এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 1 January, 2021 5:30 PM IST
Lemon Tree (Image Credit - Google)

সমগ্র বিশ্বে উৎপাদনের দিক থেকে ভারতবর্ষ পাতিলেবু উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে। অন্ধপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গুজরাট, বিহার এবং হিমাচল প্রদেশ পাতিলেবু উৎপাদনে বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। বিশেষজ্ঞের মত অনুযায়ী, এর চাষ করে কৃষক বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এই পাতিলেবু চাষ করে আজ সাফল্য লাভ করেছেন কৃষক কিশোর সিংহ।

কীভাবে আমাদের অন্যান্য কৃষকবন্ধুরা এর চাষে অতিরিক্ত লাভ করতে পারেন, সেই সম্পর্কে আজ আমরা তথ্য প্রদান করতে চলেছি। কৃষকদের জন্য রইল এর চাষ পদ্ধতি-

চারা লাগানোর সময়ঃ

প্রতিবছর ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাস এবং জুন-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পাতি লেবু গাছের চারা লাগানো যায়।

চারা লাগানোর পদ্ধতিঃ (Plantation method) -

পাতিলেবুর চারা ৪-৬ মিটার দূরত্বে মূল জমিতে লাগানো যেতে পারে। মধ্য ভারতের মাঝারি ধরনের মাটিতে পাতিলেবু ৫.৫-৬ মিটার দূরত্বে লাগানো হয় এবং অগভীর মাটিতে ৪-৪.৫ মিটার দূরত্বে লাগানো হয়ে থাকে। দেখা গিয়েছে উত্তরভারতের গাঙ্গেয় সমভূমিতে দুটি গাছের মধ্যে আদর্শ দূরত্ব ৬.৫ মিটার। খুব কম দূরত্বে (High density orchard) গাছ লাগাতে চাইলে ৩ × ৩ মিটার দূরত্ব অবলম্বন করে চারা লাগানো যেতে পারে, কিন্তু, ৮-১০ বছর পর মাঝখান থেকে একটি করে গাছের সারি কেটে সাফ করে দিয়ে বাকি গাছের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।

 চারা লাগানোর জন্যে গর্ত খোঁড়া এবং ভর্তি করার পদ্ধতিঃ -

চারা লাগানোর আদর্শ সময় হল জুন থেকে ডিসেম্বর মাস। চারা লাগানোর পূর্বে জমিতে ৭৫ × ৭৫ × ৭৫ সেন্টিমিটার গর্ত খুঁড়তে হবে। সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহ আগে গর্ত করে তৈরি করে রাখা হয়।  গর্ত খোঁড়ার পর অন্তত ১৫-২০ দিন ওই গর্ত গুলোকে উন্মুক্ত ফেলে রাখা হয়। এরপর চারাগুলিকে ৫-৬ মিটার দূরত্বে এই গর্তগুলোতে বসাতে হবে।

জৈব এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারঃ (Fertilizer application)

কোন গাছে কতটা সার দিতে হবে সেটা সাধারণত জমির প্রকৃতি,  মাটির উর্বরতা শক্তি, এলাকা এবং কোন ধরনের জাত ব্যাবহার করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। গাছের প্রয়োজনীয় সার সব সময় জৈব এবং অজৈব সারের মাধ্যমে প্রয়োগ করা উচিত। জৈবসার প্রয়োগ করলে লেবুজাতীয় ফলের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় বিশেষ করে। জমির উপরে সবসময় জৈবসার প্রয়োগ করলে মাটির গঠন এবং ভৌত প্রকৃতি খুবই ভালো থাকে।

সমস্ত গাছের সম্পূর্ণ নাইট্রোজেনের চাহিদা গোবর সার (২৫%), তেল-খৈল (২৫%) এবং রাসায়নিক সারের (৫০%) পূরণ করতে হবে। ফসফরাস (P) এবং পটাশিয়াম (K) যথাক্রমে সুপার ফসফেট এবং সালফেট অফ পটাশ অথবা মিউরিএট অফ পটাশ এর মাধ্যমে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

একটি পূর্ণবয়স্ক পাতিলেবু গাছে বছরে ৫০ কেজি গোবর সার,  ৯০০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ২৫০ গ্রাম  ফসফেট এবং ৫০০ গ্রাম পটাশ অবশ্যই দিতে হবে। পুরো পরিমাণ গোবর সার এবং ফসফেট, অর্ধেক পরিমাণ নাইট্রোজেন এবং পটাশ   বর্ষার প্রয়োগ করা হয়।  বাকি অর্ধেক নাইট্রোজেন এবং পটাশ গাছে ফুল আসার পর অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রয়োগ করা হয়। 

আমাদের দেশে পাতিলেবু তে সাধারণত গাছের গোড়ায় গোলাকার রিং বানিয়ে তারমধ্যে সার প্রয়োগ করা হয়। পাতি লেবুর গাছের শিকড় মাটির ভেতরে খুব বেশি গভীরে বিস্তৃত হয় না বেশিরভাগ শেখ মাটির উপরিভাগ থেকে ৪৫-৬০ সেন্টিমিটার এর মধ্যেই অবস্থান করে। 

বছরে তিনবার (মার্চ, জুলাই এবং অক্টোবর মাসে) গাছের কচি পাতা বেরোনোর সময় ০.৫% হারে (৫০০ গ্রাম/ ১০০ লিটার জলে গুলে)  জিংক সালফেট কাছে গাছে স্প্রে করা অত্যন্ত জরুরি।

 জলসেচ ব্যবস্থাঃ

পাতিলেবু গাছে গ্রীষ্মকালে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে, তবে শীতকালে ১০-১৫ দিন অন্তর সেচ যথেষ্ট। তবে, কখন গাছে জল দিতে হবে সেটা নির্ধারণ করার পূর্বে মাটির মধ্যে আর্দ্রতার পরিমাণ যাচাই করে নেওয়া উচিত।  যদি মাটির উপরিভাগ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত মাটিতে কোন আর্দ্রতা না থাকে সেক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ  জলসেচের ব্যবস্থা করা উচিত।

আগাছা দমনঃ (Weed management)

গাছের গোড়ায় আগাছা দমন খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।  সাধারণত লেবু গাছে লেবু বাগানে আগাছা দমন করার জন্য Monouron, Diuron এবং Gramoxone নামক আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়। Diuron প্রতি ৫০০ লিটার জলের মধ্যে ২-৩ কেজি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে অন্তত ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূর থেকে স্প্রে করতে হবে। এই আগাছানাশক প্রয়োগ করলে এটি প্রায় ১০ সপ্তাহের জন্য আগাছা কে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। আগাছা বেরিয়ে যাবার পর তার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Gramoxone + Diuron -এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এই মিশ্রণটি দ্বিবীজপত্রী আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কার্যকর। ৩ কেজি Diuron -এর সাথে ১.৫ কেজি Gramoxone -এর মিশ্রণ প্রতি তিনমাস অন্তর প্রয়োগ করলে তা পাতিলেবু গাছের বাগানে খুব সাফল্যের সাথে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও আগাছা বেরিয়ে যাবার পর হেক্টর  প্রতি ২  কেজি গ্লাইফোসেট (Glyphosate) ব্যবহার সব থেকে বেশি কার্যকরী।

সাথী ফসলঃ

চারা লাগানোর পর প্রথম ৪-৫ বছর গাছের মাঝের ফাঁকা জায়গায় অন্যান্য সাথীফসল লাগিয়ে বেশ কিছুটা উপরি রোজগার করা সম্ভব। যতদিন গাছে ফলন না ধরেগাছের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং শিম্ব-গোত্রীয় ফসল চাষ করা যেতে পারে। শিম্ব-গোত্রীয় ফসল চাষের ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং তা গাছের সুষম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শিম্ব-গোত্রীয় উদ্ভিদ (যেমন,  বার সিম,  বরবটি,  বাদাম,  বিন্স জাতীয় সবজি)  লেবুবাগান লাগানো যেতে পারে। এছাড়াওগ্রীষ্মকালে  অন্যান্য সবজি যেমন কুমড়ো,  পেঁয়াজ,  মসুরডালএবং শীতকালে গাজর ফুলকপি বাঁধাকপি মাঝখানে ফাঁকা জায়গা গুলিতে উৎপাদন করা সম্ভব।  এছাড়াও গাঁদা ফুল মাঝখানে সাথী ফসল হিসেবে বেশ কার্যকরী।

আরও পড়ুন - ড্রাগন ফ্রুট চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূমের বাসিন্দা অমল কয়াল (Dragon Fruit Farmer Got Success)

English Summary: Kishore Singh got success by cultivating lemons, you can earn up to Rs 2 crore a year through lemon cultivation
Published on: 01 January 2021, 05:30 IST