ধানের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য কৃষকরা রোপণ থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ধানের নার্সারির ভালো যত্ন নেন। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তনে ধান চাষে উদ্বেগ বাড়তে থাকে কৃষকদের। কারণ পরিবর্তনশীল মৌসুমে ফসলে পাতা মোড়ানোর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এই অবস্থায় রোগ সম্পর্কে কৃষক ভাইদের সচেতন হতে হবে।
মাজরা পোকা রোগের লক্ষন
ধানের বীজতলা ও মূল ক্ষেতে লাগানোর পর থেকে শীষ আসা পর্য" এই পোকা আক্রমন করে। পোকার কীড়া মূলকান্ড ছিদ্র করে ভেতরে ঢোকে এবং ভেতরের নরম অংশ খায়। তার ফলে মূল পাশকাঠি শুকিয়ে যায়। আক্রা" পাশকাঠি সহজেই টেনে তোলা যায়।
ধানের শীষ আসার পরে পোকার কীড়া শীষের ধারক কান্ডে ফুটো করে ঢুকে নরম অংশ খায়, ফলে শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। শীষের ভেতরে দানা তৈরী হয় না বা অপুষ্ট হয়।
কখন হয় ?
পোকার আক্রমণ বছরে দুইবার দেখঅ যায়। বোরো খন্দে মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে মাস পর্য এবং আমন ধানে আগষ্ট থেকে অক্টোবর পর্যন।এপ্রিল-মে মাসের আক্রমন সবচেয়ে ক্ষতিকারক, কারণ এই সময়ে বোরো ধানে শীষ আসে।শীতকালে পোকা আমন ধান কাটার পর জমিতে মাটির মধ্যে ধানের নাড়ায় শীতঘুমে থাকে।শীতের পর গরম পড়তে থাকলে মথ বেরিয়ে আসে ও বোরো ধানে আক্রমণ করে।
আরও পড়ুনঃ তরমুজ চাষ করা খুবই সহজ, শুধু শিখে নিন এই পদ্ধতি, লাভ হবে লাখে
ভেঁপু পোকা রোগের লক্ষন
-
সাধারণত আমন ধানে নীচু জমিতে এই পোকার আক্রমন বেশি হয়। বীজতলা থেকে ধানের ঘোড় আসার আগে পর্য এই পোকা আক্রমন করে।
-
মূল ধান ক্ষেতে পাশকাঠি ছাড়া শুরু থেকে পাশকাঠি পরিপুষ্ট হওয়া অবস্থা পর্য আক্রমন করে।
-
ডিম ফেটে পোকার ছোট কীড়া পাতা বেয়ে কান্ডের নীচে নেমে ফুটো করে ভেতরে ঢোকে এবং কান্ডের নরম অংশ খেয়ে বড় হয়।
-
খাওয়ার সময় এরা বিষ জাতীয় পদার্থ নিঃসরণ করে, যার ফলে গাছের ডগা সরু লম্বা পেঁয়াজ কলির
-
মতো আকার ধারণ করে।ঐ পাশকাঠির মাথায় একটি ছোট পাতা থাকে। এরপর ঐ পাশকাঠির আর কোনও বৃদ্ধি হয়না।আক্রা"পাশকাঠি থেকে কোনও শীষ বের হয় না। গাছে থোড় আসতে শুরু করলে আক্রমন বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ উন্নত পদ্ধতিতে সিসল চাষের মাধ্যমে আদিবাসী চাষির অর্থনৈতিক উন্নয়ণ
কখন হয়?
দীর্ঘদিন ধরে হালকা বৃষ্টিপাতসহ মেঘলা দিন, উচ্চ আর্দ্রতা (গড় ৭৫%), মধ্যম তাপমাত্রা (২৩-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এই পোকার দ্রুত বংশ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
উন্নত প্রথায় উচ্চফলনশীল জাতের চাষ, মাত্রাতিরিক্ত সারের ব্যবহার ও ধান ঘন কওে রোয়া করার ফলে এই পোকার আক্রমন বেশি হয়।
জুলাই-আগষ্ট মাসে যখন বেশি বৃষ্টিপাত হয় ও ধানের দ্রুত পাশকাঠি বের হয় সেই সময় এই পোকার আক্রমন সবচেয়ে বেশি। নভেম্বও মাস থেকে বিশেষ করে ধানে থোড় আসা শুরু হলে এদেও আক্রমন কমে আসে। এ সময় পোকা আলের ঘাসে ডিম পাড়ে ও শীতঘুমে থাকে।
পাতা মোড়া পোকা লক্ষন:
-
পোকা লালা দিয়ে তৈরী সুতোর সাহায্যে পাতার দুই কিনারা লম্বা-লম্বি মুড়ে ফেলে ভেতর থেকে সবুজ অংশ চেঁচে খায়।
-
আক্রাশ পাতার মধ্যে বড় বড় সাদা ছোপ দেখা যায় যা ধীরে ধীরে বাদামী হয়ে শুকিয়ে যায়।
কখন হয়?
-
বর্ষা নামার আগে দীর্ঘদিন একটানা গরম থাকলে বা বর্ষাকালে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে উচ্চ আর্দ্রতা ও মধ্যম তাপমাত্রা যুক্ত আবহাওয়ায় এই পোকার আক্রমনের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়
-
বর্তমানে উচ্চফলনশীল জাতের চাষ ও মাত্রাতিরিক্ত সারের ব্যবহারের ফলে আক্রমন অনেক গুন বেড়ে গেছে।
দয়ে পোকার লক্ষন
-
পাতার খোলা ও পাতার সংযোগস্থলে সাদা পাউডারের মতো হলে পোকার উপস্থিতি বোঝা যায়। • হালকা গোলাপি রঙের পোকা কান্ড ও পাতার খোল থেকে রস চুষে খায়।
কখন হয়?
-
সাধারনত দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হলে, শুষ্ক আবহাওয়ায় এই পোকার আক্রমন দেখা যায়।
-
পোকার পরিণত ও অপরিণত দশা উভয়েই গাছের ক্ষতি করে।
-
ছোট বাদামী পোকা একসাথে গাছের গোড়ায় বাস কওে এবং কান্ড থেকে রস চুষে খায়। প্রাথমিকভাবে একটি ক্ষেতে কিছু কিছু ঝাড়ে আক্রমন কওে বংশবিস্পর করে।
-
প্রথম দিকে পাতার উপরের দিকে হলুদ দাগ দেখা যায় যা পরে বাদামী হয়ে শুকিয়ে যায়।
-
বেশি আক্রমনে আক্রান গাছ ঝলসে যায়। আক্রমন চক্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে। দেখে মনে হয় গাছ চাক চাক হয়ে পুড়ে গেছে।