এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 3 August, 2021 12:36 PM IST
Organic fertilizer (Image Credit - Google)

আন্তর্জাতিক জৈব কৃষি আন্দোলন ফেডারেশন (IFOAM)- এর মতে জৈব কৃষি একটি কৃষি ব্যবস্থা, যা পরিবেশগত ভাবে, সামাজিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে খাদ্য, তন্তু, কাঠ ইত্যাদি উৎপাদনকে উন্নীত করে। পুষ্টিগত গুরুত্বের দিক থেকে বিচার করলে জৈবসারে রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক বেশী পুষ্টিমৌল থাকে এবং তাও অনেকটাই সস্তায় পাওয়া যায়।

জৈবসার উদ্ভিদের খাদ্য উপাদানগুলিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তাছাড়া এতে থাকে উদ্ভিদের জন্য উপকারী নানা মুখ্য ও গৌন খাদ্য উপাদান যা ফসলের উৎপাদন ও গুণমান বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয় মিশ্র জৈবসার মাটির উৎপাদনশীলতাকে দীর্ষস্থায়ী করে।

মাটিতে জৈবসার প্রয়োগের ফলে নিম্নলিখিত সুফলগুলি পরিলক্ষিত হয় (Benefits of organic fertilizer) –

. যেকোন ধরনের মাটির ভৌত অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে মাটিকে নরম, ঝুরঝুরে করে , মাটির জল ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়, মাটির বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়ায় , মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, লবণাক্ততা কমে যায়, মাটির আম্লিক বা ক্ষারিয় প্রভাব কমিয়ে মাটিকে প্রশমিত (ph – ৭.০ এর কাছাকাছি) করে।

২. উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান সরবরাহ - মিশ্র জৈবসার মাটিতে দেওয়ার ফলে মুখ্য খাদ্য উপাদানগুলি যেমন নাইট্রোজেন, পটাশ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি মুখ্য উপাদান এবং কতকগুলি গৌন খাদ্য উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে  উদ্ভিদের সুসংহত বৃদ্ধি ঘটে।

. উদ্ভিদের জৈবিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় – এর ফলে নাইট্রিফিকেশন ও অ্যামোনিফিকেশনের মত জৈবিক পদ্ধতিগুলি বৃদ্ধি পায়।

. উদ্ভিদের হরমোনের বৃদ্ধিসাধন করে: জৈব সার প্রয়োগে গাছের বৃদ্ধি হরমোন যেমন অক্সিন, হেটারোক্সিন ইত্যাদির বেশি উৎপাদনের ফলে গাছের বৃদ্ধি ভলো হয় শস্য উৎপাদন বেশি হয়।

. পচনশীল, অব্যবহৃত বা বর্জ্য পদার্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের ফলে দূষণ কমে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে।

. ফসলের জলের চাহিদা কমে বা সেচের জল কম পরিমাণে লাগে।

জৈবসারে চাষ করলে ঠিক কি কি সুবিধা পাওয়া যায় সেই বিষয়ে কিছুটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হল, যদি কেউ এখনো জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করেন নি, তারা অবশ্যই দ্বিগুণ লাভের জন্য জৈব প্রযুক্তিতে চাষ করা শুরু করতেই পারেন।

১) সস্তা পুষ্টিমৌলের উৎস (A source of nutrients) -

তামিলনাড়ুতে একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে ২৫ কেজি নাইট্রোজেন পেতে হলে হেক্টর প্রতি ১৮০ টাকা মূল্যের রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়, যেখানে মাত্র ৫৪ টাকা মূল্যের নীলাভ সবুজ শৈবাল ব্যবহার করে চাষীরা সমপরিমাণ নাইট্রোজেন পেতে পারে। আর চাষীরা যদি নিজেরাই শৈবাল চাষের দায়িত্ব নেন তাহলে তো আরও কম খরচে কাজ হয়ে যাবে। আরও পরীক্ষা করে জানা গেছে যে, মাত্র ৩০ টাকার নীলাভ শৈবাল ( প্রতি হেক্টর ১০ টাকা হিসেবে) ৫০০-৭০০ টাকার অতিরিক্ত আয়ও পাওয়া যাবে। তাছাড়া নীলাভ শৈবাল বা অ্যাজোলা জৈব সার ব্যবহারে জমির এক-তৃতীয়াংশ নাইট্রোজেনের চাহিদাও কমিয়ে দেয়। যদি ভারতের ৫০% ধান উৎপাদক অঞ্চলে এই শৈবাল প্রযুক্তিকে চালু করা যায় ( ২০ মিলিয়ন হেক্টর), যা সারা বৎসর ৮০০ মিলিয়ন কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করে থাকে ( প্রতি হেক্টর ৪০ কেজি হিসেবে), এবং এই পরিমাণ নাইট্রোজেন পেতে হলে ৪১৭.৬ কোটি টাকার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে প্রতি বছর।

২) স্বল্পমাত্রিক মৌলের যোগান (Supply of small amounts of elements) - 

বায়োফার্টিলাইজার যে শুধুমাত্র নাইট্রোজেনের যোগান দেয় তাই নয়, এটি উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় স্বল্পমাত্রিক উপাদান এর যোগানেও সক্ষম যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এই স্বল্পমাত্রিক উপাদানের অভাবে অনেক সময়ে উচ্চফলনশীল বীজেও উৎপাদন থমকে যায় শুধুমাত্র উদ্ভিদের সীমিত বৃদ্ধির কারণে। এই স্বল্পমাত্রিক উপাদানগুলি অধিক নাইট্রোজেন, পটাশ, ও ফসফেট সার ব্যবহারে নাও মিলতে পারে, বরং সারের অধিক ব্যবহারে জমি তার উৎপাদনের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারে। এই অবস্থায় যদি অত্যাধিক পরিমাণে  শ্যাওলা ও অ্যাজোলা জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা হয় তবে যেমন উৎপাদন বাড়বে তেমনি বৃদ্ধি পাবে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর যোগান।

) জৈব বস্তুর সরবরাহঃ

মাটির সবথেকে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো মাটির জৈব বস্তুর সমাহার যা মাটিকে অনবরত পুষ্টিদ্রব্য ও শক্তি এমনকি প্রয়োজনীয় অণুজীবের সরবরাহ করে থাকে। জৈব বস্তুর উপস্থিতি মাটির ভৌত ও রাসায়নিক চরিত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যাজোলা ও নীলাভ শৈবাল প্রতি হেক্টরে ৮-১০ টন বায়োমাস তৈরিতে সক্ষম, যা মাটির জৈব বস্তুর সম্ভার গড়ে তোলে।

)  রাসায়নিকের কুপ্রভাব থেকে মাটিকে সুরক্ষা প্রদানঃ

কয়েক বছর ধরে পুনঃপুন রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির মধ্যে অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায় যা মাটির গুণমানতা হ্রাস করে, ফলে মাটি পরবর্তী কালে একই সার প্রয়োগের ফলে অসাড় হয়ে পড়ে। এই অবস্থার থেকে তখনি নিস্তার সম্ভব যখন জৈব ও রাসায়নিক সার কে একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হবে। এই জৈব সার মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের নিয়ন্ত্রণে বাফার হিসাবে কাজ করে এবং মাটির সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। এই জৈবসার মাটির ধাতব আয়ন সমূহকে ধরে রাখে ফলে ক্ষতিকারক কীটনাশকসমূহের প্রভাব থেকে মূল অংশটি সুরক্ষিত থাকতে পারে।

আরও পড়ুন - Organic Fertilizer & Pesticide : ফসলের অধিক ফলন পেতে ঘরে বসেই সহজ পদ্ধতিতে তৈরী করুন জৈব সার, বৃদ্ধিবর্ধক ও কীটনাশক

) উদ্ভিদের বৃদ্ধিসহায়ক হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করাঃ

উদ্ভিদ এর বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য কতকগুলি প্রাকৃতিক জটিল রাসায়নিকের পর্যাপ্ত নিঃসরণের প্রয়োজন যাদের বলা হয় হরমোন। অ্যাজেটোব্যাক্টর, নীলাভ শৈবাল, ও অ্যাজোলা এই বৃদ্ধি হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে (যেমন- ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি), যা প্রধান শস্যর ক্ষেত্রে অনেক বেশী উপকারী। কখনো কখনো জৈবসার প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যদিও বা মাটি পুষ্টিদ্রব্যে ভরপুর থাকে, কারণ জৈবসার শস্যের জন্য উদ্ভিদ বৃদ্ধি হরমোন সরবরাহ করে থাকে।

আরও পড়ুন - Azolla Cultivation - অ্যাজোলা কীভাবে চাষ করবেন কৃষকবন্ধুরা? জেনে নিন এই প্রাণীখাদ্য চাষের উপায়

English Summary: By applying organic fertilizer, farmers will get higher yield of the crop
Published on: 23 July 2021, 06:21 IST