আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি বর্তমানে আমাদের দেশের দুর্গমতম স্থানের কৃষকদের কাছেও সমাদরের সাথে জ্ঞাত ও গৃহীত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যানকর উপস্থিতিতে। সবুজবিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতিতে রোগপোকার আক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে কৃষকদের ক্ষতিকর কীটনাশকের (কীটনাশক বলতে - কীটশত্রুনাশক, ছত্রাকনাশক, নিমাটোড/কৃমিনাশক, আগাছানাশক ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোনকে বোঝায়) স্বরণাপন্ন হতে হয়। তারপর থেকে কৃষক রোগ-পোকার আক্রমণ থেকে অতি দ্রুত ফসল বাঁচাতে অনেকক্ষেত্রেই অতিরিক্ত কৃষিবিষ / কীটনাশক বারবার ব্যবহার করতে থাকে। এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার যেমন মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক তেমনই ক্ষতিকর মাটির উর্বরতা ও ফসলের জন্য।
একথা উল্লেখ্য ১৯৫৮ সালে কেরালা ও তামিলনাড়ুতে, ১৯৬২ সালে পশ্চিমবঙ্গে ও ১৯৬৩ সালে বোম্বেতে খাদ্যে কীটনাশক মিশে গিয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরপর তদন্ত কমিশন গঠিত হয় ও ১৯৬৮ সালে কীটনাশক আইন পাশ ও লাগু হয়। এই আইন তৈরি হয় যাতে কীটনাশক থেকে মানুষ, পশুপাখী বা পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় এবং কৃষকের স্বার্থ যেন বিঘ্নিত না হয়। কীটনাশক নিয়ম, ১৯৭১ এবং এর সর্বশেষ সংযোজনী ও সংশোধনী ২০১৮, VIII নং অধ্যায়ের ৪৪ নং নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহৃত কীটনাশকের প্যাকেট, অতিরিক্ত কীটনাশক, কীটনাশক ধোয়া জল, মেয়াদ উত্তীর্ণ কীটনাশক ইত্যাদি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে লোকালয় থেকে দূরে যাতে জল, পরিবেশ দূষিত না হয় সেসমস্ত নষ্ট করে ফেলার দায়ীত্ব প্রস্তুতকারী সংস্থার এবং অপারেটরদের। এর জন্য কৃষকদের তরফ থেকেও সহায়তা প্রয়োজন।
ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (IPM) বা সুসংহত উপায় রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অর্থ হল সঠিক সময় ও সঠিক মাত্রায় প্রয়োজন ভিত্তিক কৃষিবিষ প্রয়োগ যা মাটি, বাতাস, পশুপাখি তথা বাস্তুতন্ত্রকে সুরক্ষিত রেখে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত কৃষিবিষ প্রয়োগের ফলে বন্ধু পোকা-মাকড়, মাটির উপকারী জীব ও জীবাণু মারা পড়ছে ফলে রোগের প্রকোপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগ পোকা আরো শক্তিশালী হয়ে কৃষিবিষ প্রতিরোধি হয়ে উঠছে। এর থেকে রেহাই পেতে সুসংহত রোগ-পোকা ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে যার মূল উদ্দেশ্য হল সুস্থিত কৃষি।
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)