এবার AI এর সাহায্যে ছাগলের গর্ভধারণ করা হবে, জেনে নিন কীভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি শীতকালে মাছ চাষ: জল ব্যবস্থাপনা এবং মাছের সঠিক যত্ন নেওয়া শিখুন! বাগমাল গুর্জরের সাফল্যের গল্প
Updated on: 21 May, 2021 10:05 PM IST
Integrated system (Image Credit - Google)

বর্তমান যুগে খাদ্যসামগ্রীর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে | অন্যদিকে, চাষযোগ্য জমি এবং জলাশয়ের পরিমান কমছে | তাই এহেন  অবস্থায়, সংহত চাষ ক্রমে জরুরি হয়ে পড়ছে| আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই সংহত চাষ বেশ লাভজনক | সংহত চাষ বলতে আসলে বোঝায় বিভিন্ন প্রকার প্রাণী ও উদ্ভিদের চাষের মধ্যে সমন্বয়সাধন, যার ফলে একটি প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অপ্রয়োজনীয় পদার্থ অন্য প্রক্রিয়ায় মূল্যবান উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে অপ্রয়োজনীয় পদার্থের চক্রাকার আবর্তন ঘটায়।

ধরে নেওয়া যাক, ৪০ বিঘার জমি এবং দুটো বড় পুকুর আছে | সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে যেমন তেমনি আছে হাঁসের দল | আবার, পাড়ে চড়ছে দেশি মুরগি | হাঁস-মুরগির মল পুকুরে মাছের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে। আবার ছাগল ও গরু চাষও হচ্ছে সেখানেই এক কোণে। যার বর্জ্য ব্যবহার হচ্ছে পুকুর পাড়ের সব্জি চাষে সার হিসাবে। একসঙ্গে একই জায়গায়, এভাবে চাষ করে অনেকটাই খরচ কমানো সম্ভব |বিজ্ঞানের যুগে চাষবাসকে আরও বৈজ্ঞানিক করে তুলতে সংহত চাষ বা ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে হু-হু করে | সাথে, গ্রামীণ অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে |

মিশ্র খামার বা ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং-র উদ্দেশ্য (Objective of integrated farming):

এই ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং-র প্রধান উদ্দেশ্যই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশে সৃষ্ট কোনো বর্জ্য পদার্থ না, একের বর্জ্য অন্যের প্রয়োজনে ব্যবহার হবে | কোনো কিছুই এখানে বাদ দেওয়া যায়না | এই যে আবর্তন, এটাই হলো এই চাষের মূল উদ্দেশ্য | এই তত্ত্বকেই কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণির চাষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে | এই প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ, একজনের সৃষ্ট বর্জ্য অন্যজনের সার বা খাবার হিসাবে ব্যাবহৃত হচ্ছে | অনেক চাষ এক জায়গায় হয় বলে এই পদ্ধতিতে জমি কম লাগে। বহুমুখী উৎপাদন হয় বলে এই পদ্ধতিতে চাষ করে লাভের পরিমান বেশ ভালোভাবেই বাড়ানো যায় |

বিভিন্ন প্রকার সংহত চাষ বা ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং (Types of integrated farming):

সাধারণত, বিভিন্ন ধরণের সংহত চাষ বা ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং করা যায় | যেমন, গবাদি পশুর সঙ্গে মাছ-সব্জির চাষ করা যেতে পারে, আবার হাঁস-মুরগির সঙ্গে মাছ-সব্জির চাষ করা যেতে পারে, ধান সংলগ্ন জমিতে মাছ-হাঁস চাষ করেন অনেকে, আবার বিভিন্ন প্রাণির (গরু-ছাগল-শুয়োর-হাঁস-মুরগি) সংহত চাষও করা যায় | যেমন,

মাছ চাষ ও শুয়োর এবং ছাগল পালন:

একসাথে ছাগল, শুয়োর এবং মাছ চাষ করা যায় | ছাগল ও শুয়োরের মল থেকে উচ্চ মানের সার তৈরি হয়। মাছের খাবার হিসাবে এটি যেমন কাজে লাগে তেমনই পুকুরে ফেললে উর্বর পাঁক তৈরি হয়। যা পরে শাক-সব্জির সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সরাসরি মলকেও সার হিসাবে দেওয়া যায় সব্জি চাষে। ৩৫-৪০টি দেশীয় ঘুঙরু জাতের শুয়োর বা ছাগল এক হেক্টর জলাশয়ের জন্য যথেষ্ট। এক্ষেত্রে সবুজ ঘাস বা কন্দ জাতীয় ফসল পুকুর পাড়ে চাষ করলে ছাগল ও শুয়োরের খাবার বাইরে থেকে কিনতে হয় না।

আরও পড়ুন - Zucchini farming: স্বল্প ব্যয়ে জুকিনি চাষে উপার্জন করুন দ্বিগুন অর্থ

হাঁস পালন ও মাছ চাষ:

একসাথে হাঁস ও মাছ চাষ করা বেশ সুবিধাজনক |হাঁসের জন্য জীবাণুমুক্ত পরিবেশ দেয় পুকুরের মাছ। অন্য দিকে হাঁস পুকুরের অনিষ্টকারী কীটপতঙ্গ ও গুগলি খেয়ে মাছেদের  সুবিধা করে। হাঁস পুকুরে ডুব দিয়ে গুগলি তুলে খাবার সময় যে আলোড়নের সৃষ্টি হয়, তার ফলে তলদেশে জমে থাকা গ্যাস বেরিয়ে যায়। অনেক সময় মাটিতে আবদ্ধ প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদানের মুক্তি ঘটে। হাঁসের চলাফেরায় জলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। হাঁসের মল সরাসরি পুকুরে পড়ে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যকণার উৎপাদন বাড়ায়। হাঁসের মলে (শুষ্ক ওজনের ভিত্তিতে) নাইট্রোজেন থাকে ২.১৫ শতাংশ, ফসফরাস ১.১৩ শতাংশ এবং পটাশিয়াম ১.১৫ শতাংশ। ব্যবহারিক দিক থেকে দেখলে হাঁসপালন অনেক বেশি লাভজনক। কারণ হাঁস ২-৩ বছর পর্যন্ত ডিম পাড়ে। দেশি হাঁসের ডিম পাড়ার ক্ষমতা বছরে ১২০-১৩০টি। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০-৩০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। পুকুর থেকে নিজেদের খাদ্য নিজেরাই সংগ্রহ করে নেয় হাঁসেরা। রোগব্যাধিও মুরগির তুলনায় কম। এতে কৃষকদের পকেট ভরে ভালো করে |

মাছ, সব্জি চাষ ও গরু পালন:

আবার, গরু, মাছ ও শাক-সব্জি একসাথে চাষ করা যায় | গোবর ও গোমূত্রে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ ও জৈব পদার্থ থাকে। যা মাছ চাষ এবং শাক-সব্জি চাষে জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করে চাষের খরচ কমানো যায়। এক্ষেত্রে গোয়ালঘর পুকুরপাড়ে করতে হবে, যাতে গোবর সহজে পুকুরে ফেলা যায়। পুকুর পাড়ে সবুজ ঘাস ও অন্য শাকসব্জি গরুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

মুরগি ও মাছ চাষ:

মুরগির মল উৎকৃষ্ট জৈব সার। যা পুকুরে দিয়ে পুকুরের জৈব উৎপাদন বাড়ানো যায়। আবার সরাসরি মাছের খাদ্য হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। একটি মুরগি বছরে ১৫ কেজি কম্পোস্ট সার দেয়। ৫০০-৬০০টি মুরগি এক হেক্টর পুকুরের জন্য যথেষ্ট।

নিবন্ধ: রায়না ঘোষ

আরও পড়ুন - Aeroponics method: শিখুন মাটি ছাড়া অ্যারোপোনিক্স উপায়ে সব্জি চাষের দুর্দান্ত কৌশল

English Summary: Integrated farming: not loss, but share of profits are high on mixed farms or integrated farming
Published on: 21 May 2021, 10:05 IST