হৃদয়ে যদি কঠোর পরিশ্রম, আবেগ এবং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা থাকে তবে একজন ব্যক্তি যে কোনও অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে পারেন। প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা শান্তি এবং শক্তি নিয়ে আসে, যা প্রতিটি চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়। একই ধরনের গল্প বিহারের মুজাফফরপুর জেলার বাংড়া বাঁসিধর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মনোজ কুমারের, যিনি আধুনিক ও প্রাকৃতিক পদ্ধতির সঠিক ব্যবহারে সবজি চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন। ৪৮ বছর বয়সী এই কৃষক মনোজ কুমার মুলা, বাঁধাকপি, ধনে, গম এবং ধান চাষ করেন। মনোজ দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে এবং সে পারিবারিকভাবে কৃষিকাজ করছে। এক একর জমি থেকে দুই একরের সমান ফলন পেয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন এই কৃষক।
আসুন কৃষি জাগরণ-এর এই নিবন্ধে প্রগতিশীল কৃষক মনোজ কুমারের সাফল্যের গল্প জানি।
কৃষিকাজের জন্য জমি ও ফসল
কৃষি জাগরণের সাথে আলাপকালে কৃষক মনোজ জানান, তিনি গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কৃষিকাজ করছেন এবং তার চাষের জন্য ৪ একর জমি রয়েছে, যার মধ্যে ২ একর জমি ধান ও গম, ১ একর সবজি। এবং ১ একর জমিতে মূলা চাষ করা হয়। কৃষক জানান, তিনি মূলত মুলা চাষ করেন। বিভিন্ন জাতের মুলা চাষ করে ভালো লাভ পাচ্ছেন তিনি।
সোমানি ক্রস X- 35 মূলা চাষ
কৃষক মনোজ কুমার জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের মুলার চাষ করছেন, তবে তিনি সোমানি ক্রস এক্স-৩৫কে সেরা জাত হিসেবে পেয়েছেন। তিনি এক একর জমিতে শুধুমাত্র ক্রস X-35 মূলা চাষ করেন। তিনি জানান, এই জাতের মুলা তৈরি হতে সময় লাগে মাত্র ২৮ দিন এবং এটি লাগাতে খুব বেশি খরচ হয় না। বাজারে এই মুলার বেশ চাহিদা রয়েছে এবং বাজারে পৌঁছা মাত্রই বিক্রি হয়ে যায়। কৃষক জানান, অন্যান্য জাতের মুলার তুলনায় সোমানি এক্স-৩৫ এ রোগের অভিযোগ কম।
আরও পড়ুনঃ দুগ্ধ খামার করে কোটিপতি হয়েছেন এই চাষী, পড়ুন সাফল্যের গল্প
মার্কেটিং কিভাবে করবেন?
ফসল বাজারজাতকরণের বিষয়ে কৃষক মনোজ কুমার বলেন, আমরা ক্ষুদ্র কৃষক এবং আমাদের ফলনও কম। ক্ষেত থেকে যা-ই উৎপাদিত হয়, কৃষকরা তা তাদের নিকটস্থ বাজারে কুইন্টালের ভিত্তিতে বিক্রি করে। তিনি জানান, এক একর ক্ষেত থেকে ২২ কাঠা অর্থাৎ ১১০ কুইন্টাল মুলার ফলন পাওয়া যায়। কৃষক জানান, এক কুইন্টাল মুলার জন্য তিনি ২৫০০ টাকা পর্যন্ত পান।
চাষ পদ্ধতি
কৃষক জানান, তিনি কৃষিকাজে জৈব ও রাসায়নিক উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করলেও বেশিরভাগই তিনি জৈব চাষ করেন। জমিতে সারের জন্য শুধুমাত্র গোবর ব্যবহার করা হয়। কৃষক জানান, তিনি এক একর জমিতে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুবার মুলা চাষ করেন। তিনি জানান, এক একর জমি থেকে তিনি ২ একর জমির সমান ফলন পান। দ্বিতীয় মৌসুমে প্রাপ্ত মুলা প্রথমটির তুলনায় মোটা এবং ভালো ফলন দেয়। কৃষক জানান, তারও একটি গরু রয়েছে, যা তিনি তার পরিবারের জন্য রেখেছেন।
খরচ এবং লাভ
খরচ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে কৃষক মনোজ কুমার বলেন, ফসলের ওপর চাষের খরচ নির্ভর করে। প্রথমবার এক একর জমিতে মুলা চাষে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয়বার এই খরচ কমে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। লাভের কথা বলতে গিয়ে এই চাষি জানান, মুলা চাষ করে তার ভালো আয় হয়। এক একর জমিতে মুলার ফসল থেকে সহজেই ৪ লক্ষ থেকে ৪.৫০ লক্ষ টাকা লাভ করা যায়।
চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন
কৃষক জানান, সবজি চাষে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আবহাওয়ার পরিবর্তন। বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া মুলার বাজারদরের ওঠানামা একটি বড় সমস্যা। কখনো রেট ভালো, আবার কখনো ফসলের হারও খরচের সমান হয় না।
কৃষকদের জন্য বার্তা
কৃষি জাগরণের সাথে আলাপকালে প্রগতিশীল কৃষক মনোজ কুমার কৃষকদের পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, কৃষকদের উচিত সঠিক পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে কৃষিকাজ করা, যাতে তারা ভালো ফলন পেতে পারে। কৃষকদের মুলা চাষ করা উচিত, অন্যান্য ফসলের তুলনায় এর চাষে খরচ কম এবং লাভও বেশ। তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন, "চাষকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। ফসলের উৎপাদন সফল হলেই যদি তা আপনাকে ভালো লাভ দেয়।" এছাড়া আবহাওয়া ও মাটি অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করা খুবই জরুরি বলেও জানান তিনি।