মূলত বাংলায় বরাবর কৃষিকার্যই প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। রোদ-জলে ভিজে কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আমরা আজ চাহিদা মতন পাচ্ছি বলেই বেঁচে রয়েছি। বলা চলে কৃষিই হল আমাদের রাজ্যের ভবিষ্যৎ। বহু কৃষক ফসল ফলিয়েও মার খান কীটপতঙ্গ ফসল ক্ষতি করে বলে। কীটনাশক ব্যবহার করলে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে ফসল অনেকাংশে মুক্তি পাবে। চাষিভাইয়েরাও ফসল উৎপাদন করে ভালো দাম পাবেন। রাসায়নিক কীটনাশক থেকে জৈব কীটনাশক অনেক বেশি উপকারী। কীট-পতঙ্গ থেকে ফসলকে বাঁচাতে রাসায়নিক কীটনাশকে চাষিদের অনেকদিন ধরে ভরসা থাকলেও, বর্তমানে জৈব কীটনাশক অনেক বেশি চাষি পুনরায় ব্যবহার করা শুরু করেছেন। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে, ফসলের যে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে তা কৃষকরা এখন বুঝতে পারছেন, তাই তারা জৈব কীটনাশকের এখন আবার ভরসা রাখতে শুরু করেছেন।
রাসায়নিক কীটনাশক ভবিষ্যতেও ফসলের ক্ষেত্রে ভীষণই ক্ষতিকর। রাসায়নিক কীটনাশক যেমন পোকা মারে তেমনই জমিরও ক্ষতি করে এই কথা আজ অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই। জৈব কীটনাশক অথবা বায়োপেস্টিসাইড, রাসায়নিক কীটনাশকের একটি প্রাকৃতিক সমাধান। প্রাকৃতিক জীবিত অণুজীব বা প্রাকৃতিক পণ্যগুলির উপর ভিত্তি করে এই জৈব কীটনাশক তৈরী হয়। ফসলের কোনও ক্ষতি ছাড়াই তাই এই জৈব কীটনাশক ফসলের ক্ষতিকর কীটনাশক তাড়াতে সাহায্য করে।
কৃষিক্ষেত্রে জৈব কীটনাশক ব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষি ভাইদের জৈব কীটনাশক ব্যবহারের উপর সদিচ্ছার একাধিক কারণ রয়েছে। আসুন কারণগুলি জেনে নেওয়া যাক
১) সহজ ব্যবহার (Easy Use)
রাসায়নিক কীটনাশকগুলি বিষাক্ত হওয়ার কারণে ফসলে তা স্প্রে করার পর জমিতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত যেতে বারণ করা হয়। অপরদিকে জৈবিক কীটনাশক ব্যবহার করলে এরকম কোনও নিয়ম মানতে হয় না। বায়োপেস্টিসাইড ফসলে স্প্রে করলে যেহেতু কোন নির্দিষ্ট সময়ের বিধিনিষেধ নেই, সেহেতু কৃষক চাষবাসে বেশি সময় দিতে পারেন।
আরও পড়ুন: Bean Farming: শিখে নিন শিম বা বিন চাষের কৌশল
২) ক্ষতিকরহীন (Harmless)
রাসায়নিক কীটনাশক কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে তার ক্ষতিকারক রেশ উৎপাদিত ফসলে থেকে যায়। যা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর এবং অন্যান্য প্রাণীদের পক্ষেও বিষাক্ত। কিন্তু জৈব কীটনাশক প্রয়োগ করলে ফসলের উপর কোনও প্রভাব পড়ে না, সাথে সাথে চাষের ক্ষেত্রও ভালো থাকে এবং তা পরিবেশবান্ধবও হয়।
৩) ফসলের সহ্য ক্ষমতা (Crop Tolerance)
রাসায়নিক কীটনাশক দিনের পর দিন অতিরিক্ত প্রয়োগ, কীটের বিরুদ্ধে ফসলের জিনগত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দীর্ঘদিন একই কীটনাশকের প্রয়োগে রাসায়নিকগুলির কার্য ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। এটি কৃষকদের জন্য একটি বড় সমস্যা, কারণ তারা তাদের ফসলের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ রোধ করার জন্য বিদ্যমান পদ্ধতি ছাড়া বিকল্প পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত নয়। অপরদিকে বায়োপেস্টিসাইড এই পরিস্থিতিতে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান, কারণ কীটপতঙ্গগুলি এতে রাসায়নিক প্রতিরোধের বিকাশ করে না, তাই এই পণ্যগুলির ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে কার্য ক্ষমতা হ্রাস পায় না।
সময়ের সাথে সাথে কীটপতঙ্গ পরিচালনার এই পদ্ধতিটি কৃষি খাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়োপেস্টিসাইড মানুষের জন্য একেবারেই বিষাক্ত নয় এবং ফসল বা পরিবেশের উপরেও এর কোন ক্ষতিকারক প্রভাব নেই। বরং জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন ফসল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর স্বাস্থ্যের কোন ঝুঁকি নেই। তাই আমাদের উচিত কীটপতঙ্গ পরিচালনার ক্ষেত্রে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবস্থাকে স্বাগত জানানো।
আরও পড়ুন: Jujube Farming Process: কুল চাষ করে হয়ে উঠুন সমৃদ্ধশালী কৃষক