বর্তমানে চাষবাসের যা খরচ তা ভাবাই যায় না তার ওপর রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের (Disease & Pest Management) খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কৃষকরা এই ধরনের চাষবাস করে ব্যপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। লেবার খরচ, সারের খরচ, বীজের দাম সব মিলিয়ে বর্তমানে চাষে লাভ করা কঠিন ব্যাপার। এখন যদি কৃষি কাজে লাভ করতে হয় তাহলে এমন চাষের পরিকল্পনা করতে হবে যেখানে মজুরী খরচ লাগবে, সর্বপরি জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে মাটি, জল, বাতাস ইত্যাদির দূষণ রোধ করতে হবে।
আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় (Smart Farming) উৎপাদন বেড়েছে অথচ প্রতিদিন ক্রমাগত মাটির উর্বরতা ও উৎপাদিকা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক –এর বহুল ব্যবহার ছাড়া উন্নতমানের ফলন পাওয়া সম্ভব নয়, চাষিদের এই বদ্ধমূল ধারণা এবং সময়ের অগ্রগতি, এই দু’য়ের কারণে এগুলির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চমাত্রায় এই রাসায়নিকগুলির লাগামছাড়া ব্যবহারের ফলে মাটি ও কৃষি পণ্যের উপর তার কুপ্রভাব পড়েছে। সাথে সাথে পরিবেশ ও জৈব বৈচিত্র্যের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। দশ হাজার বছরের কৃষিতে ন’হাজার ন’শো বছরে মাটির জৈব পদার্থ ৫ – ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। গত ১০০ বছরে তা আরো হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে ০.৫ – ১ শতাংশে নেমে এসেছে বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায়। এ কারণে, মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা ঠিক রাখতে, রাসায়নিকগুলির বহুল ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হওয়া রোধ করতে, পৃথিবীর বুকে নিরাপদ জীবন-যাপন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটির গুণাগুণ বজায় রাখার জন্যে জৈব কৃষি ব্যবস্থার একান্ত প্রয়োজন। সর্বোপরি, আমাদের নির্মল পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্যে পরিবেশবান্ধব কৃষি আবশ্যকীয়ভাবে দরকার। আর পরিবেশবান্ধব কৃষির বাস্তবায়ন করতে হলে জৈব কৃষির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
বর্তমানে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে যে ফসল উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারের সাধারণ ফসলের থেকে বেশী দাম পাওয়া যাচ্ছে – ফল, ফুল, শাক-সব্জী, দানা জাতীয় শস্য যাই চাষ হোক না কেন বাজারের সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে দাম বেশী ও সেই সাথে চাহিদাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। শহর এলাকার বেশীরভাগ মানুষই চাইছেন জৈব শাক-সবজি, ফল ও ফসল। কৃষকদের এখন এই ধরণের চাষের প্রতি নজর দিতে হবে।
জমিতে জৈব সার (Organic Fertilizer) প্রয়োগ না করে কেবল রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভর করে চাষ করলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকছে না ফলে বৃদ্ধি দশা থেকেই রোগ পোকায় আক্রান্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমান জৈব সার ব্যবহার করে ও সেই সাথে মাত্রা অনুযায়ী রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষ করলে রোগ পোকার আক্রমণ অনেকটাই কমবে, কিন্তু কৃষকরা সেদিকে নজর দিচ্ছেন না।
কিছু প্রগতিশীল আধুনিক কৃষক আছেন যারা জৈব নির্ভর চাষ করছেন কিন্তু পাশাপাশি জমিতে যারা চাষ করছেন ও ইচ্ছেমত রাসায়নিক সার, বিষ প্রয়োগ করছেন – তাদের জমির পোকাগুলো এসব জমিতে আক্রমণ করে ক্ষতি করছে ফলে জৈব চাষি আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে দরকার সবাই জৈব পদ্ধতিতে চাষ করুন অথমা যিনি জৈব পদ্ধতিতে চাষ করছেন তার পুরো জমিটা শেড নেট দিয়ে ঘিরে চাষ করুণ যেটা ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার।
আরও পড়ুন - এই মরসুমে চিচিঙ্গা চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
পলি হাউসের মধ্যে জারবেরা ফুল চাষ করা যাবে যার আন্তর্জাতিক বাজারে যথেস্ট দাম পাওয়া যায় – এছাড়া অসময়ে টমেটো ক্যাপসিকাম, বেগুন, লঙ্কা সব কিছু চাষ করে কৃষক লা্ভবান হবেন। কৃষকের উন্নতির জন্য আধুনিক চাষবাস পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে তা না হলে শুধু ভুতের বেগার দেওয়া হবে। জৈব সার জৈব ওষুধ ব্যবহার করে পরিবেশ বান্ধব চাষ করতে পারলে যেমন পরিবেশ বাঁচবে তেমনই নির্বিঘ্নে ফসল চাষ করে মানুষের সেবা করা যাবে। এটাই বর্তমান যুগের লাভজনক চাষবাস এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন – ৯৮৩১১১৪৭৮২ / ৮৬১৭২৮৬০৫৮
লেখক : রবিউল হক্ (কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) , রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, নরেন্দ্রপুর
আরও পড়ুন - জৈব উপায়ে ফসলের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে, জানালেন কৃষি অধিকর্তা