কৃষিজাগরন ডেস্কঃ দেশে গম উৎপাদন Wheat Farming কম হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর একটি প্রধান কারণ হল সেচের অভাব বা সময়মতো ভালো উপায়ে সেচ না করা। বর্তমানে দেশে প্রচণ্ড ঠান্ডা যা গম উৎপাদনের জন্য ভালো, এ কারণে এ বছর দেশে গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের গম ফসলের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।
গম ফসলে সেচ ব্যবস্থাপনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। গম বপনের পর কখন সেচ দিতে হবে তা নির্ভর করে মাটিতে আর্দ্রতার পরিমাণ, জলের চাহিদা এবং আবহাওয়ার ওপর। গমের ভালো উৎপাদনের জন্য ৩৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার জল প্রয়োজন, যা বিভিন্ন সময়ে সেচ দিয়ে পূরণ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ Wheat Farming Process: গম চাষের সহজ উপায়
গমে কত সেচের প্রয়োজন হয়?
সাধারণত, গমের জন্য ৪ থেকে ৬টি সেচের প্রয়োজন হয়। এতে কৃষকদের বেলে মাটিতে ৬ থেকে ৮ বার এবং দোআঁশ মাটিতে ৩ থেকে ৪ বার সেচ দেওয়াই যথেষ্ট। বেলে মাটিতে ৫-৬ সেন্টিমিটার জল দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে এবং দোআঁশ মাটিতে ৬ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরতা দিয়ে সেচ দিতে হবে। এই সমস্ত সেচগুলি যখন গম গাছের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকে তখন করা উচিত যাতে সেচ থেকে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।
কখন গমে সেচ দিতে হবে?
সাধারণত, কৃষকের পর্যাপ্ত সেচের সুবিধা থাকলে তাকে গমে ৪ থেকে ৬ বার সেচ দিতে হবে। কৃষকরা এই সেচটি গমের বিভিন্ন পর্যায়ে করতে পারেন যা নিম্নরূপ:-
প্রথম সেচ: বীজ বপনের ২০-২ দিন পর, রুট গঠনের সময়।
দ্বিতীয় সেচ: মুকুল বিকাশের সময়, বপনের ৪০-৪৫ দিন পর।
তৃতীয় সেচ: বীজ বপনের ৬৫-৭০ দিন পর, কান্ড গঠনের সময়।
চতুর্থ সেচ: ফুল আসার সময়, বপনের ৯০-৯৫ দিন পর।
পঞ্চম সেচ: বীজ বপনের ১০৫-১১০ দিন পর।
ষষ্ঠ চূড়ান্ত সেচ: বীজ বপনের ১২০-১২৫ দিন পর যখন দানা শক্ত হয়ে যাচ্ছে তখন এটি করতে হবে।
চাষ পদ্ধতি (Farming Process)
পশিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেই গমের চাষ বেশি হয়ে থাকে। গম চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি জমি বেশি উপযোগী। তবে মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ করা যায়। দোআঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য সর্বোত্তম। আবার সহজে পানি নিষ্কাশিত হয়, এমন এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও গমের চাষ করা যায়। লবণাক্ত মাটিতে গমের ফলন কম হয়। বোনার জন্য একর প্রতি গম বীজের প্রয়োজন হয় ৪৮ কেজি বা বিঘা প্রতি ১৬ কেজি।
আরও পড়ুনঃ কৃষিযন্ত্রপাতি কেনায় ৫০ শতাংশ ছাড়,আবেদন করতে কি কি লাগবে?
বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮৫% বা তার বেশি হলে ভালো হয়। ৮০% এর নিচে হলে প্রতি ১ ভাগ কমের জন্য একরপ্রতি ৪০০ গ্রাম গম বীজ বেশি বুনতে হয়। তবে ৬০% এর নিচে হলে সেই গম বীজ বোনা উচিত নয়। বোনার আগে গম বীজ প্রোভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম হারে) বা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে) দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। বীজ শোধন করলে বীজবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং নতুন গজানো চারা সুস্থ ও সবল থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এতে গমের ফলন শতকরা ১০-১২ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সারিতে অথবা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। তবে সারিতে বুনলে জমি তৈরির পর লাঙ্গল দিয়ে বা বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে সরু নালা করে ২০ সেমি. দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি. গভীরতায় বীজ বুনতে হয়। ধান কাটার পরপরই পাওয়ার টিলারচালিত বীজ বোনার যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্পতম সময়ে গম বোনা যায়। এই যন্ত্র দিয়ে একসঙ্গে জমি চাষ, সারিতে বীজ বপন ও মইয়ের কাজ করা যায়।