রোজ বদলাচ্ছে আকাশের মেজাজ: দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার আপডেট (Weather Update of Bengal) সরাসরি বাজারে নয়, FPO-র মাধ্যমে বেশি দাম পেতে কী করবেন? পশ্চিমবঙ্গের ছোট শিল্প: হ্যান্ডলুম থেকে টেরাকোটা
Updated on: 28 March, 2023 8:30 PM IST
নারকেল গাছ।

কৃষিজাগরণ ডেস্কঃনারকেল একটি অতি উৎকৃষ্ট ফল। এই গাছের প্রায় সব অংশই আমাদের কাজে লাগে। তাই এর আর একটি নাম হল কল্পবৃক্ষ বা স্বর্গের গাছ। এই গাছ থেকে যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যায়, জন চাইলে জল, ফল চাইলে ফল, আশ্রয় চাইলে আশ্রয়। নারকেল গাছ আমরা প্রায় সর্বত্রই দেখতে পাই। কেউ বাগানে একটা দুটো গাছ লাগান, কেউ বা আবার অনেক গাছ লাগিয়ে নারকেলের বাগান করেন। যারা শখ করে একটা দুটো গাছ লাগান তারা গাছের পরিচর্যা বিশেষ একটা করেন না, তাই তারা গাছ থেকে সে রকম ফলন পান না। গাছ যেহেতু বহুবর্ষজীবী গাছ এবং সারা বছর ধরে এর থেকে ফল পাওয়া যায়। তাই বছরভর এর পরিচর্যা দরকার।

তবে প্রথমেই বলি কিছু উন্নত জাতের কথা

লম্বা জাত- ইস্টকোস্ট টল, আন্দামান অর্ডিনারি, হাজারী, চন্দ্ররুপ ইত্যাদি। ফল ধরতে ৭-৮ বছর সময় লাগে। এর ফলন বেশী, গাছ বেশীদিন বাঁচে, নারকেল তেলের ভাগ বেশী, ফলন নিয়মিত, গাছ খুব মজবুত।

বেঁটে জাত- আন্দামান ডোয়ার্ফ, লাক্ষাদ্বীপ স্মল, কেবল ডোয়ার্ফ, চৌঘাট অনেক ডোয়ার্ফ ইত্যাদি। ফসল তোলা সুবিধা, অনিয়মিত ফল, ফল ছোট, শাস কম, গাছ বেশীদিন বাঁচে না।

সংকর জাত- চন্দ্রলক্ষ, চন্দ্রশংকর। ফলন বেশী, শাস পুরু ও সুস্বাদু, ফল মাঝারী আকারের, ৫-৬ বছরে গাছে ফল ধরে।

সাধারনতঃ বর্ষার শুরুতেই এক বছর বয়সী চারাগুলি ৭.৫ মিটার দূরত্বে বসানো হয়। চারা বসানোর দু মাস আগে বালি মাটিতে ০.৭৫মি x ০.৭৫মি x ০.৫ মি. ও নোয়াশ মাটিতে ১মি. x ১ মি x ১মি সাইজের গর্ত করা হয়। গর্তের তলদেশের মাটি ঝুরঝুরে করে ২০-২৫ সেমি নদীর বালি, মাটি, ছাই দিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর এর উপরে বেশ কিছুটা ঘোড়া মাটি দেওয়া হয়। মূল সার হিসাবে প্রতি গর্তে ১০ কেজি জৈব সার, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম ফসফেট, ২০০ গ্রাম পটাশ সার দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ কৃষি ক্ষেত্রে সেচ ও জল সংরক্ষণ পদ্ধতি

এরসাথে প্রতি গাছে জৈবসার ২০-২৫ কেজি ও বোরার বা সোহাগা ২৫০ গ্রাম হারে প্রতি বৎসর দিতে হবে।

গাছের চারিদিকে ১ মিটার ব্যাসার্ধের একটি গোল রিং করে তার মধ্যে সার ও জল দিতে হবে। এরপর আসে ফসলের সুরক্ষা। নারকেল গাছে অনেক ধরনের রোগ ও পোকার আক্রমন লক্ষ্য করা যায়।

রোগ তার প্রতিকার

১) ফল পচা বর্ষার সময় এই রোগ বেশী হয়। এর আক্রমনে স্ত্রী ফুল, কটি ফল পড়ে ঝরে যায়। পড়ে যাওয়াফলের বোটার কাছে বাদামী পচা দাগ থাকে।

প্রতিকার: গাছে মুচি এলে কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে গাছের মাথায় ১০-১৫ দিন। অন্তর ২-৩ বার করতে হবে।

২) ডগা বা কুঁড়ি পচা প্রথমে মাথার দিকের ১-২ টি কচি পাতায় রোগটি দেখা যায়। পরে কচি পাতার নরম অংশ পড়ে যায়। ধীরে ধীরে গাছটি মারা যায়।

প্রতিকার: আক্রান্ত অংশগুলি হেঁটে ফেলে এর উপর কপার অক্সিক্লোরাইডের লেই লাগিয়ে দিতে হবে এবং পলিথিনের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির জল না ঢোকে। আক্রান্ত গাছে রূপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

৩) কান্ড ফাটা বা কান্ডের রস ঝরা- প্রথমে কান্ডের যে কোন জায়গায় একটা কালো দাগ দেখা যায়। ঐ জায়গা থেকে একটু একটু বাদামী রস ঝরতে থাকে। পরে সেখানটা ফেটে গিয়ে ভিতরের অংশ পচে গর্ত হয়ে যায়।বেশী আক্রমন হলে গাছটি মারা যায়।

প্রতিকার: পচন দেখা দিলেই ঐ জায়গাটি চেঁছে ফেলে দিয়ে কপার অক্সিক্লোরাইডের ঘন লেই ১০-১৫ দিন অন্তর লাগাতে হবে। পরে গর্ত থেকে রস বের হওয়া বন্ধ হলে গর্তটি আলকাতরা দিয়ে রং করে শুকিয়ে নিতে হবে। গর্ত বড় হলে শুকনো অবস্থায় বালি, সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।

৪) ভুয়ো নারকেল- নারকেলের ভিতর জল ও শাঁস থাকেনা কিংবা শাস ঠিকমতো তৈরী হয় না।

প্রতিকার: অপুষ্টিজনিত কারণে এরকম হয় বিশেষতঃ পটাশ সারের অভাবে। প্রতি গাছে বছরে দুবার সুষম সার,

সঙ্গে গোবর সার ও পটাশ সার দিতে হবে।

৫) ফল পড়া : মুচি অবস্থায় ও কচি ফল অনিয়মিত ভাবে ঝরতে থাকে। অনেক সময় গাছের সব ফল করে যায়।

প্রতিকার: বোরন অনুখাদ্যের অভাবে এরকম হয়। এর জন্য প্রতি গাছে বছরে একবার ২৫০ গ্রাম বোরাক্স বা সোহাগা দিতে হবে।।

৬) পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া: সঠিক পরিচর্যার অভাবে এ রকম হয়।

প্রতিকার: সুষম সারের সঙ্গে বছরে একবার জিঙ্ক ও চুন ৮.৫ গ্রাম প্রতি গাছে দিতে হবে।

৭) ফল ফাটা ছোট ও বড় ফল ফেটে যায়।

প্রতিকার: বছরে দুবার ৬৬০ গ্রাম হারে প্রতি বৎসর পটাশ সার দিতে হবে।

৮) গাছ ভেঙে যাওয়া: নারকেল গাছ দিনের বেলা প্রখর সূর্যালোক সহ্য করতে পারে না। তাই ছায়ার জন্য দক্ষিণ ও পশ্চিমদিকে গাছ লাগাতে হবে।

পোকা প্রতিরোধ ব্যবস্থা

১) গন্ডারে পোকা এরা গাছের একেবারে উপরের দিকের কচি পাতা গোটানো অবস্থাতেই কাচির মতো কাটে। ফলে নতুন পাতা বের হলে সেগুলিও কাটা থাকে। কচি ফুল গুলোও নষ্ট করে দেয়

প্রতিকার :গাছের উপরের গর্ত থেকে লোহার শিক ঢুকিয়ে পোকাগুলি বার করতে হবে। বর্ষার সময় ক্লোরপাইরিফস ২০% ১০ মিলি ২৫০ গ্রাম বালির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ভের মধ্যে ভরে দিতে হবে।

২) লাল কেডি পোকা: পোকা কান্ডের নরম অংশে ডিম পারে। ডিম ফুটে গ্রাব বের হয়ে কান্ডের ভিতর প্রবেশ করে ও মজ্জা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। বাইরে থেকে প্রথমে বোঝা যায় না। কান্ডে ছিদ্র, কান্ড থেকে রস বের হওয়া, চিবানো ছিবড়ে, পাতা টানলে সহজে উঠে আসা এসব দেখে পোকার আক্রমন বোঝা যায়। আক্রমন বেশী হলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে পাতা হলদে হয়ে যায়, গাছ ঢলে পড়ে ও মারা যায়।

আরও পড়ুনঃ গোলাপি আলু চাষে চমকপ্রদ লাভ, মাত্র ৮০ দিনে ধনী হবেন কৃষকরা!

প্রতিকার: গাছের গায়ের গর্তের মধ্যে লোহার শিক ঢুকিয়ে পোকাগুলি বার করতে হবে। আলকাতরার সঙ্গে ক্লোরপাইরিফস ২০% ১০ মিলি মিশিয়ে গাছের কান্ডে লাগাতে হবে। অতবা শিকড়ের সাহায্যে গাছে কীটনাশক

প্রযোগ করতে হবে।

৩) এরিফিড মাকড় বা মোবাইল রোগ, নারকেলের উপর খয়েরী কাটা দাগ দেখা যায়। মাকড়গুলি কচি ডাবের ছোবড়ার রস চুষে খায় ও ক্ষত সৃষ্টি করে। পরে ছাল শক্ত হলে রস যেতে পারে না কিন্তু ক্ষতগুলি বেড়ে যায় ও ফাটাফাটা হয়। ফলন ও ফলের বাজার দরও কমে যায়।

প্রতিকার: দু রকম ভাবে এই পোকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ক) রুট ফিডিং/ শিকড়ের সাহায্যে কীটনাশক প্রয়োগ--- নারকেল গাছে তিন রকমের শিকড় দেখতে পাওয়া যায়- সাদা, কালো ও ইটের মতো লাল। গাছের গোড়া থেকে দেড় ফুট দূরে গর্ত খুঁড়ে চারিদিক থেকে ৩-৪ টি ইটের মতো লাল শিকড় বের করে ধারালো ছুরি দিয়ে তেডছা করে কাটা হয়। এরপর প্রতিটি পলিথিন প্যাকেটের মধ্যে ১০০ মিলি জল নিয়ে তার মধ্যে প্রপারজাইট বা স্পাইরোমেসিফেন ০.৫ মিলি গুলে ঐ প্যাকেটের মধ্যে কাটা শিকড় ঢুকিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এইভাবে ২-৩ মাস অন্তর ঔষধ প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। একটি বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে এইভাবে ঔষধ প্রয়োগ করার পর অন্ততঃ ২ মাস ঐ গাছের ফল বা ডার খাওয়া যাবে না।

খ) কীটনাশক স্প্রে - ফেনপাইরক্সিমেট (৫% sc) ১ মিলি জলে গুলে সেন্ড করলে মাকড় নিয়ন্ত্রন হয়।

পুষ্টি পরিকল্পনা - নিয়মিত ভাবে বছরে দুবার সুষম পুষ্টির যোগান দিতে হবে।আমরা যদি একটু যত্ন নিয়ে বাড়ির নারকেল গাছগুলির পরিচর্যা করি তাহলে এই গাছ সত্যিই একদিন কল্পবৃক্ষ হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে নারকেল কিনতে গিয়ে বাজারের চড়া দামের জন্য ভয় পেতে হবে না। বিভিন্ন রান্নায়, পিঠে পুলিতে আমরা নির্দ্বিধায় নারকেলের স্বাদ গ্রহন করতে পারব।

English Summary: Care for coconut trees in this way
Published on: 28 March 2023, 04:00 IST