভজনক চাষ দেখে অন্যান্য চাষীরাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং বহু বেকার যুবক-যুবতীও এগিয়ে এসেছেন | এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও উন্নতি ঘটবে ব্যাপকভাবে |
আরও পড়ুন -Pomegranate Farming: বেদনা চাষে লাখ টাকা উপার্জন সফল চাষী মোকাররমের