লংগান এক প্রকার লিচু জাতীয় সু-স্বাদু ফল। এটি কাঠ লিচু কিংবা আশফল হিসেবেও পরিচিতি আছে। লংগান আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ফল। একে বলা হয় গরীবের লিচু। ফল গোল আকারের, শাঁস সাদা, খুব রসালো ও মিষ্টি। লংগান লিচু পরিবারের একটি সদস্য। ফলের উপেরভাগ মিশ্রণ, ফলের রং বাদামি, আকার গোল। লিচুর চেয়ে অনেক ছোট হলেও ফলের শাঁস অবিকল লিচুর মত। ফল খেতে লিচুর মত বা লিচুর চেয়েও মিষ্টি। ফলের শাঁস সাদা চকচকে। লংগান ফলের বিজ গোলাকার চকচকে কালো এবং শাঁস বীজকে আবৃত করে রাখে। যা সহজে আলাদা করা যায়। বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হলেও ছাদে কলমের চারাই উপযোগী । গুটি কলম এর মাধ্যমেই খুব সহজেই এর বংশ বিস্তার করা যায়।
চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় এ ফল চাষ হয়। সেখানে ফলটি লিচুর বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। খোসা ছাড়ালে চোখের মতো দেখতে বলে ওইসব এলাকায় লংগানকে বলা হয় ‘ড্রাগনস আই’।
আরও পড়ুনঃ জলের অভাবে আমন ধান বুনতে পারছে না বাংলাদেশের কৃষকরা
এবার বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ কাশিয়ানি হর্টিকালচার সেন্টারে এটির চাষাবাদ দেখা গেল। সেখানে ১০টি গাছের মধ্যে কমপক্ষে সাতটি গাছে থরে থরে ধরা এই ফলের দেখা মেলে। বাকি গাছগুলোতে ফুল এসেছে। অর্থাৎ সেগুলো কিছুটা ছোটো। বাজারে লিচু শেষ হওয়ার এক মাস পর অর্থাৎ জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এসব লংগান পাকতে শুরু করবে। এই সময়ে লিচুর বিকল্প হিসেবে লংগান জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা উদ্যানতত্ত্ববিদদের।
আঁশফলে বিভিন্ন খনিজ উপাদান, শর্করা ও ভিটামিন সি এর প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে ৭২ ভাগ পানি, ১০৯ কিলোক্যালোরি শক্তি, ৮.০ মিগ্রা. ভিটামিন সি, ২৮০ আইইউ ভিটামিন এ, ২.০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ৬.০ মি.গ্রা. ফসফরাস, ১.০ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৫ গ্রাম ফ্যাট বিদ্যমান। আঁশফলের শুকানো শাঁস ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যেমন- এটি পাকস্থলীর প্রদাহে, অনিদ্রা দূর করতে ও বিষের প্রতিষেধক (antidote) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা অ্যালার্জি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও কার্ডিওভাসকুলার রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা যায়।
লংগান চাষের জন্য খুব বেশি পরিচর্চার প্রয়োজন হয় না। চারা লাগিয়ে রাখলেই হয়ে যায়। সারও বেশি লাগে না। এটি খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। এটা খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ক্যানসার প্রতিরোধী। অন্যান্য ফলের চেয়ে ভিটামিন সি’র পরিমাণও বেশি।
ফলটির উৎপত্তি চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারতের কিছু অঞ্চলে। কাশিয়ানির বাগানের গাছটিতে দুই বছর ধরে থাই জাতের লংগান ধরছে। লিচু পরিবারের সদস্য এ গাছ লাগানোর তিন বছরের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে। প্রতিটি ডালের মাথায় থোকায় থোকায় ধরে লংগান। আকারে ছোট হওয়ার কারণে এ ফল ছাদবাগানের উপযোগী।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের আম আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দিতে চান কৃষি মন্ত্রী
লংগান হার্ভেস্টে ১২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে রাখা যায়, নষ্ট হয় না। একটি মধ্যবয়সী লংগান গাছে ৭০-১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ মধ্যবয়সী একটি গাছ থেকে লাখ টাকার লংগান পাওয়া সম্ভব।