আজ সিপাহী বিদ্রোহের নেতা মঙ্গল পান্ডের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মূলত তাঁর হাত ধরেই ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ সিপাহীদের প্যারেড ময়দানে প্রথম ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন সিপাই মঙ্গল। তবে বিকেলের মধ্যে ইংরেজদের কাছে এই খবর পৌঁছে যায়। বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সেনাপতির সহকারী লেফটেন্যান্ট বৌগ Lieutenant Baugh) জানতে পারেন যে ব্যারাকপুরে বেশ কয়েকজন সিপাহী উত্তেজিত অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরও জানতে পারেন যে মঙ্গল পাণ্ডে নাম এক ব্যাক্তি গাদা বন্দুক-সহ প্যারেড ময়দানে সেনাবাহিনীর প্রহরী কক্ষের সামনে রয়েছেন যিনি সিপাহী বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন এবং প্রথম একজন ইউরোপীয়কে গুলি করার হুমকি ও দিয়েছেন।
ইতিহাসের সিপাহী বিদ্রোহ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ বিদ্রোহ পরবর্তীতে ভারতকে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করেছিল। উপনিবেশবাদী বৃটিশদের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন মঙ্গল পান্ডে। তিনি ভারতীয়দের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ও বীর শহীদ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গল পান্ডের জন্মবার্ষীকিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে একটি টুইট করে বলেন, “মহান মঙ্গল পাণ্ডে সাহস ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক। আমাদের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে তিনি সকলের মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করেছিলেন এবং অগণিত মানুষ তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করি। এ বছরের শুরুতে মীরাটে তাঁর মূর্তিতে আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলাম।”
আরও পড়ুনঃ কৃষকদের দামি কৃষি মেশিন কিনতে হবে না, এখান থেকে ভাড়াও পাবেন
মঙ্গল পান্ডের জন্ম ১৮২৭ সালের ১৯ জুলাই। উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায় নাগওয়া গ্রামে। অনেকের মতে তার জন্ম হয়েছিল ফৈজাবাদ জেলার সুরহুর গ্রামের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে। দিবাকর পান্ডের ঘরে। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৮৪৯ সালে তিনি বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিতে সিপাহী পদে চাকরি নেন। এখানে চাকরি করতে এসে তিনি অনেকরকম বৈষম্য আর অন্যায় দেখতে পান, যা মঙ্গল পান্ডেকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
আরও পড়ুনঃ মুখ্যমন্ত্রীকে বড় দিদির মতো সম্মান করিঃ মিঠুন চক্রবর্তী
১৮৫৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল ৫৫৭ ক্যালিবার এনফিল্ড (পি/৫৩) রাইফেল। এই রাইফেল ভারতীয় সিপাহীদের হাতে তুলে দেয় বৃটিশ সরকার। রাইফেলগুলোর কার্তুজ গরু ও শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি হতো। সৈন্যরা তাদের রাইফেলের কার্তুজ লোড করার সময় তা দাঁত দিয়ে খুলে লাগাতে হতো। গরু ও শুকরের চর্বি মুখে দেওয়া হিন্দু-মুসলিম সৈন্যদের জন্য অধার্মিক ও গর্হিত কাজ। ১৮৫৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে সিপাহীরা (বৃটিশ সেনাবাহিনীতে ভারতীয় সৈন্য) নতুন কার্তুজ ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছিল। এর প্রেক্ষিতে নতুন কার্তুজ প্রতিস্থাপন করার প্রতিশ্রæতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিপাহীদের কাছে এই প্রতিশ্রæতির কোনো মানে দাঁড়াল না।
এ অগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্য বৃটিশ শোসকগোষ্ঠীকে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। সম্মুখীন হতে হয়েছিল সিপাহী বিপ্লবের। আর এই বিপ্লবের শুরুটা করেছিলেন মঙ্গল পান্ডে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম নক্ষত্র হলেন মঙ্গল পান্ডে।