বিশ্বে বিভিন্ন প্রান্তে ছাগল পালন একটি লাভজনক ব্যবসা (Profitable Business)৷ দুধ এবং মাংসের জন্য পশুপালকরা এর ওপর নির্ভর করে থাকেন৷ অনেকে দুধের জন্য, অনেকে মাংসের জন্য এর ব্যবসা করে থাকেন, এবং এর জন্য বিভিন্ন জাতও রয়েছে৷ আকার, বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যেগুলি একটির থেকে অন্যটি অনেকটাই আলাদা৷
হাইব্রিড ছাগল পালন দেওঘর জেলার ভূমিহীন দরিদ্র মহিলাদের জন্য গৌণ আয়ের উত্স হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাইব্রিড জাতের ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং তাদের মাংসও সুস্বাদু। ছয় মাসে হাইব্রিড জাতের ছাগলের ওজন প্রায় ২৫ কেজি হয়।
আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে সফল এই মহিলা কৃষক (Successful Women Farmer) -
মিসেস সলোচানা কিসান দেওঘর জেলার কেন্দুচাপাল গ্রামের এক উপজাতীয় মহিলা উদ্যোক্তা। তিনি দুটি জাতের ছাগল এবং স্থানীয় জাতের দুটি ছাগল পালন করেছিলেন। ছাগল পালনে সর্বোচ্চ সময় দেওয়ার পরেও তিনি পর্যাপ্ত আয় অর্জন করতে ব্যর্থ হন। কারণ তার প্রধান সমস্যা হ'ল উচ্চ ব্যয় আর ছাগল মারা গেলে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন। এরপর কেন্দুচাপাল গ্রামে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সময় দেবগড়ের 'কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র'-এর সংস্পর্শে আসেন। কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের তিনি তার সমস্যা সম্পর্কে বলেন।
ছাগল পালনে তাঁর আগ্রহ দেখার পরে, 'কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র' এর বিজ্ঞানীরা তাঁর খামার পরিদর্শন করেছেন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনা ও উন্নত জাতের ছাগল বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছিলেন। 'কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র' এবং স্থানীয় পশুচিকিত্সকদের প্রযুক্তিগত নির্দেশনায় তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছাগল পালন শুরু করেন। তিনি এসজিএসওয়াইয়ের আওতায় ব্যাংক থেকে আড়াই লক্ষ টাকা লোণ নিয়ে, বিটল, সিরোহি ও ব্ল্যাক বেঙ্গলের মতো উন্নত জাতের ছাগল লালন-পালনের কাজ শুরু করেছিলেন।
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা -
কাঁচা ঘাস কম বা এর অভাব ঘটলে ছাগলকে ইউরিয়া - চিটা গুড় মেশানো খড় নিম্নোক্ত প্রণালীতে বানিয়ে খাওয়াতে হবে।
উপকরণ – ২ – ৩ ইঞ্চি মাপের কাটা খড় ১ কেজি, চিটা গুড় ২২০ গ্রাম, ইউরিয়া ৩০ গ্রাম ও জল ৬০০ গ্রাম। এবার জলেতে ইউরিয়া গুলে, তাতে চিটা গুড় দিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে সরাসরি ছাগলকে দিতে হবে। খাসীর ক্ষেত্রে ৩ - ৪ মাস বয়সে দুধ ছাড়ানোর পর, নিয়মিত সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়ালে দৈনিক ৬০ গ্রাম করে দৈহিক ওজন বাড়ে ও এক বছরের মধ্যে ১৮ – ২২ কেজি ওজনপ্রাপ্ত হয়ে যায়। খাসীকে দৈহিক ওজনের ওপর ভিত্তি করে মোট ওজনের ৭ শতাংশ পর্যন্ত পাতা বা ঘাস জাতীয় খাদ্য, দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ (চাল ভাঙ্গা ৪০ শতাংশ, কুঁড়া ৫০ শতাংশ, ডালের ভুষি ৫ শতাংশ, লবণ ৩ শতাংশ এবং মিনারেল মিক্সচার ২ শতাংশ) দিতে হবে।
ছাগল পালন থেকে আয় বেড়েছে পাঁচগুণ -
এই ছাগল প্রতি কেজি ৩,৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তাদের মোট বার্ষিক আয় এখন ৫০,০০০ টাকা। ছাগল পালনের ব্যয় মাত্র ১০,০০০ টাকা। এখন তারা এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ছাগল পালকদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে তাঁদের শক্তিশালী করছে, যাতে তাঁদের পণ্যগুলি সঠিকভাবে বিক্রয় করা যায়। তাঁর সাফল্য গ্রামের অন্যান্য ভূমিহীন মহিলাদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি এই শিল্পকে গ্রহণ করারও মনস্থ করেছেন।