সুপারি গাছ ও ফল বিভিন্ন প্রকার রোগ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। ভালো ফলন পেতে হলে এ রোগবালাই ব্যবস্থাপনা একান্ত অপরিহার্য। প্রধান প্রধান রোগবালাই এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
সুপারি গাছের ফল পচা রোগ ও তার প্রতিকার
-
রোগের আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত সুপারির বোঁটায় পানি ভেজা ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে অনেকগুলো দাগ একত্রে মিশে বড় আকার ধারণ করে।
-
আক্রান্ত স্থান ক্রমান্বয়ে বাদামী ও ছাই রঙের হয়ে এক সময়ে পুরো সুপারিটাই রোগাক্রান্ত হয়ে পচে ঝরে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ Toamto Farming Process: টমেটো চাষ শিখে হয়ে উঠুন ভাগ্যবান
প্রতিকার ব্যবস্থা
-
এ রোগ দমনের জন্যে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের শুরুতেই সুপারির ছড়ায় ও পাতায় ১% ‘বোর্দো মিক্সার’ অথবা ১.৫% হারে ম্যাকুপ্রাক্স নামক ছত্রানাশক রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ১৫-৩০ দিন পর পর ৩/৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
-
আক্রান্ত গাছের সুপারি ছড়াসহ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং গোড়ায় পানি জমে থাকলে তা নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
সুপারি গাছের কুঁড়ি পচা রোগ ও তার প্রতিকার
-
এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ।
-
এ ক্ষেত্রে ছত্রাক জীবাণু মোচার গোড়ায় কাণ্ডের সংযোগ স্থলের নরম টিস্যু আক্রমণ করে।
-
আক্রান্ত স্থানের টিস্যু প্রথমে হলুদ ও পরবর্তীতে বাদামী রঙ ধারণ করে এবং শেষ পর্যায়ে পচে কালো হয়ে কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।
প্রতিকার
-
রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই আক্রান্ত স্থান চেছে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পরিষ্কার করে ‘বোর্দো পেস্ট’ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থান ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে।
-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাছের পাতা ও মোছায় ১% বোর্দো মিক্সার অথবা ১.৫% কুপ্রাভিট ১৫-২০ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
-
মৃত গাছ, ফলপচা রোগে আক্রান্ত মোচা ও ফল সরিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে এবং বাগানের সমস্ত গাছে ১% বোর্দো মিক্সার অথবা কুপ্রাভিট স্প্রে করে সকল গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে।
সুপারি গাছের মোচা শুকিয়ে যাওয়া ও কুড়ি ঝরা রোগ
-
এ রোগটি প্রধানত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে।
-
রোগের আক্রমণে আক্রান্ত মোছার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হলুদ হয়ে যায়, পরবর্তীতে গাঢ় বাদামী রঙ ধারণ করে এবং পুরো মোচাটি শুকিয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত মোচার কুঁড়িগুলো ঝরে পড়ে।
প্রতিকার
-
আক্রান্ত গাছের মোচা কেটে পুড়ে ফেলতে হবে।
-
রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই ‘ডায়থেন এম-৪৫ অথবা নোইন নামক ছত্রানাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ চা চামচ হিসেবে গাছে মোনা বের হলেই ১৫ দিন পরপর ৪-৫ বার স্প্রে করতে হবে।
মাকড়
-
সুপারি গাছ কয়েক ধরনের মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয় যেমনঃ লাল মাকড়, সাদা মাকড়, হলদে মাকড়।
-
সকল বয়সের সুপারি গাছেই লাল ও সাদা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ পোকা পাতার রস চুষে খায়।
-
ফলে আক্রান্ত পাতা প্রথমে হলুদ ও পরে তামাটে রঙ ধারণ করে এবং পরিশেষে শুকিয়ে যায়। আস্তে আস্তে পুরো পাতাই শুকিয়ে যায়, গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
প্রতিকার ব্যবস্থা
-
এ মাকড় দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে ৫ চা চামচ ‘ক্যালথেন’ নামক মাকড়নাশক পাতার নিচের দিকে ১৫-২০ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
মোচার লেদা পোকা
-
এ পোকার মথ কচি মোচায় ছিদ্র করে ডিম পাড়ে।
-
ডিম থেকে ক্রীড়া বের হয়ে অফুটন্ত মোচার ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং মোচার মধ্যে কচি-ফুলগুলো খেতে থাকে এবং মল ত্যাগ করে সম্পূর্ণ মোছাটাকেই পূর্ণ করে ফেলে।
-
আক্রান্ত মোচায় ফুল আসে না এবং মোচাটিও ফুটে না।
প্রতিকার
-
আক্রান্ত মোচা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে।
-
আক্রান্ত গাছসহ সকল গাছে ১০ লিটার পানির সঙ্গে ৬ চা চামচ সুমিথিয়ন মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পরপর ২-৩ বার মোচায় স্প্রে করতে হবে।
শিঁকড়ের পোকা
-
এ পোকার কীড়া বা বাচ্চা গাছের শিকড়ে আক্রমণ করে।
-
এরা প্রথমে গাছের কচি ও নরম শিকড় খেতে শুরু করে। অতঃপর গাছের শক্ত ও পুরানো শিকড় খেয়ে ফেলে।
-
ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়, উপরের কাণ্ড চিকন হয়ে আসে এবং ফলন কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ রেশম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন এই গ্রামের ১৩০টি পরিবার
প্রতিকার
-
এ পোকার আক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলেই গাছের চারপাশে ১ মিটার ব্যসার্ধে হালকা করে কুপিয়ে বাসুডিন ১০ কেজি অথবা ফুরাটার ৩জি গাছ প্রতি ১০ গ্রাম হারে ছিটিয়ে পানি সেচ দিতে হবে এবং মালচিং করে দিতে হবে।