প্রাচীন কাল থেকেই মেধা এবং স্মরণ ক্ষমতা আমাদের দেশের উৎকর্ষ সাধনের এক অন্যতম কারণ। শুধুমাত্র স্মৃতিশক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে বেদের মতন এক বিশাল কাব্য অধ্যায়। গুরু শিষ্য পরম্পরায় শুনে শুনে মনে রাখা হতো বলে বেদের ওপর নাম শ্রুতিও বটে। ভারতবর্ষের মানুষরা বরাবরই স্মৃতিধর, তা বহুবার প্রমাণিত। বাংলার মহামানবদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আগেকার দিনের মানুষরা স্মরণশক্তি বাড়ানোর বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করার সাথে সাথে স্মৃতিবর্ধনের জন্য বিভিন্ন খাদ্যে গ্রহণেও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য ব্রাহ্মী শাক সেই সময়কার মানুষদের খাদ্য তালিকার এক বিশেষ পদ ছিল।
ব্রাহ্মী শাকের রস সেবন তখনকার দিনে এক বিশেষ ট্রেন্ডও ছিল বটে। বর্তমানেও বহু ছাত্র-ছাত্রী স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য এই শাকের রস খেয়ে থাকে। ব্রাহ্মী শাকের ভেষজ উপাদান শরীরের হিপোকম্পাস অংশের ক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে পড়ুয়াদের মনোযোগও বৃদ্ধি পায়। চোখের দৃষ্টি বাড়াতেও এই ব্রাহ্মী শাকের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাজারে ব্রাহ্মী শাকের চাহিদা যথেষ্ট থাকার জন্য এখনকার অনেক কৃষক এই চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ব্রাহ্মী চাষ করে লক্ষাধিক উপার্জন হয়েছে রাজ্যে এমন কৃষকও কম নেই। আসুন জেনে নেওয়া যাক, সহজ উপায়ে ব্রাহ্মী শাক চাষের পদ্ধতি
উপযুক্ত মাটি এবং জলবায়ু: (Soil and Climate)
জলজ অথবা আর্দ্র জলাভূমি যেখানে খাল-বিল রয়েছে সেই অঞ্চলে এই শাকের চাষ খুব ভালো হয়। মাটিতে অম্লের পরিমাণ বেশি, এমন মাটি ব্রাহ্মী চাষের জন্য উপযুক্ত। এই উদ্ভিদের ফলন উপ-ক্রান্তীয় এবং ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে বেশি পরিমাণে হয়। ৩৩০-৪০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং ৬০-৬৫ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা এই উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।
চাষাবাদের পদ্ধতি: (Cultivation Process)
উর্বর নরম মাটিতে এই চাষ খুব ভালো হয়। এই শাকের যাতে দ্রুত বিস্তার ঘটে, তারজন্য সমগ্র উদ্ভিদটিকে ছোট ছোট অংশে কাটা হয় এবং মাটিতে পোঁতা হয়। এক হেক্টর এলাকা রোপণ করার জন্য প্রায় ৬২,৫০০ টি ক্ষুদ্র অংশের প্রয়োজন হয়। এই উদ্ভিদ শিকড় এবং কিছু পাতা সহযোগে ৫-৬ মি. দৈর্ঘ্যে এবং ১০x১০ সেমি. ব্যাসার্ধে আর্দ্র মাটিতে প্রতিস্থাপিত করা হয়। ব্রাহ্মী শাক রোপণ করার পরে শুধুমাত্র সেচ দিলেই হবে। অধিক পরিমাণে ফলনের জন্য উদ্ভিদের কাটা অংশগুলিকে জুলাই থেকে আগস্ট মাসের ভিতর প্রতিস্থাপণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: Mixed Farming Procedure: মিশ্র চাষ করে লাভবান হতে হলে, জেনে নিন এই ক'টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
সার প্রয়োগ: (Fertilizer)
এই চাষের ক্ষেত্রে নিয়ম করে জৈব সার দিতে হবে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫ টন ফার্ম ইয়ার্ড ম্যানিয়োর (এফওয়াইএম) সার দিয়ে প্রথমে মাটি তৈরী করতে হবে। অজৈব সার প্রয়োগ করলে হেক্টর প্রতি নাইট্রোজেন,ফসফরাস,পটাশিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে।
কুষ্ঠ রোগ, ব্রণর সমস্যা এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে ব্রাহ্মী শাকের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে হার্টের রোগীদের ব্রাহ্মী শাক এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো, বিশেষ করে যাদের হার্টের গতি ধীর।
আরও পড়ুন: Kolkata Power Grid Corporation Recruitment: নিয়োগ চলছে কলকাতা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনে