পৃথিবীর সবুজ স্থলভাগের ২০ শতাংশই এর দখলে। আজকাল কৃষকদের অধিকাংশ সময়ই তার পালিত পশু গুলোর জন্য বেশির ভাগই নির্ভর করে হয় কেনা খাবার এর উপর।তবে ব্যবসায়িক ভাবে বেশি লাভজনক ও পশু প্রাণীর স্বাস্থ্যকর খাবার হলো একমাত্র ঘাস।আমাদের দেশে অনেক কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে এইসব ঘাস এর চারা পাওয়া যায়।খামারিদের কাছে সবচেযে জনপ্রিয় ঘাস নেপিয়ার। এরপরেই পাকচুং। এছাড়া ইপিল, গিনি, ভুট্টা, সুদান, সুদান-শরগম এগুলোও কমবেশি চাষ হয়। যদিও সবচেযে বেশি আমিষ সমৃদ্ধ ঘাস আলফালফা । তবে এই ঘাষগুলোর জন্য উঁচু জমির দরকার। বর্তমান প্রেক্ষিত অনুযায়ী অঞ্চলভেদে এইসব ঘাসগুলির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।এবার আসুন এই ঘাস নিয়ে একটু জানি
ঘাসের বৈজ্ঞানিক নাম পোয়াসিয়ে (Poaceae) বা গ্রামিনেয়ে( Gramineae)
ঘাস বা তৃণ একটি সাধারণ শব্দ যা একধরণের সপুষ্পক উদ্ভিদকে বোঝায়। বিভিন্ন ধরনের ফসল যেমন ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি ঘাস বা তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। এমনকি বাঁশও ঘাস গোত্রভুক্ত। যতো রকম গাছ আছে তার ভেতর ঘাসের ভূমিকাই প্রাণিদের জীবনে সবচেয়ে বেশি। ধান গম যব জাতীয় যতরকম দানাশস্য বা সিরিয়াল আছে তার সবই ঘাস শ্রেণির। মধ্যপ্রাচ্যের ক্রিসেন্ট বেল্ট থেকে এ জাতীয় দানা-ঘাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এই ঘাস দ্বারা নিয়মিত খাদ্য সরবরাহের সুবিধার কথা ভেবেই হয়তো আমাদের শিকারি পূর্বপুরুষেরা বের হয়ে এসেছেন গুহার অন্ধকার থেকে। হুইস্কি ভদকা বিয়ার জাতীয় নানা ধরণের পানীয় এই ঘাস থেকে তৈরি হতে পারে। কাগজ তৈরি, ঘর ছাওয়া, জ্বালানি, পোষাক, ইন্সুলেশন, কন্সট্রাকশন, লন, খেলার মাঠ বহু জায়গায় ঘাসের নানারকম ব্যবহার দেখতে পাই আমরা। উইমবেলডন টেনিসের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল কোর্ট তৈরি হয় প্রাকৃতিক ঘাস দিয়ে। গতিশীলতার দিক বিবেচনা করে গল্ফ কোর্সে ব্যবহার করা হয় ৩ ধরণের ঘাস। টার্গেটের কাছে ‘পুলিং গ্রিন’ এলাকায় যে ঘাস লাগানো হয় তা হয় খুব ছোট যাতে সহজে গড়িয়ে যেতে পারে গল্ফ বল।
বরফ ঢাকা তুন্দ্রা অঞ্চল, জলে ডাঙ্গায় পাহাড়ে মরুতে সব জায়গাতেই ঘাস আছে। কচুর লতির মতো রাইজোম আর স্টোলনের মাধ্যমে ঘাসের দ্রুত বিস্তার ঘটে। আর আগুন লাগলে বা লন মোয়িং করলেও ঘাস ধ্বংশ হয় না কারণ যেখান থেকে ঘাসের নতুন পাতা বের হয়, সেই ভাজক কলা অঞ্চল বা মেরিস্টেম থাকে অনেক ক্ষেত্রেই মাটির একটু নিচে। এই অবিনাশিতার সুযোগ নিয়ে ভবিষ্যতে নিশ্চিন্তে বায়োফুয়েল চালিত অতি-আধুনিক লন-মোয়ার ব্যবহার করবে মানুষ, যার দ্বারা কর্তিত ঘাস থেকেই তৈরি হবে বায়ো-ফুয়েল। পৃথিবীর সমগ্র সবুজ অঞ্চলের প্রায় ২০% ঘাস দিয়ে আবৃত। প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির ঘাসের সন্ধান পাওয়া গেছে এ যাবৎ কিন্তু এখনও আমাজনের বর্ষাবনে অনেক ঘাসের প্রজাতি অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
- অমরজ্যোতি রায়