কৃষিজাগরন ডেস্কঃ লাউ পৃথিবীর অন্যতম পুরনো চাষ হওয়া সবজি, এর জন্ম আফ্রিকায়। লাউ একটি ধ্বনি পরিবর্তিত শব্দ, যার মূল শব্দ 'অলাবু'। লাউকে কোন কোন স্থানে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়। কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস। এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু লাউ নয়, লাউয়ের বাকল, লতা, এমনকি পাতাও খাওয়া যায়।
লাউয়ে প্রচুর জল থাকে, যা দেহের জলের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া জনিত জলশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।লাউ খেলে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে। প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত সমস্যা দূর হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপবিশিষ্ট রোগীদের জন্য এটি আদর্শ সবজি।
বীজ বপনের পদ্ধতি
বীজ বপনের ৮-১২ ঘণ্টা আগে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর জল থেকে বীজ নিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে অতিরিক্ত জল শুকিয়ে পলিব্যাগে বীজ বপন করতে হবে। প্রতি পলিব্যাগে দুটি করে বীজ বুনতে হবে। পলিব্যাগের মাটি যেন শুকিয়ে না যায় খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে হালকা জল দিতে হবে।
জলবায়ু ও মাটি
বেশি শীত ও না আবার বেশি গরমও না এমন আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য উত্তম। বাংলাদেশের শীতকালটা লাউ চাষের জন্য বেশী উপযোগী। তবে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলের তাপমাত্রা শীতকালে কখনও কখনও ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে চলে যায় যা লাউ চাষের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরুপ। লাউয়ের ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে অনুকূল তাপমাত্রা হলো দিনের বেলায় ২৫-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রাতের বেলায় ১৮-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মেঘলা আবহাওয়ায় লাউয়ের ফলন উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি লাউ চাষের জন সর্বোৎকৃষ্ট।
আরও পড়ুনঃ ২৫ শতাংশ বেশি ফলন দেবে আখ চাষের আগে এই বিষয়গুলির উপর বিশেষ যত্ন নিন
কাটুই পোকা দমনের পদ্ধতি
কাটুই পোকা চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়। এটি দমন করার জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি বজ্র ২.৫ ইসি মিশিয়ে বিকাল বেলা গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
রেড পাম্পকিন বিটল দমনের পদ্ধতি
রেড পাম্পকিন বিটল লাউয়ের পাতা খেয়ে ক্ষতি করে থাকে। এটি দমনের জন্যে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সাইরাক্স বা ১ মিলি বজ্র মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ছত্রাক জনিত সাদা দাগ প্রতিরোধ
পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত বেশী হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায় । এটি ছত্রাকজনিত কারনে হয়ে থাকে।ইহার জন্যে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা মনোভিট ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর আক্রমণের শুরু থেকে মোট ২-৩ বার প্রয়োগ করুন।
আরও পড়ুনঃ মরুদেশে এক অনন্য নার্সারি
পাতা সুড়ঙ্গকারী ছোট পোকামাকড় এর আক্রমণ রোধ
ছোট কীড়া পাতার সবুজ অংশ সুড়ঙ্গ করে খেয়ে সুতার মতো আঁকা বাঁকা রেখা দাগ করে ফেলে। বেশি হলে পাতা শুকিয়ে মারা যায়। এটির জন্যে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা উচিত। আঠালো হলুদ ফাঁদ স্থাপন করা। সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ( যেমনঃ কট ১০ ইসি) ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।