উৎপল রায়, জলপাইগুড়ি, কৃষি জাগরণ: জলঢাকা নদীর বালু চরে রসালো তরমুজ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অধিকাংশ তরমুজ চাষীরা। দীর্ঘ দশবছর ধরে ময়নাগুড়ি ব্লকের জলঢাকা নদীর চরে তরমুজ চাষ করে এসেছেন ওই গ্রামের তিন ভাই। জলঢাকা চরের ধু-ধু বালুতেও সোনা ফলানো যায়-এ কথাটি আবারও প্রমাণ করেছে জলঢাকা নদীর তীরবর্তী এলাকার চাষীরা।
সুস্বাদু ও রসাল তরমুজ চাষ করেছেন জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি-ধূপগুড়ি ব্লকের জলঢাকা নদীর চরের চাষিরা। এ তরমুজ অন্য সব অঞ্চলের তুলনায় বেশি রসাল ও মিষ্টি বলে বাজারের চাহিদাও অনেক বেশি। ভালো ফলনের পাশাপাশি বেশ মুনাফা পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ির তরমুজ চাষীর সংখ্যাও। এ বছর ৩০ জন চাষি প্রায় অর্ধলক্ষাধিক চারা লাগিয়েছেন।
কার্তিক মাসের শেষ দিকে নদীর জল শুকিয়ে গেলে সারিবদ্ধ ভাবে জৈবসার দিয়ে তরমুজের বীজ রোপণ করতে হয়। এরপর নিয়মিত সেচ দিতে হয়। চারা বড় হয়ে বালুতে বিচরণ করে। প্রয়োজন শুধু দৈনিক ২-৩ বার সেচ দিয়ে তপ্ত বালুতে গাছের শিকড় ভিজিয়ে রাখা। পোকার আক্রমণ হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এভাবে চার থেকে পাঁচ মাস পরিচর্যা করলে পাওয়া যায় সুস্বাদু তরমুজ।
আরও পড়ুনঃ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত তামাক! দ্রুত তামাক কাটতে ব্যস্ত জলপাইগুড়ির চাষীরা
তরমুজ চাষী প্রকাশ সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে পাঁচ হাজার চারা রোপন করতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। যে হারে খরচ হয়েছে সে অনুযায়ী কতটা লাভ হবে সেটা এখনো বলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এখনো তরমুজ সেভাবে বিক্রির ক্ষেত্রে উপযোগী হয়ে ওঠেনি, তার আগেই শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে তরমুজ গাছে ধোসার আক্রমণ দেখা দেয়।
আরও পড়ুনঃ হাজারী লেবু চাষে লক্ষাধিক লাভ, মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে শুরু করুন এই চাষ
আরেক চাষী কমল রায় বলেন, শিলা বৃষ্টির কারণে ফলের কিছুটা ক্ষতি হলেও গাছের সে রকম ক্ষতি হয়নি বরং লাভই হয়েছে। প্রতি চারায় নূন্যতম ৪ থেকে ৬টি ফল হয়েছে। এখানকার এক একটি তরমুজ ওজনে ৭ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হয়। এ বছর বাজারের চাহিদা ভালো রয়েছে ১৬ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর শিলাবৃষ্টিতে কিছুটা নষ্ট হলেও ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। এবছর লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
তরমুজ চাষী সন্তোষ ফকির জানান, বালুতে পা রাখা কষ্টকর। সেই তপ্ত বালুতে গাছের শিকড় ভিজে রাখতে দৈনিক দুই থেকে তিন বার করে পানি দিতে হয়। পানির খরচই অনেক বেশি। এ চরের তরমুজ বেশি রসাল ও সুস্বাদু হওয়ায় বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। পাইকাররা শহর থেকে এসে ক্ষেতেই টাকা বুঝে দিয়ে তাদের তরমুজ ক্রয় করে বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দেন।