বর্তমানে অন্তর্দেশীয় বাজারে সুগন্ধী চালের চাহিদা ও মূল্য যথেষ্ট্য বেশী। এছাড়া সুস্বাদু, সহজপাচ্য ও পুষ্টিগুণ বেশী হওয়ার কারণে সুগন্ধী চালগুলি বিশেষভাবে সমাদৃত। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কৃষি বিভাগ থেকে সুগন্ধী ধান চাষ সম্পর্কে অবহিত, উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রানিত করে তোলা হচ্ছে।
সুগন্ধী ধানের জাত |
কোন এলাকার উপযোগী |
মেয়াদ কাল |
তুলাইপাঁজি, কালোনুনিয়া, তুলসী ভোগ |
উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার |
১৪০-১৫৫ দিন |
রাঁধুনিপাগল, গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ ও দানাগুড়ি |
লাল কাঁকুরে মাটির জন্য মূলত বাঁকুরা ও পারালিয়া জেলার জন্য |
১৪০-১৫৫ দিন |
গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ, গোপালভোগ ও সীতাভোগ |
গাঙ্গেয় সমতল ভূমির জন্য |
১৪০-১৫৫ দিন |
দধিসাল, জামাইনাড়ু, কনকচূড় ও গোবিন্দভোগ |
সমুদ্র উপকূলবর্তী লবণাক্ত মাটির জন্য |
১৮০-১৫৫ দিন |
পশ্চিমবঙ্গের উপযোগী উচ্চফলনশীল, সুগন্ধী, বাসমতী ধানের কিছু জাত –
- আই. ই. টি. – ২১২৬১ (সি. এন. – ১৬৪৬-৬) : লম্বা-সরু-বাসমতী,
- আই. ই. টি. – ২১৬৪৯ (সি. এন. –১৭১৯-১),
- আই. ই. টি. – ২১৮৪৫ (সি. এন. – ১৭৪৯-২) : লম্বা-সরু-বাসমতী,
- আই. ই. টি. – ২১৫৫০ (সি. এন. – ১৭১৯-৪),
- আই. ই. টি. – ২১৮৪৭ (সি. এন. –১৭৯৪-১),
পি. এন. আর – ৫৪৬
বীজের হার – সুগন্ধী ধানের ছোট ও বেঁটে জাতগুলির জন্য ৮-১০ কেজি প্রতি একর এবং লম্বা-সরু জাতগুলির জন্য ১৫-২০ কেজি প্রতি একর বীজ লাগে।
বীজ শোধন – বীজ শোধন অত্যন্ত জরুরি, এতে বীজ বাহিত রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার ফলে চারা সুস্থ্য-সবল হয়। ১.৫ লিটার লবন জলে (১৬৫লিটার খাবার লবন + ১ লিটার জল) এক কেজি হারে বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। নীচে ডুবে যাওয়া পুষ্ট বীজ গুলি সংগ্রহ করে বীজ ভালোকরে ধুয়ে ছত্রাকনাশক দ্রবণে শোধন করা হয়।
- শুকনো বীজ শোধন
ছত্রাকনাশক |
মাত্রা (গ্রাম/কেজি) বীজ |
রোগ থেকে মুক্তি |
কার্বেন্ডাজিম ৫০% |
২.০ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
ম্যানকোজেব ৭৫% |
২.৫ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
কার্বক্সিন ৩৭.৫% + থাইরাম ৩৭.৫% |
২-৩ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি / হারজিয়ানাম |
৪-৫ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
৫ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
ইমিডাক্লোরোপিড ৬০০ |
২-৩ |
বিভিন্ন কীট পতঙ্গ |
- কাদানো বীজ শোধন
ছত্রাকনাশক |
মাত্রা (গ্রাম/কেজি) বীজ / ১.৫ লিটার জলে |
রোগ থেকে মুক্তি |
কার্বেন্ডাজিম ৫০% |
২.০ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
ট্রাইসাইক্লাজোল ৭৫% |
২.০ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
কার্বক্সিন ৩৭.৫% + থাইরাম ৩৭.৫% |
২-৩ |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট + টেট্রাসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড |
১০ গ্রাম প্রতি ১ লিটার জলে / ৬-৭ কেজি |
ব্যাকটেরিয়া জনিত ঝলসা |
- কাদানো বীজতলা শোধন – বীজ বপন করার ৭ দিন আগে বীজতলা শোধন করলে চারাকে প্রাথমিক সুরক্ষা দেওয়া যায়।
কীটনাশকের নাম |
মাত্রা |
রোগ পোকার বিরুদ্ধে কাজ করে |
কার্বেন্ডাজিম ৫০% |
২.০/ ১.৫ লিটার জলে |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
ট্রাইসাইক্লাজোল ৭৫% |
২.০/ ১.৫ লিটার জলে |
ঝলসা, বাদামি দাগ, লক্ষীর গু |
কারটাফ হাইড্রোক্লোরাইড ৪ জি |
১.৫ কেজি/ ১০ কাঠা বীজতলায় |
মাজরা, ভেঁপু, পাতামোড়া, পামরী পোকা |
কারবোফিউরান ৩ জি |
২.০ কেজি / ১০ কাঠা বীজতলায় |
মাজরা, ভেঁপু, পাতামোড়া, পামরী পোকা |
বীজ বোনা ও চারা রোয়ার সময় – সুগন্ধী ধানের ফলন ও গন্ধ ভালো পেতে হলে দক্ষিণবঙ্গে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ও উত্তরবঙ্গে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বীজ বোনার কাজ শেষ করে দিতে হবে। ২৫-৩০ দিনের চারা দক্ষিণবঙ্গে জুলাইয়ের মধ্যে ও উত্তরবঙ্গে আগস্টের মধ্যে রোয়ার কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।
চারা রোয়া ও সার প্রয়োগ – ২৫-৩০ দিন বয়সি চারা প্রতি গুছিতে ২-৩ টি করে ২০ সেন্টিমিটার, সারি থেকে সারি এবং ১৫ সেন্টিমিটার গুছি থেকে গুছি দূরত্বে ২ সেন্টিমিটার গভীরতায় রোয়া করতে হবে। দেশি লম্বা জাতের দূরত্ব বেশি রাখা দরকার। মূল জমি তৈরীর সময় সুগন্ধী ধানের জন্য একর প্রতি ২০ কুইন্টাল খামার পচা সার বা ১০ কুইন্টাল কেঁচো সার বা ১০ কুইন্টাল খোল প্রয়োগ করতে হবে। মাঝারি মাপের উর্বর জমিতে রাসায়নিক সার হিসেবে একর প্রতি ২৪ কেজি নাইট্রোজেন, ১২ কেজি ফসফেট, ১২ কেজি পটাশ দেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে ১/৪ ভাগ নাইট্রোজেন এবং সমস্ত ফসফেট ও পটাশ সার মূল সার হিসেবে এবং ১/২ ভাগ নাইট্রোজেন রোয়ার ২১ দিন পরে, বাকি ১/৪ ভাগ নাইট্রোজেন রোয়ার ৪২ দিন পরে থোর আসার মুখে ব্যবহার করতে হবে। সুষম সার প্রয়োগে সালফার বা গন্ধক প্রয়োগ জরুরি, এতে চালের গুণমান বৃদ্ধি পায়। একর প্রতি ৪ কেজি সালফার শেষ চাষে চাপান সার হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে।
অনুখাদ্য হিসেবে একর প্রতি ১০ কেজি জিঙ্ক সালফেট ও ৪ কেজি বোরক্স শেষ চাষে প্রয়োগ করতে হবে। অনুখাদ্য পাতায় স্প্রে করলে বেশী ভালো ফল পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ধান রোয়া করার ২১ দিন ও ৪২ দিন পরে পাতায় ১ গ্রাম চিলেটেড জিংক এবং ১.৫ গ্রাম অক্টাবোরেট প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করে দিন। এতে গাছের বৃদ্ধি ও দানা ভালো পুষ্ট হবে এবং ফসলের গুণমান ভালো হবে।
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)