ফুলকপি শুধু আর এখন শীতের সব্জি নয় | প্রায় সারা বছর বাজারে দেখা মেলে ফুলকপির | সে কারণেই কৃষকরা বেশি ঝুঁকছেন গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে। প্রায় বিগত বছরগুলিতে গরমে ফুলকপির চাষ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে | কৃষকদের মতে, শীতকালে ফুলকপি চাষের খেতে একটা লাভ বা ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায় | তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষের ক্ষেত্রে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
মূলত জুন-আগস্ট মাসে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ হয় | আর সেই সময়, শুরু হয় বাঙালির উৎসব দুর্গাপুজো, কালীপুজো | এই উৎসবে ফুলকপির চাহিদাও থাকে ব্যাপকভাবে | দাম বেশি হলেও কেনার কমতি থাকেনা, আর সেখানেই থাকে লাভের মুখ | গ্রীষ্মে ফুলকপি চাষে () খরচ বিঘা প্রতি প্রায় ১২ হাজার টাকা | শীতকালে ফুলকপি মাঠে পাইকারি হিসাবে বিক্রি হয় ৩ টাকায় | বিঘা প্রতি মোট লাভ দাঁড়ায় ১৮ হাজার টাকা | কিন্তু, গ্রীষ্মকালে কপির দাম পাওয়া যায় গড়ে ৮ টাকা | বিঘায় লাভ দাঁড়ায় ৪৮ হাজার টাকা,ফলত লাভের অঙ্কটা অনেকটাই বেড়ে যায় | তাই, রাজ্যের কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে | জমি উঁচু ও নিকাশি ব্যবস্থা যুক্ত হলেই গ্রীষ্মকালীন কপি চাষ করা যায়। তাই , জেলার বহু চাষীই এই চাষে যুক্ত হচ্ছেন ইদানীং |
উপযুক্ত মাটি (Suitable soil) :
ফুলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভালো। উঁচু জমি যেখানে জল জমে না এবং সারা দিন রোদ পায় এরূপ জায়গা ফুলকপি চাষ ভালো হয় । এই চাষের মাটিতে যত জৈব পদার্থ থাকবে ফলন ততই ভালো হবে। মাটির অম্লমান বা পিএইচ ৬.০-৬.৫ ফুলকপি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় |
বীজের হার (Seed rate) :
এক শতক জমিতে রোপণের জন্য ২ থেকে ২.৫ গ্রাম বীজের চারার প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে একরপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
ফুলকপির চারা তৈরী:
প্রধানত, ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার লম্বায় ৩ মিটার ও পাশে ১ মিটার হতে হবে | সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে | এরপর যদি চারা ঠিকমতো না বাড়ে তবে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হবে |
রোপণ (Plantation) :
বীজ গজানোর প্রায় ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করা হয় | সারি থেকে সারির দূরত্ব রাখতে হয় ৬০ সেন্টিমিটার বা ২ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারার মধ্যে দূরত্ব রাখতে হবে ৪৫ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট।
সার প্রয়োগ (Fertilizer application) :
জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার, পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে | এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে | ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমওপি ও বোরন সার ৩ কিস্তি -তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তির সার দিতে হবে চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তি সার দিতে হবে চারা রোপণের ৩০ দিন পর এবং শেষ কিস্তির সময় সার দিতে হবে ৫০ দিন পরে | প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির সময় প্রতি ১০ লিটার জলে ১০-১৫ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে পাতায় স্পে করে করতে হবে |
আরও পড়ুন - জানুন ব্রাসেল স্প্রাউট বা মিনি বাঁধাকপির চাষাবাদের নিয়ম
রোগ ও প্রতিকার (Diseases management) :
ফুলকপির সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। এর জন্য চাষের জমি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে | সাইপারমেথ্রিন ( রিপকট/ কট/রেলোথ্রিন ) ১ মিলি/ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে | এছাড়াও, পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা | বোরন সারের ওয়াভবে ফুলে বাদামি দাগ পরে |
নিবন্ধ:- রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - জেনে নিন এপ্রিকট বা খুবানি ফল চাষের বিবরণ