চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন মাঠে অসময়ে আগাম অটো জাতের ৮০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ করেছে চাষিরা। ফলন আশানুরূপ না হলেও বাজার দরে খুশি শিম চাষিরা। এরইমধ্যে বিক্রি করে অনেক চাষি চাষের খরচ তুলে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছেন। ফলে বদলে গেছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র।
চাষিরা মনে করছেন, অনুকূল পরিবেশ থাকলে আর্থিকভাবে প্রত্যাশার চাইতেও বেশি লাভবান হবেন। চুয়াডাঙ্গায় মোট জমির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদযোগ্য জমি ৭ হাজার হেক্টর।জেলাতে ভুট্টা আবাদের পরপরই সবজি আবাদ বেশি হয়ে থাকে। আবহাওয়া তুলনামূলক অনুকূল এবং উঁচু সমতল জমি হওয়ায় জমিগুলো সবজি চাষের জন্য উপযোগী। ফলে প্রতিবছর কোনো না কোনো প্রকার আগাম সবজির চাষ করে থাকেন জেলার কৃষকরা।
কোথায় চাষ হয়েছে?
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অসময়ে ৮০০ হেক্টর জমিতে আগাম অটো জাতের শিম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৫ হেক্টর, দামুড়হুদায় ৩৭২ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ১৪৫ হেক্টর এবং সদর উপজেলায় ২৩৮ হেক্টর।
কৃষকদের সাফল্যের কাহিনী:
মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪-৫ ফুট উচু বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল অটো জাতের শিম। শিম চাষ এলাকাটিকে সাজিয়েছে সবুজের আবরণে। সকাল-বিকেল চাষিরা তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে শিমের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন।
কৃষক আবু সালেহ জানান, কয়েক বছর ধরে শিম চাষ করছেন তিনি। বর্তমানে ৩ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন তিনি। এ আবহাওয়ায় শিমের ফলন বেশি না হলেও বর্তমানে প্রতি কেজি শিম ১১৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অনেক চাষি আগ্রহী হয়ে শিম চাষ করেছে। ৬ মাস আবাদি শিম চাষের মধ্যে সময় কাটবে। প্রতিবছর শিম বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন চাষিরা। অনেকেই শিম চাষেই জীবন-জীবিকার অবলম্বন হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন -Paddy farming in Haldiya: নোনা জমিতে ধান চাষ, হলদিয়ায় কৃষকদের পাশে বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা
কৃষক আলী কদর জানান, তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। এভাবে বাজার দর থাকলে বিঘাপ্রতি লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন তিনি। এরইমধ্যে কয়েক দফা বিক্রি করে ফেলেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এ দর থাকলে ২ বিঘা জমিতে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার শিম বিক্রি করার প্রত্যাশা করছেন তিনি। আমাদের মতো যারা এ সময়ে শিম চাষ করেছে তারা প্রত্যেকেই লাভবান হবেন।
চাষাবাদ পদ্ধতি (Farming process):
কৃষকরা জানান, তারা এই শিম চাষ করতে হাতে কলমে কোনো প্রশিক্ষণ পাননি। নিজ উদ্যোগেই চাষ করছেন। বর্তমানে শিম চাষের নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি। বীজ লাগানোর পর থেকে ১ বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে বীজ, সার, বাঁশ, শ্রমিক ও সেচ হিসেব করে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল এবং ফল ধরার সময় পোকা দমন এবং পচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ স্প্রে করতে হয়।
৬০ দিনের মাথায় শিম ধরা শুরু হয়। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত শিম বাজারজাত করতে অন্য কোন স্থানে যেতে হয় না। ঢাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে তাদের কাছ থেকে শিম কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও কোনো কোনো কৃষক শিম নিজে তুলে পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করে থাকে। অটো শিম মূলত শীতকালীন সবজি। তবে এখন সারাবছর এর চাষাবাদ হচ্ছে। ভালোভাবে বর্ষা মৌসুমে অটোশিমের বীজ সংগ্রহ করতে পারলে আগামীতে এ শিমের চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। অটো শিম চাষে খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও এ শিমের বাজার দরও বেশি। ফলে কৃষকরাও অটোশিম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আরও পড়ুন -Sesbania grandiflora cultivation process: জেনে নিন বকফুল চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি