অ্যাভোকাডো অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত একটি ফল। চিরহরিৎ এই ফলের গাছ বহুদিন পর্যন্ত বাঁচে। অ্যাভোকাডোতে প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যগত উপাদান প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এই ফল ভিটামিন-এ, বি, সি এবং কে সমৃদ্ধ। এই ফল মূলত উত্তর অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা এবং মেক্সিকোতে প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। শোনা যায় প্রায় ১০ হাজার বছর আগে এই ফলের চাষ মেক্সিকোতে প্রথম শুরু হয়। হালকা সবুজ অথবা বলা চলে কালচে সবুজ এই ফলের আকৃতি অনেকটা গোলাকার, প্রায় নাশপাতির মতন। পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ছাড়াও, এই ফলে রয়েছে কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রনের মতন খনিজ উপাদানসমূহ। কলার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম মজুত রয়েছে এই ফলে। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে এমাইনো এসিড এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট অ্যাভোকাডোয় বিদ্যমান।
অ্যাভোকাডোর বিবিধ গুণাবলী:(Health Benefit)
১) ফলটিতে চিনির পরিমাণ অত্যন্ত কম হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীরা সহজেই এই ফল খেতে পারেন।
২)প্রচুর পরিমাণে উত্তম মানের কোলেস্টোরল এই ফলে থাকায়, শরীরের পক্ষে এটি অত্যন্ত ভালো।
৩) এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে এই ফল বহুদিন ধরে মানুষের কাছে জনপ্রিয়। শরীরের দূষিত পদার্থ এই ফল খেলে অনেকাংশে নির্গত হয়।
৪) জন্ডিস রোধে এই ফল ভীষণ ভাবে কার্যকর।
৫) ফলটিতে অত্যন্ত পুষ্টিগুণ থাকায় মাতৃদুগ্ধের বিকল্প হিসাবে একে ধরা হয়।
৬) ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে এই ফল ভীষণ ভাবে কার্যকর।
৭) এই ফলে প্রচুর খাদ্যআঁশ থাকায়, পেট পরিষ্কার রাখতে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
৮) এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এই ফল ত্বক উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে।
বংশবিস্তার:
অ্যাভোকাডো গাছ বীজের মাধ্যমে অতি সহজেই বংশবিস্তার করে। একটি বীজকে ভাগ করে ক্ষেতে লাগালে বীজের প্রত্যেক অংশ থেকে চারা গজাতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভ্রূণ-এর অংশ মাটিতে লাগাতে হবে। ফল থেকে বীজ বের করার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। বীজ বপনের আগে বীজের আবরন অপসারণ করলে বীজের অঙ্কুরোদগম তাড়াতাড়ি হয়। জোড়কলম, গুটিকলম, ভিনিয়ার, টি বাডিং এর মাধ্যমেও এই গাছের চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে গাছের বংশবিস্তারও ভালো হয়।
চারা রোপণের শর্ত: (Planting)
চারা রোপনের প্রধান শর্ত হল, একটা গাছ থেকে অপর গাছের দূরত্ব কম করে ৮ থেকে ১০ মিটার হতে হবে। চারা রোপণের জন্য ১ x ১x ১ মিটার বুঝে নিয়ে গর্ত খুঁড়ে নিতে হবে। এবার গর্তের মধ্যে ২০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি উত্তম উপায়ে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। ১০-১৫ দিন হয়ে গেলে গর্তে চারা পুঁততে হবে।
নিয়ম করে প্রত্যেক বছর গাছে কম করে তিন বার সার দিতে হবে। বর্ষার আগে একবার ও পরে একবার ছাড়াও ফল গাছের আসার আগে সার প্রয়োগ করা উচিত।
পোকামাকড় ও রোগ দমন: (Pest and Disease control)
অ্যাভোকাডো গাছের প্রধান শত্রু হল মিলিবাগ ও মাকড় পোকা। মিলিবাগ পোকার গাছে আক্রমণ ঘটলে পাতা ও ডালে সাদা তুলোর মতন আঁচ গজাতে দেখা যায়। মিলিবাগ পোকার থেকে গাছকে বাঁচানোর উপায়, সুমিথিয়ান অথবা সানগর ২ লিটার জলে মিশিয়ে পোকার আক্রমণ কালে নিয়মিত স্প্রে করা।
মাকড় পোকার আক্রমণে গাছের পাতা শুকিয়ে কুঁকড়ে যায় এবং পাতার বর্ণ হলুদ রং ধারণ করে। এই অবস্থার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে ওমাইড বা ভেরটিমেক ২ লিটার জলে মিশিয়ে গাছের উপর স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ছিটিয়ে দিতে হবে।
অ্যাভোকাডো স্ক্যাব রোগটি এই ফলের গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি রোগ। এই রোগ ধরলে গাছের ফল ও শিকড় পচতে শুরু করে। এই অসুখ থেকে গাছকে বাঁচাতে গেলে কম্প্যানিয়ন অথবা অটোস্টিন ২ লিটার জলে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করে ছিটিয়ে দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Balsam Farming Complete Guideline: দোপাটি ফুলের চাষ করে হয়ে উঠুন আদর্শ ফুল চাষি
ফল সংগ্রহ: (Harvest)
অ্যাভোকাডো গাছ যদি বীজ থেকে জন্মায় তাহলে তাতে ৬-৭ বছর নাগাদ ফল আসে। পাকা ফল গাছ থেকে সহজে ঝরে না পড়ায়, গাছে অনেকদিন ফল থেকে যায়। কম করে ৪০০ থেকে ৫০০ টি ফল একটা গাছে ধরতে পারে। তবে তা নির্ভর করে গাছের জাতের উপর। একবার গাছ থেকে ফল পেড়ে নিলে দেখা যাবে গাছের ফল নরম হয়ে গেছে। পাকা অ্যাভোকাডো ৬-৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সহজেই ৩০-৩৫ দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
অতএব, একটাই কথা বলার অ্যাভোকাডো গাছ লাগিয়ে প্রচুর আয় সম্ভব। কারণ এই ফলের চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে, এবং এর স্বাস্থ্যগত গুনাগুন অত্যন্ত বেশি পরিমাণে হওয়ায় ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে এই ফল। তাই চাহিদা অনুযায়ী অ্যাভোকাডো গাছ যদি লাগিয়ে তার ফল বিক্রি করা যেতে পারে, তাহলে লাভই লাভ।
আরও পড়ুন: Almond Farming: বাড়িতে আমন্ড চাষের সুফল