অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল হল নাশপাতি। এই ফলের গাছের উৎপত্তি স্থল ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে বলে ধারণা করা হয়। মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ায় নাশপাতির চাষ হলেও, বর্তমানে আমাদের রাজ্যেরও, ঢালু পাহাড়ি অঞ্চলে এই ফলের চাষ করা হচ্ছে। শোনা যায়, প্রাচীন গ্রিসে এই ওষধি ফল বমন রোগ দূর করার জন্য ব্যবহার করা হতো। নাশপাতির ৮৩% জলে পরিপূর্ণ। শক্ত মাটিতে নাশপাতির ভালো চাষ হয়।
চাষ পদ্ধতি (Cultivation):
উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি নাশপাতি চাষের জন্য আদর্শ। আমাদের দেশে পার্বত্য পাহাড়ি অঞ্চলে অতি সীমিত আকারে নাশপাতির চাষ করা হচ্ছে। কুঁড়ি সংযোজন ছাড়াও গুটি কলমের মাধ্যেম নাশপাতির বংশ বিস্তার করা যায়।
চারা রোপন (Planting):
এপ্রিল থেকে মে মাস নাশপাতির চারা রোপণের সঠিক সময়। এরপর কলম কেটে জুলাই-অগাস্ট মাসে নাশপাতি রোপন করার জন্য উপযোগী সময়। ৪-৬ মিটার দূরত্ব রেখে নাশপাতির গাছ লাগানো উচিত।
সার দেওয়ার পদ্ধতি (Fertilizer):
নাশপাতি গাছের সার হিসাবে জৈব সার সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও অন্যান্য সারও গাছে প্রয়োগ করা দরকার। নিচে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সারের উল্লেখ করা হলো।
গোবর-১৫ কেজি
খৈল-১ কেজি
টিএসপি-৫০০-৬০০ গ্রাম
এমপি-১৫০-২০০ গ্রাম
একটি গর্ত করে এই উপাদানগুলো একসাথে মিশিয়ে পচিয়ে নিতে হবে। গাছ লাগানোর এক মাস পর থেকে গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার দিতে হবে। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী গাছে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে। বয়স্ক ও ফলন্ত গাছে বর্ষা মৌসুমের আগে এবং পরে মধ্য জৈষ্ঠ্য এবং আশ্বিনের শেষে পচা গোবর ৩০ কেজি, খৈল ২ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, এবং টিএসপি ৪০০ গ্রাম দিলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
সেচ (Irrigation):
নাশপাতির চারা রোপন হয়ে গেলে জলঝরির মাধ্যমে ঝরণা দিয়ে বেশ কিছুদিন সেচ দিতে হবে। সবসময় খরা মরসুমে সেচ দেওয়া ভালো। সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ফুল আসা ও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক, তাই জন্য এই নির্দিষ্ট সময়ে সেচ গাছের পক্ষে উপকারী। বর্ষাকালে যাতে গাছের গোড়ায় জল জমতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
আরও পড়ুন: Mustard Seed Cultivation Process: অতি সহজ উপায়ে করুন সর্ষে চাষ
ডাল ছাটাই:
গাছের উচ্চতা কিছুটা বাড়লেই অর্থাৎ ৪০-৫০ সেমি হওয়া মাত্রই গাছের ডগা ভেঙে দেওয়া উচিত। গাছের গোড়ার দিকে পোষক শাখা দেখা দিলে তা কেটে দিতে হবে। গাছ বড় হয় মাত্রই ডালপালাগুলো মাটির দিকে বেঁকিয়ে দিলে অধিক ফলন পাওয়া যাবে।
রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন (Pest and Disease Control)
অন্যান্য গাছের মতোই নাশপাতি গাছেও বিভিন্ন রোগ অথবা পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে সবসময়, রোগ ও পোকার থেকে গাছকে বাঁচানোর জন্য গাছে প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ (Harvest):
কলম রোপনের ২ থেকে ৩ বছর পর থেকেই গাছ ফল দিতে শুরু করে। নাশপাতি গাছে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ ফুল আসে এবং জুলাই থেকে অগাস্ট মাসের মধ্যে এই ফল পেকে ওঠে। একটি পূর্নবয়স্ক নাশপাতি গাছ কম করে ২৫০ থেকে ৩০০ টির মতন ফল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
আরও পড়ুন: Red cabbage Farming: লাল বাঁধাকপি চাষের সহজতম পদ্ধতি