দুধ এবং মাংস-- পুষ্টির জন্য অপরিহার্য এক উপাদান। এই দুই প্রাণিজ উপাদান মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম চাহিদা সম্পন্ন খাদ্য। আমরা ছাগলের মারফত এই দুই উপাদানই পাই। ছাগল মূলত পালন করা হয় মাংস ও দুধ এই দুই উপাদান উৎপাদনের জন্য। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কারণে এই প্রাণীর পালন বর্তমানে বাংলার বহু ঘরে হচ্ছে। বহু কৃষক ও নবাগত চাষ করতে আসা তরুণ এই ছাগল পালনের জন্য বর্তমানে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
ছাগল পালনের বিভিন্ন সুবিধা: (Benefits of Goat rearing)
গ্রামে বহু মানুষ হাইব্রিড ছাগল পালন করে অর্থ উপার্জন করছেন। অত্যন্ত সহজ এই প্রাণী পালন। ছাগল পালন বর্তমানে তাই বহু দরিদ্র মানুষের কাছে এক অন্যতম ব্যবসায়িক মাধ্যম হয়ে উঠেছে। সংকর জাতের ছাগল পালন করার লাভ অনেক বেশি। এই ছাগলের রোগ ব্যাধি অত্যন্ত কম হয়েই এই ছাগলগুলির মাংস অত্যন্ত পুষ্টিকর। ছাগলের দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় এই দুধ শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই খেতে পারে। ছাগলের দুধের চাহিদা থাকার জন্যও এই প্রাণীর পালন আদি কাল থেকে আজও বাংলার বহু ঘরে হচ্ছে।
ছাগল পালনে সাফল্য: (Success)
গ্রামের এক উপজাতীয় মহিলা উদ্যোক্তা সুলোচানা কেন্দুচাপাল। ছাগল পালনে অনেকটা সময় দেওয়ার পরেও তিনি ছাগল থেকে তেমন আয় করতে পারছিলেন না। তার সঙ্গে ছিল ছাগলের মৃত্যু এবং তা পালনে অতিরিক্ত খরচ। সুলোচনা পরে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র এবং স্থানীয় পশুচিকিত্সকদের প্রযুক্তিগত নির্দেশনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছাগল পালন শুরু করেন। তিনি এসজেজিএসওয়াইয়ের আওতায় ব্যাংক থেকে আড়াই লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন এবং সিরোহি ও ব্ল্যাক বেঙ্গলের মতো উন্নত জাতের ছাগল পালন শুরু করেন।
এরপরেই তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জানা গেছে প্রশিক্ষণের পরে নিয়ম করে ছাগলদের ডি-ওয়ার্মিং, টিকাদানের কারণে সুলোচনার পালিত ছাগলগুলির আর মৃত্যু হয়নি।
বর্তমানে সুলোচনা বছরে ৫০,০০০ টাকার বেশি আয় করেন। মাত্র ১০,০০০ টাকা ছাগলগুলি পালনে তাঁকে খরচ করতে হয়েছে। লাভের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায়, সুলোচনা বর্তমানে ভীষণই খুশি এবং আনন্দিত।
জনপ্রিয়তা (Popularity)
ভারত ছাড়াও গোটা বিশ্ব জুড়ে ছাগল পালন অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে ইউক্রেইনের মতো সম্পদশালী দেশেও ছাগল পালন সাফল্যের সঙ্গে হয়ে আসছে। সেখানকার অনেক পরিবার, এই ছাগল পালনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশেও ছাগল পালন অত্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: Organic Farming in Sustainable Agriculture কৃষিব্যবস্থার জন্য অর্গানিক চাষের ভূমিকা
অর্থনৈতিক এবং ব্যবসায়িক দিক থেকে এই ছাগল পালন সেই দেশের অন্যতম এক অর্থকরী ব্যবসা। ঘরে ঘরে এই প্রাণীর পালন বর্তমানে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল পালন করে মোটা টাকা ঘরে তুলছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।
ব্যাঙ্ক থেকেও ছাগল পালনের জন্য বর্তমান ঋণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যাংক এই ঋণ দিয়ে থাকে। সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পর বর্তমানে ছাগল পালন অনেক সহজ হয়ে গেছে। দুধ এবং মাংসের চাহিদা দিনকে দিন বাড়তে থাকায়, বর্তমানে ছাগল লালন এবং পালন বহু মানুষের জীবিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:Milkfish Farming: বাড়ছে মিল্কফিশ চাষ, জেনে নিন এর সহজ চাষ পদ্ধতি