চাষবাসের ক্ষেত্রে বীজের পরই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে মাটিকে ধরা হয়। মাটি যদি উপযুক্ত না হয় অর্থাৎ পুষ্টিসমৃদ্ধ না হয়, তাহলে ফসল উৎপাদনের কাজ ব্যাহত হতে পারে। তাই অধিক মাত্রায় ফসল ফলানোর জন্য জমির উর্বরতার বৃদ্ধির দিকে নজর রাখতে হবে সাথে সাথে জমির সংরক্ষণে নজর রাখতে হবে। মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে কয়েকটা নিয়ম মেনে চলতে হবে।
১. মাটির ক্ষয় রোধ (Prevent soil erosion)
হিসাব মতো মাটির উপরিভাগে ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি গভীরতা পর্যন্ত ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মেলে। বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ততা, জলের অত্যাধিক হারে বয়ে চলায় মাটির উপরিভাগ স্থানান্তরিত হতে পারে। এই কারণে মাটির পুষ্টি গুণ অপসারিত অথবা বিনষ্ট হতে পারে। তাই বর্ষার সময়ে জমির উপরের মাটি যাতে বেশি অপসারিত না হয় তার খেয়াল রাখতে হবে।
২. সার প্রয়োগ (Fertilizer)
জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষের ফলে মাটির উর্বরতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিভিন্ন ফসল মাটি থেকে বিভিন্ন পরিমাণে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে। তাই এই ঘাটতি মেটাতে গেলে জমিতে প্রয়োজন অনুসারে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা উচিত।
৩. জৈব পদার্থ ব্যবহার(Use of organic matter)
মাটির ভৌতিক ও রাসায়নিক অবস্থার শ্রী বৃদ্ধির জন্য জৈব পদার্থের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এটি উদ্ভিদের খাদ্যোপাদান সরবরাহ এবং রাসায়নিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। জমিতে তাই প্রয়োজন মাফিক গোবর সার, কম্পোস্ট প্রভৃতি দিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে হবে। সবুজ সার প্রয়োগ করে মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ৫% জৈব পদার্থ আদর্শ মাটিতে থাকতেই হবে। যেই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম সেই মাটিতে জৈবসার প্রয়োগ করা উচিত।
৪. উপযুক্ত শস্য বিন্যাস অনুসরণ
প্রতিবছর একই জমিতে একই ধরনের ফসল ফলানো উচিত নয়। এতে মাটির পুষ্টিগুণ হ্রাস পায়। নিয়ম মেনে তাই গুচ্ছমূল জাতীয় ফসলের পর প্রধান মূলজাতীয় ফসল, একবীজপত্রীর পর দ্বিবীজপত্রীর ফসল এবং অধিক খাদ্য গ্রহণকারীর পর অল্প খাদ্য গ্রহণকারী ফসল চাষ করে মাটিকে উর্বর করে তুলতে হবে। শস্য বিন্যাস অনুসরণে মাটির ভৌগোলিক অবস্থানে খেয়াল রাখতে হবে।
৫. জমিকে বিশ্রাম (Rest the land)
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে মাটিকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। কয়েক বছর পর পর অন্তত এক মৌসুমের জন্য জমি পতিত রেখে মাটিকে বিশ্রাম দেওয়া দরকার। এইসময় জমিতে ফসল ফোলানো বন্ধ রেখে সবুজ সারের চাষ অথবা পশুচারণের ব্যবস্থা করা উচিত। এর ফলে জমির উর্বরতা বাড়বে।
৬. কৃষি পদ্ধতির উন্নয়ন (Development of Agriculture system)
ঠিকমতন নিয়ম না মেনে চাষাবাদ করলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। জমি সব সময় একই গভীরতায় কর্ষণ করা উচিত নয়। একই গভীরতায় লাঙল দিলে ওই গভীরতার নিচে একটা শক্ত স্তরের সৃষ্টি হয় এবং ওই স্তরের তলা থেকে ফসলের খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়ম মেনে তাই ভূমি কর্ষণের গভীরতা ও চাষাবাদ প্রক্রিয়ার মাঝে মাঝে বদল আনা উচিত। এর ফলে জমি আরও উর্বর হয়।
৭. সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা (Irrigation and drainage system)
ঠিকঠাক নিয়ম মেনে সেচ না দেওয়া হলে অথবা জল নিষ্কাশন না হলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। তাই জমিতে বুঝে শুনে সেচ দিতে হবে সাথে সাথে অতিরিক্ত জল দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: Profitable Potato Farming - খুব কম খরচে আলু চাষ এবং রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
৮. রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন (Pest and disease control)
বহুক্ষেত্রে দেখা যায় মাটিতে ক্ষতিকর রোগ ও জীবাণু বাসা বেঁধেছে ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কোনও জমিতে এই অসুবিধা দেখা দিলে নিয়ম করে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে জমি চাষ করলে এবং মাটি রোদে শুকিয়ে নিলে সেইসব জীবাণু মরে যায়। ফলে মাটির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। সঠিক নিয়ম মেনে বালাইনাশক ব্যবহার করলে মাটি ভালো থাকে।
৯. আগাছা দমন (Weed Control)
জমিতে আগাছা থাকলে, তা মাটি থেকে খাবার শুষে নেয়, ফলে জমি অনুর্বর হয়ে পড়ে এবং মাটির ক্ষমতা কমে যায়। এই কারণে লক্ষ্য রাখতে হবে জমিতে যাতে আগাছা না জন্মায়।
১০. মাটির উপকারী জীবাণু সংরক্ষণ (Preserving beneficial germs in soil)
অনেক উপকারী জীবাণু মাটিতে থাকে যারা মাটির ফসফরাস, লৌহ প্রভৃতি অদ্রবণীয় পদার্থকে জলে দ্রবণীয় পদার্থে রূপান্তর ও বায়ু থেকে মাটিতে নাইট্রোজেননা যোগ করিয়ে মাটিকে উর্বর করে তোলে। তাই মাটির পরিচর্যার সময় মনে রাখা দরকার যেন মাটির উপকারী জীবাণুগুলি বেঁচে থাকে।
১১. পাক মাটি ও বোঁদ মাটির কাজ
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও বন্যায় জলের সঙ্গে মাটির উপরের দিকের পুষ্টি উপাদান ও জৈব পদার্থ অপসারিত হয়। পথিমধ্যে পুকুর, ডোবা, নালায় এই উপাদানগুলি সঞ্চিত হয়। পাক মাটি বা বোঁদ মাটি হিসাবে খ্যাত এই জমা মাটি ভীষণই উর্বর হয়। গরম কালে যখন পরিবেশ শুষ্ক থাকে তখন ওই মাটি কেটে ফসলের জমিতে মিশিয়ে দিলে মাটির গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। তাই ভালো ফসল পেতে হলে এই নিয়ম মেনে চললে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেতে সুবিধা হবে
আরও পড়ুন: Village Organica-:খাঁটি দেশীয় খাদ্যসামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে এই ই-কমার্স