'রাক্ষুসে মাছ'-বিপদ কোথায়? 'MFOI, VVIF কিষাণ ভারত যাত্রা' গুজরাটের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে কৃষকদের সম্মানিত করেছে কাঁচা আম খেলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ হবে এবং এই সমস্যাগুলো দূর হবে!
Updated on: 25 May, 2019 5:40 PM IST

সুসংহত উপায়ে পাটের রোগ পোকা দমনের পদ্ধতি একটি নতুন ধারণা। এই পদ্ধতি ব্যবহারিকভাবে কার্যকরী, আর্থিক দিক থেকে লাভদায়ী ও পরিবেশ হিতৈষী। এতে পোকা ও রোগ সম্পূর্ণরূপে দমন করে একেবারে ধ্বংস করা হয় না; বরং এদেরকে আর্থিক ক্ষতির সীমারেখার নীচে রাখার এটি একটি সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে বীজ বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সব উপায় পরপর সুপরিকল্পিত ভাবে প্রয়োগ করে রোগ ও পোকা থেকে ফসলকে রক্ষা করা হয়। সাথে সাথে পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় রাখা হয়।

বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে পাটের রোগ ও পোকার প্রকোপের তারতম্য হচ্ছে। আগে যে সব পাটের রোগ ও পোকার প্রকোপ দেখা যেত না বা কম দেখা যেত তাদের মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পাট গাছের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ও সূত্র কৃমি :

পাটের পোকাদের আক্রমণ একই সাথে হয় না। প্রথম ২০ দিনের মধ্যে নীল পোকা, তার পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে ডেবরো পোকা এবং ৬০-৮০ দিনের মধ্যে দয়ে পোকার প্রকোপ দেখা যায়। পরবর্তী ২০ দিনের মধ্যে হলুদ মাকড় এবং ফসলের শেষ পর্যায়ে ঘোড়া পোকা ও শুঁয়ো পোকা পাটের প্রচুর ক্ষতি করে।

হলুদ মাকড়:

হলুদ মাকড় তোষা পাটে বেশি আক্রমণ করে। আনুবীক্ষনিক হালকা হলুদ রঙের মাকড়গুলি গাছের ডগার পাতার উপর আক্রমণ করে ও আগার কচি পাতার রস শোষন করে আগার পাতাগুলি কুঁকড়ে দেয়। আক্রান্ত পাতাগুলির রং সবুজ থেকে তামাটে হলুদে পরিণত হয়। পাতা নৌকার মতো বেঁকে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যহত হয়।

আংকা পোকা বা এপিয়ন:

এই পোকাগুলি তিতা পাটের বেশি ক্ষতি করে। তবে অনুকূল আবহাওয়ায় মিঠা পাটেও বেশি ক্ষতি করতে পারে। চারা ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই এদের আক্রমণ শুরু হয়। স্ত্রী পোকা কান্ডের ডগার দিকের নরম অংশে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ছিদ্রের উপর থেকে কান্ড শুকিয়ে যায় ও অবাঞ্ছিত শাখা বের হয় এতে তন্তুর গুণমান কমে যায়।

ঘোড়া বা ছটকা পোকা:

বর্ষার শুরুতেই ঘোড়া পোকার আক্রমণ দেখা যায়। সবুজ রঙের শুককীটগুলি গাছের ডগার পাতা খেয়ে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত করে। এদের প্রকোপ বেশি হলে বীজের খোসা এমনকি কান্ডের উপরের অংশও খেয়ে ফেলে।

শুঁয়ো পোকা:

বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই এদের আক্রমণ শুরু হয়। ছোট আবস্থায় শুঁয়োপোকা দলবদ্ধভাবে পাতার নিচে থাকে। এরা গাছের পাতা খেয়ে জালি জালি করে কঙ্কালসার করে দেয় এবং সমস্ত ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। শুঁয়োপোকা তোষা ও তিতা পাটে সমানভাবে আক্রমণ করে।

লাল মাকড় : জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময় যখন গরম থাকে তখন এদের আক্রমণের তীব্রতা দেখা যায়। আক্রান্ত পাতাগুলো চামড়ার মতো হয়ে ফ্যাকাশে রং ধারণ করে ও নাড়লে ঝরে পড়ে।

ডাঁটা পচা রোগ : সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে একে ডাঁটা পচা রোগ বললেও রোগের ছত্রাক পাটের চারা থেকে বীজ পর্যন্ত যে কোনো সময় গাছের যে কোনো অংশকে আক্রমণ করতে পারে এবং চারার ধ্বসা রোগ, চারার পচন, গলা পচা, ডাঁটা পচা তথা শেকড় পচা প্রভৃতি লক্ষণ সৃষ্টি করে। এই জন্য একে বহুরূপী রোগও বলা যেতে পারে। এমনকি বীজ তৈরির সময় এই ছত্রাক বীজের মধ্য বাসা বাঁধতে পারে যে বীজ রোগাক্রান্ত গাছের জন্ম দেয়।

মরচে ধরা : প্রথমে পাতায়, পরে কান্ডে ছোট আকারের দাগ দেখা যায়। এই দাগের মধ্যাংশ হালকা ছাই রঙের হয় পরে কান্ডের গভীরে ক্ষত সৃষ্টি করে। এর ফলে পাটের গুণগত মান খারাপ হয়। অনেকগুলি ছোট দাগ মিশে বড় ক্ষতের সৃষ্টি

ঢলে পড়া বা হুগলী উইন্ট: এটি মুখ্যত মিঠা পাটের জীবাণু ঘটিত রোগ। একই জমিতে প্রতি বছর পাট, আলু বা ঐ গোত্রীয় ফসল যেমন বেগুন, টমেটো, লংকা প্রভৃতি চাষ করলে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। প্রথমে নিচের পাতাগুলি ঝরে পড়ে ক্রমে উপরের পাতাগুলি ঝরতে থাকে এবং গাছটি ঢলে পড়ে। আক্রান্ত গাছের কান্ডের রং কালো হয়ে যায় এবং তার উপর সাদা ছত্রাক দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের ডাঁটার টুকরো কেটে পরিস্কার জলে ডোবালে জল ঘোলাটে হয়ে যায়।

সুসংহত রোগ পোকা প্রতিরোধ ব্যবস্থা

(১) জমি নির্বাচন - মাঝারি থেকে উঁচু জমি, দোঁয়াশ মাটি।

(২) মাটির অম্লতা – মাটি অম্ল হলে ২-৪ টন/হেঃ চুন ব্যবহার করতে হবে বীজ বোনার একমাস আগে। মাটি পরীক্ষা করতে পারলে ভালো হয়। বোনার সাত দিন আগে মাটিতে রস থাকাকালীন বিঘা প্রতি ৪-৫ কেজি হারে ব্লিচিং পাউডার দিলে মাটি বাহিত রোগ যেমন – ডাঁটা পচা, হুগলী উইল্ট ও রস পচা রোগের প্রকোপ কম হয়।

(৩) বীজ – সার্টিফায়েড বীজ বা রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

(৪) জাত নির্বাচন – উচ্চফলনশীল মিঠা পাটের জাত যেমন, এন. ৭০১০ (রানী), জে. আর. ও. – ২০৪ (সুরেন), জে আর ও – ৫২৪ (নবীন), জে. আর. ও. – ১২৮ (সূর্য), জে. আর. ও.৮৪৩২ (শক্তি), জে. আর. ও. ৬৬ (গোল্ডেন জুবলি), এস. ১৯ (সুবলা); এবং তেঁতো পাটের জাত যেমন, জে. আর. সি. ৪৪৪৪ (বলদেব), জে. আর. সি. ৭৪৪৭ (শ্যামলী), জে. আর. সি. ২১২ (সবুজ সোনা), জে. আর. সি. ৩২১ (সোনালী) ব্যবহার করতে হবে।

(৫) বীজ শোধন – প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম ৫০ ডাব্লুউ. পি. বা ১০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা লাগে। কীটশত্রুদের দমন করতে প্রতি কেজি বীজে ৫ গ্রাম থায়োমিথক্সাম ৭০ ডাব্লুউ. এস অথবা ৩ গ্রাম ক্লোথিয়ামিডিন ৫০ ডাব্লুউ. ডি জি দিয়ে বীজ শোধন করা দরকার।

(৬) পরিচ্ছন্ন চাষ – গভীর চাষ দিয়ে মাটিকে রোদ খাওয়ানো, গত ফসলের গোড়া পোড়ানো, আগাছা দমন প্রয়োজন মতো গাছ দেখে বাকী গাছ তুলে ফেলতে হবে, ইত্যাদি।

(৭) বোনার সময় – মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি। দেরীতে বুনলে রোগ কম হয় কিন্তু ফলন  কম হবার সম্ভাবনা থাকে।

(৯) সুষম সার প্রয়োগ – এন. পি. কে (৪০+২০+২০) : ৪০ : ৪০। নাইট্রোজেনের অর্ধেক পরিমানে জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক দুই বারে, প্রথমে ১০-১৫ দিনের মধ্যে ও পরে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে, চাপান হিসেবে নিড়ানির পরে দিতে হবে। নিড়ানির সময় প্রতি বর্গমিটারে ৫০-৬০ টি গাছ রেখে বাকী তুলে দিতে হবে।

(৯) কীটশত্রু দমন – পোকা আক্রান্ত গাছের সংখ্যা ১০% বা তার বেশি হলে প্রতি লিটার জলে ৫ মালি নিমতের বা ৩-৪ মিলি নিমারিন অথবা ৩-৪ মিলি বুভেরিয়া ব্যাসিয়ানো অথবা ২ মিলি প্রফেনোফস ৫০ ইসি অথবা ২ মিলি ক্লোরোপাইরিফস ৫০ ইসি অথবা ১.২ মিলি সাইপারমেথ্রিন ২৫ ইসি অথবা ২ মিলি কুইনালফস ২৫ ইসি অথবা ১ মিলি বি. টি. ফরমুলেশন অথবা০.৪ মিলি ইমামেকটিন বেনজয়েট অথবা ১.৫ মিলি ফিপ্রোনীল ১ মিলি ল্যামডা সাইহ্যালোথ্রিন অথবা ০.৩ মিলি ফ্লিবেন্ডাইঅ্যামাইড অথবা ১ মিলি ইন্ডোক্সাকার্ব ১৪.৫ এস সি অথবা ০.২ মিলি ইমিডা্ক্লোরপিড দিয়েস্প্রে করতে হবে। এছড়া যে সমস্ত জমিতে পোকার আক্রমণ বেশি হয় সেখানে বীজ বোনার সময় কার্বোফুরান ১ কেজি এ. আই. প্রতি হেক্টর হিসাবে মাটিতে মেশাতে হবে।

হলুদ মাকড় দমনের জন্য ফেনাজাকুইন ১০ ইসি ২.০ মিলি প্রতি লিটার জলে বা প্রোপারগাইট ৫৭ ই. সি. ২.০ মিলি প্রতি লিটার জলে বা অ্যাবামেক্টিন ১.৯ ই. সি. ০.৫ মিলি প্রতি  লিটার বা স্পিরোমেসিফেন ২২.৯% ১.০ মিলি প্রতি লিটার জলে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

সাদা দয়ে পোকার প্রকোপ দমনে প্রফেনোফস ৫০ ই.সি. ২ মিলি প্রতি লিটার কার্যকরী। পোকার আক্রমণ বেশি হলে সমস্ত ওষুধই ১৫-২০ দিন অন্তর আবার স্প্রে করতে হবে। প্রতি বিঘা স্প্রে করতে ৮০-১০০ লিটার জলের মিশ্রণের প্রয়োজন।

লেখক : রাজীব কুমার দে, প্রধান বৈজ্ঞানিক, ভা. কৃ. অনু. প. – কোন্দ্রীয় পাট ও সহজাত দন্তু গবেষণা সংস্থা, 

(ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ) 

পাট চাষের সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বিশদে জানতে কৃষি জাগরণ পত্রিকার জুন মাসের সংখ্যাটি পড়ুন।

রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)

English Summary: IPM-of-jute-cultivation
Published on: 25 May 2019, 05:40 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)