তিলের নাড়ু সকলেই খেয়েছেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন যেই নাড়ুর স্বাদ লক্ষ্মী পূজা বা সরস্বতী পূজায় মন গলিয়ে দেয়, তা তিল বীজ দিয়ে তৈরী? প্রসাধনী শিল্পেও তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে আজকাল। তিল হল একধরনের তৈল বীজ। সরিষা, বাদাম, সূর্যমুখী চাষের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রাজ্যে তিলেরও চাষ হয়। তিল তেলে অসম্পৃক্ত স্নেহ অম্ল অধিক পরিমাণে থাকায় তা অন্যান্য তৈল বীজের থেকে অনেকাংশে উপকারী। সরষের তেলে সম্পৃক্ত স্নেহ অম্লের পরিমাণ বেশী থাকায় বরং এই তেল অতিরিক্ত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং হার্ট সংক্রান্ত অসুখ দেখা দিতে পারে। তিলের তেল বরং সর্ষের থেকে বেশি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত বলে বহুদিন ধরে বিবেচিত।
তিলের চাহিদা বাজারে গোটা বছর ধরে থাকায় চাষিরা সহজেই এই বীজের চাষ করতে পারেন। দিনকে দিন তিলের কদর বাড়তে থাকায় চাষিরা সহজেই এই চাষ করে উপকৃত হবেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক তিল চাষের পদ্ধতি
চাষের জমি তৈরী (Land Preparation)
তিলের চাষ মূলত পলি দোঁয়াশ বা বেলে মাটিতে হয়। ৩-৪ বার চাষ দিলেই মাটি আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে হয়ে যাবে। এরপর সুষম সার ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি তৈরী করে নেওয়া উচিত। জমিতে আলু চাষের পর তিল বোনা হলে রাসায়নিক সার দেওয়ার দরকার পড়ে না।
চাষের সময় (Cultivation Time)
ফাল্গুন মাস তিল বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তিল বীজ বপন করে নেওয়া উচিত। সময় অতিক্রম করে বীজ বুনলে ফলন কম হয়ে যেতে পারে।
বীজ রোপন (Planting)
তিল বীজ ছিটিয়েও বোনা যায় অথবা সারি করে। তবে সারি করে বুনলেই বীজের ভালো বুনন হয়। তিল বীজ সারিতে বুনলে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব কম করে ১০-১২ ইঞ্চি হবে এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ৪ ইঞ্চি হবে। ছিটিয়ে যদি তিল বীজ বোনা হয় তাহলে মই দিয়ে বীজকে ভাল ভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে বীজের অঙ্কুরোদগম সঠিক ভাবে হয়।
সার (Fertilizer)
মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করা না থাকলে প্রতি একরে ৪৪ কেজি নিম কোটেড ইউরিয়া, ১০ কেজি ফসফেট,৬৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ১০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। তৈল বীজের ফলনে গন্ধক বা সালফারের ভূমিকা বেশি তাই মিশ্র সার প্রয়োগ করা ভালো কারণ মিশ্র সারে (সিঙ্গল সুপার ফসফেট) প্রতি ১০০ কেজিতে ১২ কেজি গন্ধক থাকে।
আরও পড়ুন: Sweet Tamarind Farming: টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ
সেচ (Irrigation)
তিল চাষ করতে বেশি জল লাগে না। একটি সেচের সংস্থান থাকলে ৩০ দিনের মাথায় এবং ২টি সেচের সুযোগ থাকলে দ্বিতীয়টি ৫০-৫৫ দিনের মাথায় দিলেই হবে।
পোকামাকড় ও রোগ দমন (Pest and Disease control)
তিল গাছে পোকার আক্রমণ কম হলেও ল্যাদা ও বিছা পোকা তিলের ফসলের ক্ষতি করতে পারে। তিল গাছে কীটের আক্রমণ হলে জৈব কীটনাশক যেমন বায়োনিম, নিমারিন জলে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। পাতা কোঁকড়ানো রোগ দেখা দিলে রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে এবং যে কোন একটি অন্তর্বাহী কীটনাশক স্প্রে করলে ভালো হয়।
ফসল সংগ্রহ (Harvest)
গাছের মাঝামাঝি অংশের শুঁটি ভেঙে দানা পুষ্ট হয়েছে দেখলে ফসল কেটে কয়েকদিন ঝাড়াই মাড়াই করে ও শুকিয়ে রাখতে হবে। পরিচর্যা সঠিক ভাবে নিলে একর প্রতি ৪.৫-৫.৫ কুইন্টাল ফলন মেলা কোনও ব্যাপারই নয়।
আরও পড়ুন: Kisan Credit Card – বাড়ি বসেই পেয়ে যান কিষান ক্রেডিট কার্ড, এখনই করুন আবেদন