হরিয়ানার পালওয়াল জেলায় অবস্থিত কণিকা ডেইরি ফার্ম এবং অর্গানিক ফার্মিংয়ের মালিক ওমভীর তার কঠোর পরিশ্রম এবং দৃষ্টি দিয়ে কৃষি ও পশুপালনে নতুন উচ্চতা অর্জন করেছেন। সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ও জৈব চাষের মাধ্যমে তিনি তার ব্যবসাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। সফল কৃষক ওমবীরের 10 একর জমি রয়েছে যেখানে ধান, মৌসুমি সবজি এবং কিন্নুর চাষ করা হয়, পাশাপাশি 10টি দেশি জাতের গাভী এবং 20টি মহিষ পালন করা হয়।
এই প্রাণীগুলি তাদের দই, ক্রিম, ঘি এবং বাটার মিল্কের মতো জৈব পণ্য উত্পাদন করতে সহায়তা করে। বর্তমানে, ওমবীর জৈব চাষ, উদ্যানপালন এবং দুগ্ধ চাষের মাধ্যমে বছরে 20 লক্ষ টাকারও বেশি আয় করছেন। আসুন তার সাফল্যের গল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
জৈব কৃষি ও পশুপালনের সূচনা
সফল কৃষক ওমবীর ঐতিহ্যবাহী ধান এবং মৌসুমি সবজি চাষের মাধ্যমে তার কৃষি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, কিন্তু শীঘ্রই তিনি জৈব চাষে চলে যান এবং গত পাঁচ বছর ধরে জৈব চাষ করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে জৈব চাষ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ মানের ফসল প্রদান করে। তিনি সার হিসেবে গোমূত্র ও গোবর ব্যবহার করেন, যা শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, ফসলের মানও উন্নত করে। এছাড়াও, ওমবীর তার ক্ষেতে উত্থিত জৈব পশুখাদ্য দিয়ে তার পশুদের পুষ্ট করে, যা তার পশুপালন ব্যবসাকেও শক্তিশালী করেছে।
দুগ্ধ খামার এবং বিভিন্ন পণ্য
সফল কৃষক ওমবীর তার দুগ্ধ খামার ব্যবসায় 10টি দেশি জাতের গরু এবং 20টি মহিষ পালন করেছেন। তারা এসব পশু থেকে প্রাপ্ত উচ্চমানের দুধকে দই, ক্রিম, ঘি ও বাটার মিল্কের মতো পণ্যে রূপান্তর করে বাজারে বিক্রি করে। স্থানীয়ভাবে তাদের পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে। ওমভীর বলেন, দেশি জাতের গরু ও মহিষ থেকে প্রাপ্ত পণ্যে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে।
কাস্টম হায়ারিং সেন্টার: কৃষকদের সাহায্য করার অনন্য প্রচেষ্টা
সফল কৃষক ওমবীর, চাষের চ্যালেঞ্জগুলি বুঝতে পেরে, কৃষকদের সাহায্য করার জন্য একটি কাস্টম হায়ারিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে তারা ভাড়ায় সুপার সিডার, ট্রাক্টর, বেলারের মতো আধুনিক কৃষি মেশিন সরবরাহ করে। এই পরিষেবাটি 15 থেকে 20 কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে, যার কারণে আশেপাশের কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। এই প্রচেষ্টার জন্য, তারা সরকারের কাছ থেকে 80% ভর্তুকিও পেয়েছে, যার কারণে কৃষকরা সাশ্রয়ী মূল্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি পাচ্ছেন। এই উদ্যোগ কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম কমাতে এবং তাদের ফলন বাড়াতে সহায়ক প্রমাণিত হচ্ছে।
কিন্নুর বাগান ও আন্তঃফসলের মাধ্যমে লাভ বেড়েছে,
ওমবীর কিন্নুর চারা পেয়েছেন, যার বাগান থেকে তিনি প্রচুর লাভ পাচ্ছেন। তিনি কিন্নুর বাগানে আন্তঃফসল পদ্ধতি অবলম্বন করেন, যার কারণে তিনি একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করতে সক্ষম হন। এই পদ্ধতিতে শুধু তাদের ফসল উৎপাদন ক্ষমতাই বৃদ্ধি পায়নি, তাদের আয়ের উৎসও বেড়েছে বহুগুণ।
ড্রিপ সেচ এবং খড় ব্যবস্থাপনা
সফল কৃষক ওমবীর তার ক্ষেতে সেচের জন্য ড্রিপ সেচ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন, যা জল সংরক্ষণ করে এবং ফসলে সঠিক পরিমাণে জল সরবরাহ করে। এ জন্য তিনি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকিও পেয়েছেন। এছাড়া ফসল তোলার পর খড় জ্বালিয়ে না দিয়ে বেলারের সাহায্যে সংগ্রহ করে পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে তারা। তিনি বিশ্বাস করেন যে খড় পোড়ানো শুধুমাত্র পরিবেশের ক্ষতি করে না বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদও নষ্ট করে। তার পদক্ষেপ অন্যান্য কৃষকদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং তারাও খড় ব্যবস্থাপনা গ্রহণ শুরু করেছে।
সম্মান ও পুরস্কার
সফল কৃষক ওমবীরের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা তাকে জেলা এবং রাজ্য স্তরে অনেক পুরস্কার জিতেছে। তার সাফল্যের সবচেয়ে বড় রহস্য পশুপালন এবং জৈব চাষে তার দক্ষতা বলে মনে করা হয়, যা তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাকে কেবল শক্তিশালীই করেনি বরং একজন সফল কৃষক হিসেবেও তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এমতাবস্থায় বলা যায়, কণিকা ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড অর্গানিক ফার্মিংয়ের মালিক ওমবীর তার কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আধুনিক কৌশলে ঐতিহ্যবাহী কৃষিকে নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার কাস্টম নিয়োগ কেন্দ্র, জৈব চাষে অনন্য প্রচেষ্টা, পশুপালন এবং খড় ব্যবস্থাপনা অন্যান্য কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।