লাউ, একটি গুরুত্বপূর্ণ কুমড়া জাতীয় সবজি। এর পুষ্টিগুণ এবং ঔষধি গুণাবলীর কারণে এটি কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ের জন্যই উপকারী। এর ফল প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং খনিজ লবণের পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এর শীতল প্রভাবের কারণে এটি সহজে হজমযোগ্য এবং ডাক্তাররা রোগীদের খাদ্যতালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন। লাউ থেকে বিভিন্ন ধরণের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা হয়, যেমন - সবজি, রায়তা, ক্ষীর, কোফতা, আচার এবং মিষ্টি। বহুমুখী হওয়ার কারণে বাজারেও এর ভালো চাহিদা রয়েছে।
লাউয়ের উন্নত চাষ এবং উৎপাদন ক্ষমতা
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে কৃষকরা প্রতি একরে ৮০ থেকে ১০০ কুইন্টাল উৎপাদন পেতে পারেন। যদি উন্নত জাত ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই উৎপাদন প্রতি একরে ১০০ থেকে ১২০ কুইন্টাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। কৃষি বিজ্ঞানীরা কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং সুপারিশকৃত জাত গ্রহণের পরামর্শ দেন, যা উচ্চ ফলন এবং লাভ অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
উন্নত জাতের লাউ
- পুসা সামার প্রোলিফিক লবঙ্গ - এই জাতটি গ্রীষ্ম এবং বর্ষা উভয় ঋতুর জন্যই উপযুক্ত। এর ফল হালকা সবুজ রঙের এবং গড় ফলন প্রতি একরে ৫৬ থেকে ৬০ কুইন্টাল।
- পুসা গ্রীষ্মকালীন প্রলিফিক গোলাকার - এর ফল গাঢ় সবুজ, গোলাকার এবং ১৫ থেকে ১৮ সেমি ব্যাসের।
- লাউ হিসার ২২ - এটি গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে চাষের জন্যও উপযুক্ত। এর ফলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেমি এবং গড় ফলন প্রতি একরে ৮০ থেকে ১০০ কুইন্টাল হতে পারে।
- হিসার বোতল লাউ হাইব্রিড ৩৫ - এই হাইব্রিড জাতের ফল নলাকার, যার গড় ফলন প্রতি একরে ১০০ থেকে ১২০ কুইন্টাল হতে পারে।
মাটির উপযোগিতা এবং ক্ষেত প্রস্তুতি
- লাউ চাষের জন্য, সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ মসৃণ বালুকাময় মাটি এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। মাটির PH স্তর 6.0 থেকে 7.0 এর মধ্যে হওয়া উচিত।
- বীজ বপনের ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ আগে, পচা গোবর সার যোগ করে জমি চাষ করতে হবে।
- ক্ষেত ভালোভাবে প্রস্তুত করার জন্য, ৩ থেকে ৪ বার চাষ করতে হবে এবং প্রতি চাষের পর বোরাক্স প্রয়োগ করতে হবে।
কীটপতঙ্গ ও রোগ ব্যবস্থাপনা
- লাউ ফসলকে কীটপতঙ্গ ও রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।
- কৃষকদের শুধুমাত্র সুপারিশকৃত কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত কারণ কিছু কীটনাশক লাউ গাছের ক্ষতি করতে পারে।
- শিশিরের সময় ধুলো দেবেন না এবং খারাপ বা পচা ফল সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
- কীটনাশক স্প্রে করার আগে ফল ছিঁড়ে ফেলতে হবে।