শীতকালীন অজস্র প্রকার সবজির মধ্যে গাজর অন্যতম। গোটা বছর ধরেই গাজর চাষ হলেও, শীতকালে এই সবজির ফলন খুব ভালো পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। তরকারি ও সালাদ হিসাবে গাজরের চাহিদা খাদ্যরসিকদের কাছে বরাবরের প্রিয়। এই সবজি রেখে দিলে সহজে নষ্টও হয় না। তুলনামূলক লাভজনক এই সবজি চাষে বহু কৃষকভাই ভালোরকমের সুবিধাও পেয়েছেন।
গাজর চাষের উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ু: (Soil and Climate)
বেলে দোঁ-আশ মাটি গাজর চাষের পক্ষে সবথেকে উপযুক্ত। আশ্বিন থেকে কার্তিক অর্থাৎ মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর মাস গাজরের বীজ বপনের সবথেকে উপযোগী সময়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় গাজরের ফলন ভালো হয়। গাজর চাষের জন্য উঁচু জমি যেখানে রোদ পড়ে সেরকম জায়গা নির্বাচন করা উচিত।
জমি প্রস্তুতকরণ: (Soil Making)
১) গাজরের শেকড় মাটির বেশ গভীরে প্রবেশ করে বলে, গাজর চাষের জমি ৮-১০ ইঞ্চি গভীর করে চাষ করতে হবে।
২) জমিতে ৪ থেকে ৫টি চাষ দিলে এবং মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করলে গাজরের ফলন ভালো হবে।
৩) জমির মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে।
৪)গাজরের বীজ সারিতে বপন করলে গাজরের যত্ন নিতে সুবিধা হয়। তাই ৮-১০ ইঞ্চি দূরত্ব রেখে সারি তৈরি করা উচিত।
বীজ বপন পদ্ধতি: (Planting)
১. জমিতে বীজ পোঁতবার আগে গাজরের বীজ একদিন ভিজিয়ে রাখা উচিত
২. গাজরের বীজ খুব ছোট আকারের হয়। বীজ বপনের সময় তাই বীজের সঙ্গে ছাই বা মাটির গুঁড়ো মিশিয়ে নিলে সুবিধা পাওয়া যায়।
৩. সারিতে বীজ লাগালে। ২-৩ ইঞ্চি দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে।
সার প্রয়োগের পদ্ধতি: (Fertilizer)
গাজরের ভালো ফলনের জন্য গাজর চাষের জমিতে বেশি পরিমানে জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত। মাটিতে জৈব সার দিলে মাটির গুণাগুণ দিনকে দিন উন্নত হবে। হেক্টরপ্রতি গাজর চাষে সার প্রয়োগের পদ্ধতি নিম্বরূপ -
সার সারের পরিমাণ (প্রতিহেক্টরে)
গোবর/জৈবসার ১০ টন
ইউরিয়া ১৫০ কেজি
টিএসপি ১২৫ কেজি
এমপি/এসওপি ২০০ কেজি
সারের পরিমাণ (Quantity of Fertilizer)
সম্পূর্ণ গোবর ও টিএসপি এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও এমপি সার জমি তৈরি করার সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া চারা গজানোর ১০-১২দিন ও ৩৫-৪০ দিন পর সমান ভাবে দুই কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। একই রকম ভাবে বাকি অর্ধেক এমপি সার গজানোর ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন:Turkey Rearing: টার্কি চাষের সহজতম পদ্ধতি
পরিচর্যা: (Caring)
বীজ বপন হয়ে গেলে গাজরের ক্ষেতে হালকা সেচ দেওয়া ভালো। সেচের পর জমিতে জো দেখা দিলে নিড়ানির মাধ্যমে চটা ভেঙে মাটি আলগা করে দেওয়া উচিত। চারা বের হওয়া শুরু হলে আরও একবার সেচ দিলে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ভালো হয়। ফসল তোলার সময় প্রয়োজন পড়লে আরও একবার সেচ দেওয়া যেতেই পারে। জমিতে জল জমলে, সেই জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা উচিত, নাহলে ফসলকে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
শীতকাল কৃষিজীবীদের কাছে এক পরম আনন্দের সময়। কৃষকদের তৎপরতায় এই ঋতুতেই শস্যক্ষেত্র ভরে ওঠে সবুজ শাক-সবজিতে। গাজর এই শীতকালীন সবজিদের মধ্যে অন্যতম এক সবজি। গাজর চাষ করে বর্তমানে বহু কৃষক লাভবান হচ্ছেন। তাই নির্দ্বিধায় বলাই যায়, গাজর চাষ করে লক্ষ্মীলাভ আজ বর্তমানে কোনও ব্যাপারই নয়।
আরও পড়ুন:Avocado Farming Procedure: অ্যাভোকাডো চাষ করে হয়ে উঠুন সম্পদশালী কৃষক